মহিপুরে পরিবেশবান্ধব কৃষি উদ্যোগে প্রান্তিক পরিবার স্বাবলম্বী

হোম পেজ » পটুয়াখালী » মহিপুরে পরিবেশবান্ধব কৃষি উদ্যোগে প্রান্তিক পরিবার স্বাবলম্বী
মঙ্গলবার ● ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫


 

মহিপুরে পরিবেশবান্ধব কৃষি উদ্যোগে প্রান্তিক পরিবার স্বাবলম্বী

সাগরকন্যা প্রতিবেদক, মহিপুর (পটুয়াখালী)

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উপকূলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। তবে পরিবেশবান্ধব কৃষি ও উদ্যোক্তা তৈরির কার্যক্রম আশা জাগাচ্ছে। পটুয়াখালীর মহিপুর থানার সদর, কুয়াকাটা ও লতাচাপলী ইউনিয়নের অন্তত এক হাজার পরিবার দারিদ্র্যের শৃঙ্খল ভেঙে স্বচ্ছলতার পথে হাঁটছে।

কারিতাস বাংলাদেশ এবং ক্যাথলিক এজেন্সি ফর ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট (CAFOD)-এর অর্থায়নে ‘একর‍্যাব প্রকল্প’ এর আওতায় এসব পরিবার ভার্মিকম্পোস্ট (কেঁচো সার) উৎপাদন, জৈব সবজি চাষ ও বাজারজাতকরণ করছে। প্রকল্পে নারী উদ্যোক্তা তৈরিতেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এখন পর্যন্ত ১০০০ জন সরাসরি উপকারভোগী হয়েছেন, প্রায় ১০০ শতাংশ নারী। পরোক্ষভাবে উপকৃত হচ্ছে আরও প্রায় ৩৫০০ মানুষ। ২৮০ জন কৃষক নিয়মিত কেঁচো সার উৎপাদন ও বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। ১৪টি বিক্রয় কেন্দ্র এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা ‘নারী কর্নার’ তৈরি করা হয়েছে।

আজিমপুর গ্রামের আয়েশা বেগম বলেন, একসময় পরিবারের খাওয়া-পরারও কষ্ট ছিল। কারিতাসের সহায়তায় কেঁচো সার উৎপাদন ও সবজি চাষ শুরু করি। এখন মাসে ২৫-৩০ হাজার টাকা আয় করি।

তাজেপাড়া গ্রামের সেলিনা জানান, প্রশিক্ষণ ও সহায়তা নিয়ে ভার্মিকম্পোস্ট, সবজি চাষ, বন্ধুচুলা ও প্রদর্শনী প্লটের কাজ শুরু করি। এখন মাসে ৩০-৩৫ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। পরিবার নিয়ে সুখে আছি।

সালমা বেগম বলেন, সামান্য সহায়তা নিয়ে শুরু করা উদ্যোগই এখন আমার সংসার চালানোর ভরসা।

ভার্মিকম্পোস্ট মাটির উর্বরতা ও পানিধারণ ক্ষমতা বাড়ায়, সেচ ও উৎপাদন খরচ কমায়, পোকামাকড়ের আক্রমণ কমায়, লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, ফসলের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বজায় রাখে এবং বিষমুক্ত খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে।

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নাহিদ হাসান বলেন, কারিতাসের এই উদ্যোগ অত্যন্ত ইতিবাচক। মহিপুরের কৃষকরা রাসায়নিক সার ছেড়ে নিরাপদ সবজি উৎপাদন করছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর অংশগ্রহণকারী পরিবারের মাসিক আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে জৈব কৃষি ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে।

জর্জ বৈরাগী, জুনিয়র কর্মসূচি কর্মকর্তা বলেন, প্রান্তিক মানুষ শুধু স্বাবলম্বী হচ্ছেন না, বরং পরিবেশবান্ধব কৃষির মাধ্যমে জলবায়ু সহনশীল জীবনযাত্রার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন।

কুয়াকাটার দরিদ্র পরিবারগুলোর মুখে এখন নতুন স্বপ্ন- নিজেদের চেষ্টায় টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সচ্ছলতা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:১১:০৪ ● ৩০ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ