ম্যানগ্রোভ বিলীন জ্বালানির সংকটে ‘সুন্দরী ফল’ই ভরসা সাগরপাড়ের মানুষের

হোম পেজ » বিশেষ প্রতিবেদন » ম্যানগ্রোভ বিলীন জ্বালানির সংকটে ‘সুন্দরী ফল’ই ভরসা সাগরপাড়ের মানুষের
শনিবার ● ৯ আগস্ট ২০২৫


জ্বালানির সংকটে ‘সুন্দরী ফল’ই ভরসা সাগরপাড়ের মানুষের

বিশেষ প্রতিবেদক, সাগরকন্যা (কুাকাটা)

পটুয়াখালীর কুয়াকাটাসহ দক্ষিণ উপকূলজুড়ে দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে ম্যানগ্রোভ বন। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে স্থানীয় মানুষের দৈনন্দিন জীবনে। রান্নার জ্বালানির তীব্র সংকটে এখন সমুদ্র থেকে ভেসে আসা ‘সুন্দরী ফল’-ই হয়ে উঠেছে উপকূলীয় কুয়াকাটাবাসীর প্রধান ভরসা।

এক সময় এখানকার মানুষ ম্যানগ্রোভ বন থেকে সংগ্রহ করা লাকড়ির ওপর নির্ভর করে রান্না করত। বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় এসব লাকড়ির সংকট এখন চরমে।

ফলে উপায় না পেয়ে সৈকতে ভেসে আসা সুন্দরবনের ‘সুন্দরী’ গাছের ফল সংগ্রহ করে তা শুকিয়ে রান্নায় ব্যবহার করছেন আশপাশের বহু পরিবার।

স্থানীয়রা জানান, এসব ফল সুন্দরবনের নোনা জলের স্রোতে ভেসে এসে সাগর-নদীর বিভিন্ন স্থানে জমা হয়। পরে ঢেউয়ের ধাক্কায় ছড়িয়ে পড়ে উপকূলজুড়ে। কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে আসা এসব ফল স্থানীয় বাসিন্দারা কুড়িয়ে রোদে শুকিয়ে ভিতরের বিচি ফেলে দিয়ে রান্নায় জ¦ালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন।

জেলে মনির হোসেন বলেন, ‘আগে জঙ্গলের মধ্যে গ্যালেই লাকড়ি পাইতাম। এ্যাহন মাইলের পর মাইল ঘুরলেও একটা শুকনা ডালও মেলে না। সাগইরদা ভাইস্যা আওয়া সুন্দরী ফলই এ্যাহন মোগো ভরসা। গৃহবধূ মনিরা খাতুন বলেন, লাকড়ির দাম এ্যাহন অনেক, যা মোগো নাগালের বাইরে। হেইয়ার লইগ্যা প্রত্যেকদিন সাগরপাড়ে আইয়া সুন্দরী ফল টোহাইয়া (কুড়িয়ে) আনি। নাইলে মোগো চুলা জ্বলে না।

পরিবেশবিদ ও স্থানীয়রা বলছেন, উপকূলজুড়ে সাগরতীর ও নদীভাঙ্গন, অনিয়ন্ত্রিত গাছকাটা, বসতি বিস্তার ও ঘরবাড়ি নির্মাণের কারণে গত এক দশকে কুয়াকাটার আশপাশের ম্যানগ্রোভ বন প্রায় ৭০ ভাগ বিলীন হয়ে গেছে। এর ফলে শুধু জ্বালানির সংকট নয়, উপকূলীয় সুরক্ষা ব্যবস্থাও মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।

জ্বালানির সংকটে ‘সুন্দরী ফল’ই ভরসা সাগরপাড়ের মানুষের

পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে কাজ করা সংগঠন ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)’-র সদস্য কামাল হাসান রনি বলেন, দ্রুত বনায়ন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে এবং উপকূলবাসীর জন্য পরিবেশবান্ধব ও স্বল্পমূল্যে জ্বালানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ‘পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন’-এর কলাপাড়া উপজেলা কমিটির আহবায়ক মেজবাহউদ্দিন মাননু বলেন, ইতোমধ্যে কলাপাড়া উপকূলের প্রায় ৭০ শতাংশ ম্যানগ্রোভ বন হারিয়ে গেছে। তিনি বলেন, সুন্দরবন থেকে জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা সুন্দরী ফল বনবিভাগের মাধ্যমে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। এরপর নতুন জেগে ওঠা চরসমূহে রোপণ করলে বনায়ন সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ম্যানগ্রোভ বনের ধ্বংস ভয়াবহ সংকেত দিচ্ছে। এর প্রভাব শুধু লাকড়ির সংকটেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুরক্ষার ক্ষেত্রেও বড় বিপর্যয় ডেকে আনছে।

পরিবেশবিদরা মনে করেন, উপকূলের মানুষের জীবনমান, খাদ্যনিরাপত্তা ও পরিবেশ রক্ষায় এখনই সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। অন্যথায় এ সংকট আগামীতে আরও গভীর ও বিস্তৃত হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ৮:৫৯:১০ ● ১০১ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ