ভীমরতি সমান ক্ষমতাপ্রীতি

প্রথম পাতা » মুক্তমত » ভীমরতি সমান ক্ষমতাপ্রীতি
বৃহস্পতিবার ● ১৭ জানুয়ারী ২০১৯


এম. কে. দোলন বিশ্বাস

॥ এম. কে. দোলন বিশ্বাস ॥
বৃদ্ধ বয়সে বুদ্ধি-ভ্রষ্ট দশা আর ক্ষমতাপ্রীতি অথবা ক্ষমতা অপব্যবহারের শেষ পরিণতি বিষয়াদি সর্ম্পকে যৎসামান্য আলোকপাতই আজকের নিবন্ধটির প্রতিপাদ্যের বিষয়বস্তু। ভীমরতি শব্দের আভিধানিক ও প্রচলিত অর্থ কা-জ্ঞানহীনতা, অতি বার্ধক্যজনিত বুদ্ধিভ্রংশতা। ভীম মানে ‘ভীষণ’ আর রতি মানে ‘রাত্রি’। সুতরাং ভীমরতি মানে ‘ভীষণ রাত্রি’। ভীমরতি মূলত একটি বিশেষ্য পদ। যার অর্থ বৃদ্ধ বয়সে বুদ্ধি-ভ্রষ্ট দশা।
সংস্কৃত শব্দ ভীমরতির সঙ্গে বয়স ও বয়স অনুযায়ী আচরণের সম্পর্ক প্রকাশ করা হত। চালশেও বয়স প্রকাশজনিত একটি শব্দ। বয়স চল্লিশ পার হলে মানুষের চোখের দৃষ্টি কমে আসার প্রমাণ স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে উঠতে শুরু করে। এ সময় মানুষ দৃষ্টি শক্তি স্বাভাবিক রাখার জন্য চশমা পরতে শুরু করে। এটাকে বলে ‘চালশে’। বয়স সত্তর পার হওয়াকে বলে ‘বাহাত্তুরে’। বাহাত্তুরে ধরলে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মস্কিষ্কেও গ-গোল শুরু হয়। আস্তে তার স্বাভাবিকতায় বিঘœ ঘটতে শুরু করে। বাহাত্তুরে আরও বিপজ্জনক শারীরিক অবস্থার ঈঙ্গিত দেয়। এর কয়েক বছর পর শুরু হয় ভীমরতি। ভারতীয় পুরাণমতে, বয়স সাতাত্তর বছরের সাত মাসের সপ্তম রাত্রির নাম ভীমরতি। বলা হয়, এ রাতের পর মানুষের জীবনে ভীষণ পরিবর্তন আসে। এ বয়সে অধিকাংশ মানুষ শিশুর মতো অবোধ আবার কা-জ্ঞানহীন যুবকের মতো নির্বোধ আচরণ শুরু করে। ফলে সামগ্রিক চালচলন পূর্বেকার স্বাভাবিকতাকে অস্বাভাবিক করে তোলে। এমন কা-জ্ঞানহীন আচরণ থেকে ভীমরতি শব্দটি কা-জ্ঞানহীন অর্থ ধারণ করে।
ভীমরতি শব্দের একটি কদর্থ করা যায় ‘ভীষণ রকম রতি’, যদিও তা অবাস্তব নয়। সত্তর বাহাত্তর বছর বয়সে পুরুষ মানুষের প্রোস্টেট গ্র্যান্ড বড় হয়ে যায়। তখন পুরুষালী হরমোন ঞবংঃড়ংঃবৎড়হব একটু বেশী পরিমাণে নিঃসরণ হয়। ফলে রতিশক্তি বেড়ে যায়। সেই পুরুষ নতুন বিয়ে করতে চায়। ভীষণরকম রতি শক্তি বেড়ে যায়, এবং এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে কা-জ্ঞানহীন আচরণ। তাই একে বুড়ো বয়সের ভীমরতি বলা হয়।
বর্তমান বিশ্বে অন্তত ৭০০ কোটি মানুষের বসবাস। খুব স্বাভাবিকভাবেই তাদের চিন্তাধারায় থাকবে বৈচিত্র্য। তবে সেই বিচিত্র চিন্তাধারা যদি একটু বেশিই বিচিত্র হয়, যখন তা হয় খবরের শিরোনাম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের ঘটনা অসংখ্য বার ঘটেছে যে কারণে ঘটনাটি এখন আর নতুন নয়।
১১০ বছর বয়সে ভীমরতি : বুড়ো বয়সে ভীমরতি অনেকেরই হয়ে থাকে। বুড়োদের ভীমরতির কথা শুনেছেনও হয়তো অনেকেই। আরও বুড়ো বয়সে একটু-আধটু ভীমরতিতে পড়ে বিয়ে করার গল্পটাও খুব একটা পুরোনো নয়। কিন্তু তাই বলে, ১১০ বছর বয়সে! তাও আবার একবার নয়। দুবারও নয়। বরং পাক্কা পাঁচবারের পর ছয় নম্বর বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ওই বৃদ্ধ। কী পাঠক? ভিমরি খেলেন বোধহয়! ভাবছেন আষাঢ়ে গল্প? মোটেও তা নয়।
১১০ বছর বয়সে ওই ভীমরতি ধরেছে মালয়েশিয়ার আহমাদ মোহাম্মদ ঈসা নামের এক বৃদ্ধের। পাঁচবার বিয়ে করার পর ছয় নম্বর বিয়ের জন্য সব প্রস্তুতিই প্রায় শেষ করে ফেলেছেন তিনি। এবার সানাই বাজার পালা। আর সানাইটা বেজে গেলেই ৮২ বছর বয়স্ক সানাহ আহমেদ হবেন তাঁর নতুন সহধর্মিণী। এ খবর ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের।
আহমাদ মোহাম্মদ ঈসার পূর্বের পাঁচ স্ত্রীর মধ্যে চারজন এরই মধ্যে মারা গেছেন। পাঁচ নম্বর স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ছাড়াছাড়ি হয়েছে। আর এ কারণেই নতুন করে বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।
আহমাদ মোহাম্মদ ঈসা গণমাধ্যমে জানান, রান্নাবান্না করার জন্য তাঁর একজন লোক দরকার। এ কারণেই বিয়ে। তা ছাড়া, পাঁচ নম্বর স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর বেশ একা হয়ে গেছেন তিনি। রাতে একা ঘুমাতে ভয় হয় তাঁর। তাই একসঙ্গে ঘুমানোর জন্য খুব ভালো একজন সঙ্গী দরকার বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ঈসার হবু স্ত্রী সানাহ আহমেদও এর আগে একটা বিয়ে করেছিলেন। তবে তাঁর স্বামী মারা গেছেন ৩০ বছর আগে। এর পর থেকে একলা জীবন যাপন করছেন। আগের স্বামীর সঙ্গে ঈসার নামসহ অনেক কিছুর মিল খুঁজে পেয়েছেন সানাহ। আর এ কারণেই বিয়েতে সম্মতি দিয়েছেন বলে জানান সানাহ। উল্লেখ্য, আহমাদ মোহাম্মদ ঈসা ২০ জনের পিতামহ ও ৪০ জনের প্রপিতামহ। আর সানাহর নয়জন ছেলেমেয়ে রয়েছে।
১৬ সন্তানের জনকের ভীমরতি : ইরাকে ১৬ সন্তানের জনক ৯২ বছর বয়সী এক পৌঢ় কৃষক মুসালি মোহাম্মদ আল-মুজামাই বিয়ে করেছেন মুখলিফ আল-জুবুরি নামে ২২ বছর বয়সী এক তরুণীকে।
বর-কনে ইরাকের গুব্বান গ্রামের বাসিন্দা। তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা বেশ ঘটা করেই সম্পন্ন হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানটি চলে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত। অসম এ বিয়েতে স্থানীয়রা বৃদ্ধের বুড়ো বয়সে ভীমরতি বললেও স্থানীয় উপজাতি গোষ্ঠীর নেতারা সবাই উপস্থিত ছিলেন অসম এ বিয়েতে।
উপজাতি রীতি মেনে সেখানে আয়োজন করা হয় গান-বাজনা ও নাচের অনুষ্ঠানের। এর সঙ্গে ছিল আকাশে বন্দুকের গুলি ছুঁড়ে উল্লাস প্রকাশ। বর মুজাইমাই বলছিলেন, বিয়ের পর নিজের বয়স ৯২ বছর নয় বরং ২০ বছর মনে হচ্ছে। মুজামাই দ্বিতীয়বার বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হলেন।
বিয়ের অভিব্যক্তিতে মুসাদি জানান, আমি এই বয়েসে কনেকে বিয়ে করতে পেরে বেজায় খুশি। ৩ বছর আগে তার প্রথম স্ত্রীর মৃত্যু হয়। দীর্ঘ ৬০ বছর তিনি প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে সংসার করেছেন। তাদের সে সংসারে রয়েছে ১৬টি সন্তান। (ডেইলি মেইল)
নাতির বয়সী যুবকে বিয়ে : বয়সের তফাৎ অনেক। একজন দাদীর বয়সী অন্যজন নাতির বয়সী। তাতে কি? প্রেম তো কোনো বয়স মানে না, সীমানাও মানে না। তবে অনেক সময় অসম প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়ায় সমাজ ও রাষ্ট্র।
২০১৭ সালে সুইজারল্যান্ডে এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছে বলে বৃটিশ গণমাধ্যম ডেইলি মেইল এর এক প্রতিবেদনে জানা গেছে। ডেইলি মেইলের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২১ বছর বয়সী তিউনিশিয়া এক যুবকের সঙ্গে ফেসবুকে প্রেমে জড়ান ৭১ বছর বয়সী সুইজারল্যান্ডের এক বৃদ্ধা। দীর্ঘ তিন বছর ধরে নাতির বয়সী এক যুবকের সঙ্গে চলে মন দেয়া নেয়া। যখন আলাপ পরিচয় শুরু হয় তখন ছেলেটির বয়স ছিল ১৮। তাদের মধ্যে মন দেয়া নেয়ার পর্ব চলার সময়ে এক পর্যায়ে তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা দুজনেই বিয়ের জন্য সুইস আদালতে আবেদন করেন। কিন্তু আদালত তাদের অসম প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
আদালত জানিয়েছে, তিউনিশিয়ার ওই যুবক মূলত বৃদ্ধাকে বিয়ে করে সুইজারল্যান্ডের নাগরিক হতে চাচ্ছে। ওই যুবক বৃদ্ধাকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করতে চাইছে। কাজেই তাদের বিয়েটা হবে নকল।
তবে বৃদ্ধার ভাষ্য, ওই ছেলের বয়স যখন ১৮, তখন থেকেই তার সঙ্গে অনলাইনে পরিচয়। এরপর তিউনিশিয়ায় ওই ছেলের সঙ্গে দেখা করে সে। তিনি মনে করেন, সম্পর্কের ক্ষেত্রে বয়সের কোনো বাধা হতে পারে না। কার সে তো তার কাছে কোনো সন্তান চাচ্ছি না। সে তাকে  ভালোবাসে এবং তার সঙ্গেই থাকতেই চায়। কিন্তু তার কথায় বিচারকের মন গলেনি। বিচারক সাফ জানিয়ে দিয়েছেন- ওই ছেলেকে বৃদ্ধা বিয়ে করতে পারবে না। (তথ্যসূত্র : যুগান্তর- ১৮.০৮.১৭)
উত্ত্যক্ত করায় ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধের কারাদ- : রাজধানীর মানিকনগরে এক শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্তের মামলায় সেলিম নামের ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তিকে সাত বছরের কারাদ-াদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং তা দিতে ব্যর্থ হলে আরো এক বছরের কারাদ-াদেশ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫-এর বিচারক তানজিলা ইসমাইল এ আদেশ দেন।
জানা যায়, মানিকনগরের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধ সেলিম প্রতিদিন ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতেন। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষিকা বিষয়টি জানতে পেরে একদিন ওই ব্যক্তিকে হাতেনাতে ধরে থানায় সোপর্দ করেন। এ ঘটনায় ২০১৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মুগদা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় মামলাটি করেন ওই স্কুলের শিক্ষক। এর পরে ২১ সেপ্টেম্বর বৃদ্ধ সেলিমের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়। রায় প্রদানের সময় অভিযুক্ত বৃদ্ধ সেলিম আদালতে হাজির ছিলেন। তাঁকে সাজা পরোয়ানাসহ কারাগারে পাঠানো হয়। (তথ্যসূত্র : এনটিভি অনলাইন-২৪.০৪.২০১৭)
বিয়ের অনুমতি পেতে হাইকোর্টে ৮৮ বছরের বৃদ্ধ : বয়স ৮০ পেরিয়ে নব্বইয়ের ছুঁই ছুঁই। ওই বয়সে অনেকেই বিছানা থেকে উঠতে পারেন না, সেখানে হুগলির জিরাটের বাসিন্দা অনিল চান আরেকটি বিয়ে করতে। কিন্তু ছেলে-মেয়েরা তাতে বাধা দেওয়ায় সোজা চলে যান হাইকোর্টে। বৃদ্ধের আর্জি শুনে হতভম্ব হাইকোর্টের বিচারপতি।
পশ্চিমবঙ্গের হুগলির জিরাটের বাসিন্দা অনিল পেশায় হুগলি জেলা আদালতের আইনজীবী। তবে তাঁর আর্জি শুনে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর মন্তব্য, ‘এই বয়সে বিয়ে? বৃদ্ধের মানসিক চিকিৎসা প্রয়োজন।’ যদিও আদালত অবশ্য এই আবেদনে কোনো হস্তক্ষেপ করতে রাজি হয়নি। অনিলকে প্রয়োজনে নিম্ন আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিচারপতি এই মামলাটি নিষ্পত্তি করেছেন।
জানা যায়, বিয়ের জন্য পাত্রী চেয়ে ২০১৭ সালের ৯ এপ্রিল বিয়ে করতে চেয়ে একটি সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন অনিল। বিজ্ঞাপনে তিনি জানিয়েছিলেন, পাত্রী ষাটোর্ধ্ব হবেন। পেশায় আইনজীবী হলে ভালো। অনিলের কথায়, কয়েকজন যোগাযোগও করেছেন তাঁর সঙ্গে। কিন্তু ঘটনা জানতে পেরে বেঁকে বসেছেন ছেলেমেয়েরা। তাঁর ছেলেমেয়েরা সকলেই বিবাহিত।
অনিলের অভিযোগ, এই বিয়ে আটকাতে তাঁর উপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। ওই বছরের ১ লা মে তিনি বলাগড় থানায় অভিযোগও দায়ের করেন। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টে তাঁকে মানসিক চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছে। তাই তিনি হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। আদালতে শুনানি হয় ওই বছরের জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে। (তথ্যসূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন- ০১.০৮.২০১৭)
অতিকথনে দুই মন্ত্রীকে জরিমানা : ২০১৬ সালের ৮ মার্চ যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর আপিলের রায় ঘোষণার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু এর দুই দিন আগে ৫ মার্চ রাজধানীর ধানমন্ডির বিলিয়া মিলনায়তনে ‘একাত্তরের গণহত্যাকারীদের বিচারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র: সরকার, বিচার বিভাগ ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় মীর কাসেমের মামলার আপিল শুনানিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন দলের কাজ নিয়ে প্রধান বিচারপতির অসন্তোষ ও মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। খাদ্যমন্ত্রী ওই মামলার পুনঃশুনানি দাবি করে তাতে প্রধান বিচারপতি এবং রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেলকে অংশ না নেওয়ার পরামর্শ দেন। আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক প্রধান বিচারপতির মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান। একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ওই গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে বক্তারা যেসব মন্তব্য করেছেন, তা আদালত অবমাননাকর বিবেচনায় এখানে তা প্রকাশ করা হলো না।
এরপর ৮ মার্চ আপিল বিভাগ মীর কাসেম আলীর আপিলের রায় ঘোষণা করেন, রায়ে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া কাসেম আলীর মৃত্যুদ- বহাল থাকে। আদালত এইদিন দুই মন্ত্রীর ৫ মার্চের দেওয়া বক্তব্যে স্তম্ভিত হয়ে আপিল বিভাগে তাদের তলব আদেশ দেন। দুই মন্ত্রীকে ১৫ মার্চ আপিল বিভাগে হাজির হয়ে তাঁদের বক্তব্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক ১৫ মার্চ আদালতে উপস্থিত হন। কিন্তু সরকারি কাজে বিদেশে থাকা খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। এ সময় তাঁদের আইনজীবীদের সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত শুনানি মুলতবি করে ২০ মার্চ শুনানির দিন পুনঃনির্ধারণ করেন।
দুই মন্ত্রীই ২০ মার্চ আদালতে হাজির হন। তবে ওই দিন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের দেওয়া লিখিত ব্যাখ্যা আদালত গ্রহণ না করে তাকে নতুন করে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য ২৭ মার্চ পর্যন্ত সময় দেন। এইদিন মন্ত্রীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘যতই ক্ষমতাবান হোন না কেনো, এই আদালত যে কোনো আদেশ দিতে দ্বিধাবোধ করবেন না। এই আদালত সংবিধানের অঙ্গ, সরকারের অঙ্গ নয়। আপনারা (দুই মন্ত্রী) শুধু দেশের প্রধান বিচারপতি নন, সারা বিচার বিভাগকে ছোট করেছেন।’ পরে এ বিষয়ে শুনানি ২৭ মার্চ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
অবশেষে ২০১৬ সালের ২৭ মার্চ আদালত অবমাননার দায়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে দোষী সাব্যস্ত করে তাঁদের প্রত্যককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে সাত দিনের কারাদ-ের নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আট বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ওই দ-াদেশ দেন। আদালতে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
দুই মন্ত্রীকে জরিমানা করে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের ৫৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ কপি ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। রায়ে আদালত অবমাননায় দুই মন্ত্রীকে দোষী সাব্যস্ত করে জরিমানার ব্যাপারে আট বিচারপতি একমত প্রকাশ করলেও শপথ ভঙ্গের ব্যাপারে তাঁরা ভিন্নমত প্রকাশ করেন। (তথ্যসূত্র : পরিবর্তন ডটকম- ২৫.১২.২০১৬)
দ-প্রাপ্ত ওই দুই মন্ত্রী মহোদয়ও বয়সে প্রবীণ। অনেককাল থেকেই তারা রাজনীতি চর্চা ও ক্ষমতা ভোগ করে আসছেন। এই বয়সে তাদের ক্ষমতাপ্রীতিতে অমন ‘বেমানান বক্তব্য’ জাতির অপ্রত্যাশিতই বটে।

[এম. কে. দোলন বিশ্বাস, দৈনিক সংবাদের সাবেক সহ-সম্পাদক]  

বাংলাদেশ সময়: ১০:১০:৫৫ ● ১৫১২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ