নতুন সুযোগ ও সেবা যুক্ত হওয়ায় লেনদেন বাড়ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে

প্রথম পাতা » জাতীয় » নতুন সুযোগ ও সেবা যুক্ত হওয়ায় লেনদেন বাড়ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে
বৃহস্পতিবার ● ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯


নতুন সুযোগ ও সেবা যুক্ত হওয়ায় লেনদেন বাড়ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

দেশের মধ্যে অর্থ আদান-প্রদানের সহজ এবং নির্ঝঞ্ঝাট মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রসার ঘটেছিল অনেক আগেই। তবে মাঝখানে এ খাতে কিছুটা অবনতি দেখা যায়। ২০১০ সালে দেশে প্রথমবারের মতো মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর পর থেকে তা অনেক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। অনেকেই আগ্রহী হয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা শুরু করে। কিন্তু ধীরে ধীরে সেসবের বেশিরভাগই অলস পড়ে থাকে। আর নিষ্ক্রিয় এসব অ্যাকাউন্টের কারণে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের নি¤œমুখীতা দেখা যায়।
সূত্রমতে, চলতি বছরের জুন মাসে দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হয় ৩১ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা, যা মে মাসের চেয়ে ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ কম। মে মাসে লেনদেন হয়েছিল ৪২ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ, এক মাসের ব্যবধানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন কমে যায়। তবে জুলাইয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মোট লেনদেন হয় ৩৭ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ জুন মাসের চেয়ে ৫ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা বেশি লেনদেন হয় জুলাইয়ে।
এদিকে, আগস্ট মাসে ছিল কোরবানির ঈদ। রেমিট্যান্সের বড় অংশ লেনদেন হয় ঈদকে কেন্দ্র করে। তাই এ সময় লেনদেন আবাও বেড়ে যায় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের সীমা আগের চেয়ে বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দৈনিক লেনদেনের পরিমাণের সর্বোচ্চ সীমা বাড়ানোর পাশাপাশি সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। এখন দিনে সর্বোচ্চ পাঁচ বারে মোট ৩০ হাজার টাকা ক্যাশ-ইন (জমাকরণ) করা যায়, যা আগে ছিল সর্বোচ্চ দুই বারে ১৫ হাজার টাকা। সীমা বাড়নোও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন বৃদ্ধির আরেকটি কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, মোবাইল আর্থিক হিসাব -এমএফএস’র নিয়ম অনুযায়ী, টানা তিন মাস একবারও লেনদেন না করলে তাদের হিসাবকে নিষ্ক্রিয় হিসাব বলে গণ্য করে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। সে হিসাবে জুলাইয়ে সক্রিয় হিসাবের সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার। জুলাইয়ে সক্রিয় হিসাবের সংখ্যা আগের মাস জুনের তুলনায় ১১ লাখ বা ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি ছিল। জুনে সক্রিয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের হিসাব সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ২৪ লাখ ৫৮ হাজার। এদিকে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রেরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দেয়া হচ্ছে। ব্যাংকে গিয়ে চেক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার ভোগান্তি এড়াতে কার্ড দিয়ে এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার সুযোগ পাওয়ার পর এখন সেই এটিএম ব্যবস্থাকে হটিয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং।
মোবাইল ফোন রিচার্জ, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সেবার বিলের পাশাপাশি ঘরে বসে পরিশোধ করা যাচ্ছে ই-কমার্সের মাধ্যমে কেনা পণ্যের দাম। আর এসব কিছুই সম্ভব হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদান প্রতিষ্ঠানগুলো উল্লিখিত সেবার পাশাপাশি নতুন নতুন সেবা চালু করছে। এরমধ্যে রাইড শেয়ারিং সেবার বিল, স্কুলের টিউশন ফি, সরকারি উপবৃত্তির অর্থ পরিশোধ করা যাচ্ছে। এসব খাত মোবাইল ব্যাংকিং সেবার আওতায় আসায় লেনদেন বাড়ছে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে ১৮টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। কিন্তু মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংকের বিকাশ ও ডাচ বাংলা ব্যাংকের রকেট। এ দু’টি প্রতিষ্ঠানের দখলে বাজারের ৯৪ শতাংশ। তবে, নতুন করে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের নগদ। তাদের লেনদেন সীমা দৈনিক ৫০ হাজার টাকা রয়েছে।
মোবাইল ব্যাকিংয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকার্তা বলেন, সুপারশপ থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লার মুদি দোকানেও পৌঁছে গেছে বিকাশ। আবাসিক হোটেলসহ বিভিন্ন ধরনের ৫০ হাজার প্রতিষ্ঠানে বিকাশের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে। ডিজিটাল পেমেন্ট এবং ক্যাশলেস সোসাইটি আস্তে আস্তে শুরু হচ্ছে। একারণে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন ইতিবাচক হচ্ছে।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৯:২৩:৪০ ● ৫৪২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ