ডেঙ্গু পরিস্থিতি মহামারি পর্যায়ে যায়নি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রথম পাতা » জাতীয় » ডেঙ্গু পরিস্থিতি মহামারি পর্যায়ে যায়নি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
শনিবার ● ৩ আগস্ট ২০১৯


ডেঙ্গু পরিস্থিতি মহামারি পর্যায়ে যায়নি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

ডেঙ্গু পরিস্থিতি মহামারি পর্যায়ে যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। শনিবার (৩ আগস্ট) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্তদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জাহিদ মালেক বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তারপরও শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটসহ তিনটি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের দেড়শ থেকে দুইশ বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দরকার হলে সেখানেও রোগী শিফট করা হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন জেলায় ১২ সদস্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল পাঠানো হয়েছে। তারা জেলা পর্যায়ের চিকিৎসকদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন। বিদেশের তুলনায় ডেঙ্গুতে বাংলাদেশে মৃত্যুর হার খুবই কম। প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক খোঁজ নিচ্ছেন। নির্দেশ দিয়েছেন সব সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য।
বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে মহামারি বলা যায় কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এই পরিস্থিতিকে মহামারি বলা যাবে না। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ সময় ডেঙ্গু নিয়ে বিভ্রান্তি না ছড়াতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। জাহিদ মালেক আরও বলেন, হাজার হাজার রোগী হাসপাতালে আসছেন। তারা পরীক্ষা করানোর জন্য চিকিৎসকদের চাপ দিচ্ছেন; যাদের অধিকাংশের পরীক্ষা না করালেও চলে। পরীক্ষা যাদের করা হচ্ছে, তাদের শতকরা ৫-১০ শতাংশ ডেঙ্গু শনাক্ত হচ্ছে।
এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, কিছুকিছু বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের টেস্ট নিয় অনিয়ম হচ্ছে, এমন খবর আমরা পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এসব প্রতিষ্ঠান এখনই বন্ধ করা হবে না। এর আগে শনিবার দুপুরে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকলে কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন তিনি। এসময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডেঙ্গু জ¦রের বাহক এডিস মশা নিধনে দেশবাসীকে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী।
জাহিদ মালেক বলেন, আমরা সবাই নিজের বাসা-বাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবো এবং সবার মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলবো। তাহলে এ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা ও ওষুধ রয়েছে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকলে কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ফ্লোর প্রস্তুত করার বিষয়ে তিনি বলেন, এই হাসপাতালে ওপরের তিনটি ফ্লোর প্রস্তুত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দু’টির কাজ শেষ হয়েছে। এখানে ডেঙ্গু রোগীদের রাখা হবে। এর আগে গতকাল শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন মন্ত্রী।
পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি জানান, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সঠিক হিসাব তাঁর কাছে নেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে এ পর্যন্ত মোট কতজন মারা গেছে, তার সঠিক হিসাব এখন দেওয়া সম্ভব নয়। খোঁজ-খবর নিয়ে পরে জানানো হবে। তিনি বলেন, বিশ্বের কয়েকটি দেশের তুলনায় আমাদের দেশে মৃত্যুর সংখ্যা খুবই কম। সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে, সেটা আরেকটু বাড়তে পারে। আমরা পাঁচ-সাতটি হাসপাতাল পরিদর্শন করবো। এ বিষয়ে সবশেষ যে তথ্য আসবে, তা আপনাদের জানাবো। এ মুহূর্তে আমাদের হাতে সঠিক তথ্য নেই।
জাহিদ মালেক বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে। সিটি করপোরেশন ভালোভাবে কাজ করছে। তারপরও এ মুহূর্তে যে অবস্থা, তা মোকাবিলায় আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি সবাই মিলে মশা কমিয়ে আনার। মশা কমে গেলে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও কমে যাবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কোনো বেসরকারি হাসপাতাল কিট সংকটের অজুহাতে ডেঙ্গু পরীক্ষা না করালে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এজন্য আমাদের ১০টি টিম কাজ করছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকলে বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে প্রয়োজন হলে আরও দুইশ’ বেড বাড়ানো হবে। শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাষ্টিক সার্জারি ইউনিটে এক হাজার বেডসহ আরও দু’টি হাসপাতালে প্রায় দুই হাজার রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যাবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে এখন পর্যন্ত ১৬শ’ থেকে ১৭শ’ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। গত তিন-চার দিনে একই হার রয়েছে। রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে না। তিনি বলেন, আমরা স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারি, মানুষের ঘরে গিয়ে তো মশা মারতে পারছি না। যাদের ঘর, তাদেরও সচেতন হতে হবে। দেশবাসীকে সচেতন হতে হবে। ঘরবাড়ি, আঙিনা পরিস্কার রাখতে হবে। আমি সবার কাছে আহ্বান জানাবো, আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এসময় বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২১:০৭:১৯ ● ২৭৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ