চাহিদা মেটাতে আমদানি হচ্ছে বিপুল পরিমাণ নিম্নমানের মসলা

প্রথম পাতা » জাতীয় » চাহিদা মেটাতে আমদানি হচ্ছে বিপুল পরিমাণ নিম্নমানের মসলা
বুধবার ● ২২ মে ২০১৯


আমদানি হচ্ছে বিপুল পরিমাণ নিম্নমানের মসলা

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥


বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে রান্না ও ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের মসলাপণ্য আমদানি করা হয়। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে প্রতি বছর আমদানি করা হয় গড়ে প্রায় দেড় লাখ টন মসলাপণ্য। এদেশে রান্না ও ওষুধ তৈরিতে কমপক্ষে ৪৪ ধরনের মসলাপণ্য ব্যবহৃত হয়। বছরে মসলাপণ্যের চাহিদা প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টন। অথচ বিশাল চাহিদার বিপরীতে বিদেশ থেকে মাঝারি ও নিম্নমানের মসলাপণ্য আমদানি করা হচ্ছে। মূলত সবচেয়ে ভালোমানের মসলার ক্রেতা এদেশের বাজারে নেই। তাই মাঝারি ও নিম্নমানের মসলাপণ্যের মধ্যেও আবার একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্ন ভেজালের মিশ্রণ ঘটায়। মাঝারি ও নিম্নমানের এবং ক্ষেত্রবিশেষে ভেজালমিশ্রিত ওসব মসলাপণ্যই নামিদামি বিভিন্ন কারখানায় যাচ্ছে। আর নামীদামী ব্র্যান্ডের সিল লাগিয়ে পাইকারি বাজাওে তা বিক্রি হচ্ছে। মসলা ব্যবসায়ী এবং আমদানিকারক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এদেশে যেসব মসলার বহুল ব্যবহার রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আদা, হলুদ, মরিচ, রসুন, পেঁয়াজ, কালোজিরা, গোলমরিচ, দারচিনি, জাফরান, তেজপাতা, জিরা, জাউন, শলুক, আলুবোখারা, বিলাতি ধনিয়া, ধনিয়া, চিপস, সাদা এলাচ, কালো এলাচ, মেথি, শাহি জিরা, পার্সলে, কাজুবাদাম, পানবিলাস, দইং, কারিপাতা, পাতা পেঁয়াজ, পেস্তাবাদাম, জায়ফল, জয়ত্রি, লবঙ্গ। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে দেশে রসুন, আদা, হলুদ, এলাচ, জিরাসহ ১২টি মসলাপণ্য আমদানি হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে প্রায় ১ লাখ ৯৮ হাজার টন মসলাপণ্য আমদানি হয়েছে। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে মোট ১ লাখ ৮২ হাজার টন মসলাপণ্য। চাহিদার বাকি মসলাপণ্য ভারত থেকে স্থলপথে আসে।
সূত্র জানায়, সমুদ্রপথে সাধারণত সিঙ্গাপুর, চীন, ভিয়েতনাম, গুয়াতেমালা, ইন্দোনেশিয়া থেকে বিভিন্ন ধরনের অধিকাংশ মসলাপণ্য আসে। তাছাড়া পাকিস্তান, সিরিয়া, আফগানিস্তান, কলম্বিয়া, মাদাগাসকার, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা থেকেও কিছু মসলাপণ্য আসে। বাংলাদেশে মোট ২৪টি দেশ থেকে মসলা ঢোকে। তবে গোলমরিচ, জিরা, এলাচ ও দারুচিনি, লবঙ্গ সবচেয়ে বেশি আমদানি ও বিক্রি হয়। ভাল মানের জিরা আসে তুরস্ক থেকে। গত সপ্তাহে খাতুনগঞ্জে ওই জিরার দাম ছিল কেজিপ্রতি ৩৫০ থেকে ৩৫৫ টাকা। ভারত থেকে আসে মাঝারি মানের জিরার দাম ৩০০ থেকে ৩০৫ টাকা। গোলমরিচ গত সপ্তাহে খাতুনগঞ্জের বাজারে বিক্রি হয়েছে ৩৫৫ টাকায়। এলাচ কেজিপ্রতি ১৬০০ থেকে ২০৫০ টাকা, লবঙ্গ কেজিপ্রতি ৭৬০ থেকে ৭৭৫ টাকা এবং দারুচিনি বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ২৯০ থেকে ৩০০ টাকায়।
সূত্র আরো জানায়, মসলা আমদানিকারকরা বিদেশ থেকে সাধারণত তিন ক্যাটাগরির মসলা আমদানি করে। সেগুলো হচ্ছে কিছুটা ভাল, মাঝারি এবং নিম্নমানের। তবে নিম্নমানের বলতে সেগুলো যে খাওয়ার অনুপযোগী তা নয়। একেবারে সবচেয়ে ভাল যে মসলাটা, সেটার চাহিদা বাংলাদেশে নেই। তবে খাতুনগঞ্জে যেসব মসলাপণ্য আড়ত থেকে পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয় তা যদি অবিকৃতভাবে কারখানাগুলোতে যায় তাহলে মান নিয়ে প্রশ্ন উঠতো না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে পাইকারী বাজার বের হয়ে মসলা ডুপ্লিকেট হয়ে যাচ্ছে। তাতে বিভিন্ন রাসায়নিক, ইটের গুঁড়া, পাথর, রঙ মেশানো হচ্ছে। ফলে মসলার মান নিম্নমুখী হয়ে পড়ে। প্রাণ, স্কয়ারের মতো কারখানাও তো পাইকারি বিক্রেতাদের কাছ থেকেই মসলা কিনে প্যাকেটে ভরে বিক্রি করছে।
এদিকে সম্প্রতি হাইকোর্ট বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় নিম্নমান প্রমাণিত হওয়ায় ৫২টি খাদ্যপণ্য অবিলম্বে বাজার থেকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই ৫২টি পণ্যের মধ্যে নামীদামী কোম্পানির গুঁড়ো মসলাও আছে। হাইকোর্টের ওই আদেশের পর মাঝারি ও নিম্নমানের মসলা আমদানির বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। বিএসটিআইর প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিম্নমানের মসলাপণ্যের মধ্যে ড্যানিশের হলুদগুঁড়া, প্রাণের হলুদগুঁড়া, ফ্রেশের হলুদগুঁড়া, এসিআইর ধনিয়াগুঁড়া, প্রাণের কারি পাউডার, ড্যানিশের কারি পাউডার, পিওর হাটহাজারী মরিচগুঁড়া, মঞ্জিলের হলুদগুঁড়া, সান ফুডের হলুদগুঁড়া, ডলফিনের মরিচগুঁড়া, ডলফিনের হলুদগুঁড়া, সূর্যের মরিচগুঁড়া আছে। ফলে আমদানি করা মসলা বাজারে গিয়ে যে ভেজাল হয়ে যাচ্ছে, তা রোধ করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের আশপাশের এলাকা বাকলিয়ার রাজাখালী, ফুলতলী, কোরবানিগঞ্জ, চরচাক্তাই এলাকায় ভেজাল মরিচ-মসলার গুঁড়ার কারখানায় প্রতিবছর জেলা প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করে।
অন্যৗদিকে খাতুনগঞ্জ ট্রেড এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগির আহমদ জানান, একসময় চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের কিছু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ভেজাল মসলা গুঁড়া তৈরির অভিযোগ উঠেছিল। পরে তাদেও বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীরা কঠোর অবস্থান নেয়। এখন চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ওই ধরনের কাজ হচ্ছে না। তবে শহরের বিভিন্ন স্থানে ভেজাল মসলা প্যাকেটজাত করা হচ্ছে। ওই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মসলা আমদানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি অমর দাশ জানান, বিশ্ববাজারে এ, বি, সি, ডি থেকে মাঝারি ও নিম্নমানের মসলা আছে। এ, বি, সি, ডি মানের মসলাপণ্য সৌদি আরবসহ উন্নত দেশ ও ধনী দেশগুলো নিয়ে যায়। ভারত-বাংলাদেশে মাঝারি ও নিম্নমানের মসলা আসে। যেমন-এলাচ আসে মাঝারি মানের। জিরা ওষুধ তৈরিতে লাগে। সেটা কিছুটা ভালমানের আমদানি হয়। কারণ বাজারে ভাল জিরার চাহিদা আছে। তাছাড়া স্থলপথে ভারত থেকেও অনেক মসলা আনা হয়। ভারত যেখানে নিজেরাই মাঝারি ও নিম্নমানের মসলা আমদানি করে, সেখানে এদেশ কীভাবে ভাল মানের মসলা পাবে।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২১:১০:০৩ ● ৪৩৭ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ