আহত ‘ছিনতাইকারী’ চিকিৎসা নিতে এসে ধরা!

প্রথম পাতা » সর্বশেষ » আহত ‘ছিনতাইকারী’ চিকিৎসা নিতে এসে ধরা!
শনিবার ● ২৩ মার্চ ২০১৯


---

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
ঢাকার গুলিস্তানে হানিফ ফ্লাইওভারের পূর্ব পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন সুজাউদ্দিন তালুকদার (৩৭)। তিনি নাভানা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের নির্বাহী কর্মকর্তা। শনিবার বেলা একটার দিকে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। তাঁর বাম পায়ে গুলি লাগে। একই সময় ওই এলাকায় জাহিদুল ইসলাম সোহাগ (৪০) নামের আরেক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। তাঁর বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে। তাঁরা দুজনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের দাবি, তাঁরা ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। তবে পুলিশ বলছে, সুজাউদ্দিনের কাছ থেকে মূল্যবান কাগজপত্র ও ব্যাংকের চেক ছিনতাই করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন সোহাগ। এর আগে তিনি সুজাউদ্দিনকে গুলি করেন। সুজাউদ্দিনকে হাসপাতালে এনেছেন মনির হোসেন নামের এক পথচারী। তাঁর ভাষ্য, সুজাউদ্দিন তালুকদার ছিনতাইয়ের শিকার হন। মোটরসাইকেল আরোহীসহ কয়েকজন যুবক ছিনতাইয়ের সময় সুজাউদ্দিনকে গুলি করেছে। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে এনেছেন তিনি। এদিকে সুজাউদ্দিনকে হাসপাতালের আনার মিনিট দশেক পর জিনস প্যান্ট ও স্যান্ডো গেঞ্জি পরা সোহাগকে হাসপাতালে আনা হয়। তিনি ফুটপাতে হাঁটার সময় গুলিবিদ্ধ হন বলে দাবি করেছেন। তাঁদের চিকিৎসা চলাকালে বেলা পৌনে দুইটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হকের নেতৃত্বে পুলিশের দল আসে। তাদের সঙ্গে ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী। তাঁরা গুলিবিদ্ধ দুজনের সঙ্গে কথা বলেন। কথা বলার একপর্যায়ে জাহিদুল ইসলাম সোহাগের হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেন ওসি।
ওসি মাহমুদুল হক বলেন, সুজাউদ্দিন তালুকদারের ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত জাহিদুল ইসলাম সোহাগ। সুজাউদ্দিনের ব্যাগ ছিনতাই হয়েছে। সুজাউদ্দিন অফিসের কাজে মহানগর নাট্যমঞ্চের পূর্বপাশের ফুটপাত দিয়ে হেঁটে নবাবপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় বিপরীত দিকে থেকে দুজন মোটরসাইকেল আরোহী তাঁকে অনুসরণ করতে থাকেন। একপর্যায়ে মোটরসাইকেল থেকে নেমে সুঠামদেহী সোহাগ সুজাউদ্দিনের হাতে থাকা হ্যান্ডব্যাগ ধরে টান দেন। তবে সুজা উদ্দিন তাতে বাধা দেন। দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। সোহাগ এ সময় সুজাউদ্দিনকে এলোপাতাড়ি ঘুষি মারেন। ব্যাগটা নিতে না পেরে তার ডানপাশ থেকে পিস্তল বের করে সুজাউদ্দিনের বাম পায়ে গুলি করেন। এ সময় তাঁর হাতে ব্যাগ চলে আসে। ধস্তাধস্তির সময়ে তাঁর নিজের বাম পায়ের হাঁটুর কাছে গুলি লাগে। ওই সময় আরেক ছিনতাইকারী মোটরসাইকেল ইউ টার্ন নিয়ে তাঁদের দুজনের মাঝখানে দাঁড়ায়। তখন ছিনতাই করা ব্যাগটি অপর ছিনতাইকারীকে দিয়ে দেন সোহাগ। সেই ব্যাগ নিয়ে ছিনতাইকারী পালিয়ে যায়। এ সময় এক প্রত্যক্ষদর্শী ঘটনাটি দেখে পুলিশকে জানায়।  পুলিশ এসে পরে সোহাগকে শনাক্ত করে। তাঁকে আটক দেখিয়ে হাসপাতালে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা করা হচ্ছে। ঢাকা মেডিকেলে গুলিবিদ্ধ সুজাউদ্দিনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি  বলেন, ‘ধস্তাধস্তি হয়েছে, তবে ওই যুবককে আমি চিনতে পারছি না।’ তার ব্যাগে মূল্যবান কাগজপত্র ও চেক ছিল। কিন্তু নগদ টাকা ছিল না।
সুজাউদ্দিনের অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আলামীন বলেন, অফিসের কাজের জন্যই তিনি মতিঝিলে যান প্রথমে। সেখান থেকে নবাবপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। তাঁর বাম পায়ে গুলি লেগেছে। তাঁর চিকিৎসা চলছে। তাঁকে রক্ত দেওয়া হয়েছে। গুলিবিদ্ধ সোহাগ দাবি করেন, তাঁর বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে। তিনি ট্রাক চালান। শনিবারই তিনি ঢাকায় এসেছেন।
ওসি মাহমুদ বলেন, সোহাগকে আসামি করে মামলার প্রক্রিয়া চলছে। ঘটনাস্থল থেকে চারটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে।
দিনদুপুরে ছিনতাই প্রসঙ্গে বলেন, ওই এলাকায় সব সময় নিরাপত্তা থাকলেও চোখের পলকে ঘটনাটি ঘটে গেছে। অপর ছিনতাইকারীকে ধরার চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭:৫৫:৪৮ ● ৫০৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ