জ্বালানি তেল সরবরাহে গ্রাহকদের ঠকিয়ে যাচ্ছে ফিলিং স্টেশনগুলো

প্রথম পাতা » বিশেষ প্রতিবেদন » জ্বালানি তেল সরবরাহে গ্রাহকদের ঠকিয়ে যাচ্ছে ফিলিং স্টেশনগুলো
সোমবার ● ২১ জানুয়ারী ২০১৯


---

সাগরকন্যা এক্সক্লুসিভ ডেস্ক॥
দেশে ব্যবসারত ফিলিং স্টেশনগুলো জ্বালানি সরবরাহে ওজনে কম দিয়ে ক্রমাগত গ্রাহকদের ঠকিয়ে যাচ্ছে। জ্বালানি তেল বিপণনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত তিন কোম্পানির ডিলাররাই এ অভিযোগে অভিযুক্ত। দেশের অধিকাংশ ফিলিং স্টেশনেই গ্রাহকদের সঠিক মাপে জ্বালানি সরবরাহ করা হয় না। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ফিলিং স্টেশনে বিপণন কোম্পানি, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) যৌথ অভিযানে এ অনিয়ম ধরা পড়েছে। সম্প্রতি হবিগঞ্জ, ঢাকা, জামালপুর, নড়াইল, ঝিনাইদহ, নওগাঁ, পঞ্চগড় ও নরসিংদীতে রাষ্ট্রায়ত্ত তিন কোম্পানির ১৫টি ফিলিং স্টেশনে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তাতে দেখা যায়, প্রায় ৬০ শতাংশ বা নয়টি ফিলিং স্টেশন জ্বালানি তেল বিক্রির সময় ওজনে কম দিচ্ছে। অভিযানে পদ্মা অয়েলের ৭টি ফিলিং স্টেশনের মধ্যে ৫টিতেই ওজনে কম দেয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। তাছাড়া মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ৩টি স্টেশনের মধ্যে ২টি ও যমুনা অয়েল কোম্পানির ৫টির মধ্যে ২টি ফিলিং স্টেশনে কম জ্বালানি তেল দিয়ে গ্রাহক ঠকানোর প্রমাণ পাওয়া যায়। আর ওই প্রতারণার দায়ে ফিলিং স্টেশনগুলোকে লক্ষাধিক টাকা অর্থদ- করা হয়। বিপিসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে,  পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নামে রাষ্ট্রায়ত্ত তিন জ্বালানি তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের সারা দেশে ২ হাজার ১৭১টি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। তার বাইরে ব্যক্তি খাতে ডিলারশিপ রয়েছে আরো প্রায় সাড়ে ৩ হাজার। ওসব ফিলিং স্টেশন তিনটি কোম্পানির ডিপো থেকে জ্বালানি তেল সংগ্রহ করে ফিলিং স্টেশনের মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রি করে। ডিপো থেকে যতোটুকু ক্রয় করে ফিলিং স্টেশনগুলো সে পরিমাণ জ্বালানি তেলের মূল্যই কোম্পানিকে পরিশোধ করে। ফলে ওজনে কম দেয়ার কারণে বাড়তি যে জ্বালানি তেল থাকে তা বিক্রির অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে না গিয়ে ফিলিং স্টেশনের কর্মকর্তাদের পকেটে ওঠে। দেশের ৭টি বিভাগের ৬৫০টি ফিলিং স্টেশনের মাধ্যমে যানবাহনের জ্বালানি তেল বিক্রি করে যমুনা অয়েল। তার মধ্যে ঢাকা বিভাগে তাদের ফিলিং স্টেশন রয়েছে ১৪৬টি, চট্টগ্রামে ১০৭, রাজশাহীতে ৭৫, খুলনায় ৯৭, বরিশালে ১০, সিলেটে ৫০ ও রংপুরে ৭৫টি। তাছাড়া এজেন্ট ডিস্ট্রিবিউটর রয়েছে ১ হাজার ৬৭টি। ডিস্ট্রিবিউটরদের পাশাপাশি কোম্পানিটির নিজস্ব ফিলিং স্টেশনেও জ্বালানি তেলে ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানায়, তদারকি দুর্বলতার কারণে ফিলিং স্টেশনগুলো জ্বালানি তেল ক্রয়-বিক্রয়ে জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। বিপণন কোম্পানিগুলো থেকে ফিলিং স্টেশনগুলো কী পরিমাণ জ্বালানি তেল ক্রয় করে এবং কী পরিমাণ তারা গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে, ওই হিসাব সূক্ষ্মভাবে তদারক করা হয় না। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী ভোক্তা পর্যন্ত পণ্য পৌঁছানোর বিভিন্ন ধাপে সিস্টেম লস হয়। ফলে ডিপো থেকে ফিলিং স্টেশনগুলো যে পরিমাণ জ্বালানি তেল ক্রয় করে, বিক্রিতে তার চেয়ে কিছু কম হওয়ার কথা। কিন্তু গ্রাহকদের ওজনে কম দিয়ে সিস্টেম গেইন করে ফিলিং স্টেশনগুলো বাড়তি মুনাফা তুলে নিচ্ছে। ফিলিং স্টেশনগুলোর ওজনে কম দেয়া ও ভেজাল জ্বালানি তেল বিক্রি নতুন নয়। বিভিন্ন সময় সারা দেশে ফিলিং স্টেশনগুলোয় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে তার প্রমাণও পাওয়া যায়। ওসব অপরাধে ফিলিং স্টেশনগুলোকে অর্থদ- দেয়া হয়। বিভিন্ন সময়ে কিছু কিছু ফিলিং স্টেশনের বাণিজ্যিক কার্যক্রমও স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু অপরাধ ও জালিয়াতির তুলনায় শাস্তি কম হওয়ায় ওসব অপরাধ বন্ধ না হয়ে ক্রমেই বাড়ছে। ফলে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যানবাহন মালিকরা। জ্বালানি বাবদ তাদের বাড়তি ব্যয় হচ্ছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে যমুনা অয়েলের মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) মো. আয়ুব হোসাইন জানান, ওজনে কম দিয়ে ফিলিং স্টেশনের কর্মীরা তেল চুরি করে। তা তাদের বাড়তি আয়ের কৌশল হতে পারে। তবে যমুনা অয়েল ফিলিং স্টেশনগুলোয় যাতে কেউ জ্বালানি তেল চুরি করতে না পারে, সেজন্য অভিযান পরিচালনা করা হয়। এমনকি অর্থদ-ও দেয়া হয়।
অন্যদিকে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মো. আকতার হোসেন জানান, ডিপো থেকে জ্বালানি তেল ডিলারের কাছে বিক্রির পর ওই পণ্যের বিষয়ে সব দায়-দায়িত্ব ডিলার প্রতিষ্ঠানের। তবে কেউ যদি ওজনে কম পাওয়ার অভিযোগ করে তাহলে কোম্পানি সংশ্লিষ্ট ফিলিং স্টেশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান জানান, অর্থের বিনিময়ে গ্রাহক সেবা নিয়ে থাকে। প্রত্যেক গ্রাহকের ন্যায্য সেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। গ্রাহকের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিপিসি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে আসছে। অনিয়ম পাওয়া গেলে প্রথমে অর্থদ- দিয়ে ফিলিং স্টেশনগুলোকে সতর্ক করা হয়। তারপরও অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের ডিলারশিপ বাতিলসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ৮:২৭:৫১ ● ১৩৪৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ