কলাপাড়ায় নদী ও স্লুইজগেট ইজারায় প্রভাবশালীদের কর্তৃত্ব!

প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » কলাপাড়ায় নদী ও স্লুইজগেট ইজারায় প্রভাবশালীদের কর্তৃত্ব!
রবিবার ● ৮ মে ২০২২


কলাপাড়ায় নদী ও স্লুইজগেট ইজারায় প্রভাবশালীদের কর্তৃত্ব!

জাহিদ রিপন, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥

 

 

 

ক্ষমতায় যারা-নদী ইজারা দেবে তারা। এমন নীতিতেই গত তিন যুগ ধরে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের দখলদারিত্বে রয়েছে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কচুপাত্রা নদী। এতে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তিনটি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষসহ কুড়ি হাজার কৃষক। প্রশাসনিক দপ্তরসহ রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে ক্ষতিগ্রস্থদের আবেদন নিবেদনেও মিলেনি জিম্মিদশা থেকে মুক্তি। উপরোন্ত এসব প্রভাবশালীদের রোশানলে পড়ে হয়রানিসহ শাররীক লাঞ্চনার শিকার হয়েছে কৃষকসহ সাধারন মানুষ।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার চাকামইয়া ইউনিয়ন ও বরগুনার তালতলী উপজেলার কচুপাত্রা ইউনিয়নের সীমানা চিহ্নিত করে বহমান ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ কচুপাত্রা নদী। দুই পাড়ে রয়েছে জেলার কলাপাড়া উপজেলার চাকামইয়া, বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার কড়ইবাড়িয়া, পচাঁ কোড়ালিয়া, বগী ইউনয়নের শতাধিক গ্রাম। কৃষিকাজের সুবিধার্থে লবন পানির প্রবেশ নিয়ন্ত্রন করতে ১৯৬৫ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড এ নদীতে একটি বাঁধ নির্মান করে। কয়েক মাস পড়েই এর অদূরেই ৪৪ নম্বর পোল্ডারে পানি ওঠা-নামর জন্য র্নিমান করা হয় ৬ ভেল্টের একটি স্লুইজ গেট। যা কাঁঠালপাড়া স্লুইজ গেট নামে সমাধিক পরিচিত।

 

সরজমিনে দেখা যায়, স্লুইজ গেটের ভিতরের অংশের ৬টি কপাট খুলে পাশেই রাখা আছে। বেশির ভাগ কপাট নস্ট হয়ে গেছে। দুই দিকের মুল পিলারের পলেস্তার খসে পড়ে রড বেড়িয়ে তাতে জং ধরে গেছে। দুই দিকের গাইড ওয়াল দেবে গিয়ে সংলগ্ন নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। উভয় পাশের নিরাপত্তা রেলিং বিলীন হয়ে গেছে। প্রতিটি গেটের মুখে পেতে রাখা হয়েছে একটি করে ছোট ফাঁসের বেহুন্দী জাল। নদীতে বাঁকে বাঁেক পেতে রাখা হয়েছে ছোট ফাঁসের বেহুন্দি জাল। এর মাধ্যমে মাছ শিকার করছে দলখারীরাসহ ইজারাগ্রহনকারীরা।

 

স্লুইজ গেটের কপাট খোলা থাকায় জোয়ারে সময় প্রবল স্্েরাতে প্রবেশ করছে লবন পানি। স্্েরাতের তীব্রতায় বিলীন হয়ে গেছে বেরিবাঁধের পশ্চিম পাশে প্রায় ৩শ’ মিটার টপসহ স্লোপ। ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে তিনটি মসজিদ, কাঠালপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাজীপাড়া মাদ্রাসা, নুর মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বসতভিটা। হুমকীর মুখে পড়েছে তিনটি ইউনিয়নের চলাচলের রাস্তা। ভাঙ্গন প্রতিরোধে পাউবো প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা ব্যায়ে পাশেই নির্মান করছে ৩৫০ মিটারের অরেকটি একটি বাঁধ।

 

স্থানীয়রা জানায়, কচুপাত্রা নদীকে উপজীব্য করে এ অঞ্চলের কয়েক’শ পরিবারের দৈনন্দিক জীবন-জীবিকা। নির্ভরশীল কয়েক হাজার একর জমির চাষাবাদ। কচুপাত্রা নদীর উপড় বাঁধ র্নিমানের পর, স্লুইজগেট র্নিমান ছিল কৃষকদের জন্য বড় আর্শিবাদ। কিন্তু কয়েক বছর পরই এটি পরিনত হয় প্রভাবশালীদের অর্থনৈতিক ভাগ্য গড়ার হাতিয়ারে।

 

প্রভাবশালী রাজনৈতিক দখলদাররা স্লুইজ গেটের মুখ দখলে নিয়ে, মাছ শিকারের সুবিধার্থে নিজেরদের ইচ্ছেমত স্লুইজগেট দিয়ে পানি ওঠা-নামা করায়। নদীতে জাল পাতার ইজারা দিয়ে মাছ শিকারের মাধ্যমে বছরে দৈনিক আয় করছে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা। বছরে আয় প্রায় কোটি টাকা।

 

এতে কপাল পোড়ে কৃষকসহ সাধারন মানুষের। শুস্ক মৌসুমে লবন পানি প্রবেশ করানোর কারনে ফসলহানিসহ দেখা দেয় ফসলহীনতা। তিন ফসলি জমি পরিনত হয় এক ফসলীতে। তেমনি বর্ষা মৌসুমে দেখা দেয় জলবদ্ধতা। কচুপাত্রা নদী থেকে প্রবাহমান শাখা খালগুলোতে শুস্ক মৌসুমে লবন পানি প্রবেশের ফলে কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা সাগরকন্যাকে জানান, এলাকার একটি প্রভাবশালী পরিবার প্রায় দুই যুগ স্লুইজ গেটসহ নদীর নিয়ন্ত্রন নিয়ে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছে। এর নিয়ন্ত্রন নিয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়েছে অন্তত: ৩০ বার। অনেককে বরন করতে হচ্ছে পঙ্গুত্ব। মামলা হয়েছে অসংখ্য। দাঙ্গা-হাঙ্গামা এড়াতে বর্তমানে সকল রাজনৈতিক দলের (গুটি কয়েক) প্রভাবশালীর সম-অংশীদ্বারিত্বে চলছে স্লুইজসহ নদীর নিয়ন্ত্রন।

 

এলাকার বাসিন্দা ইয়াকুব খান সাগরকন্যাকে বলেন,’অংশগ্রহনমুলক পানি ব্যবস্থা’ পরিপত্রানুযায়ী স্লুইজ গেটসহ নদীর দেখভালের জন্য ৭ সদস্যর একটি কমিটি রয়েছে। যার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সদস্য সচিব পানি উন্নয়ন বোড’র্র নির্বাহী প্রকৌশলী। যার সদস্য হল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, ১জন জনপ্রতিনিধি, ১জন শিক্ষক, ২জন কৃষক প্রতিনিধি। পরিতাপের বিষয়, স্লুইজসহ নদীর জিম্মিদশা মুক্তিতে এই কমিটি অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে বারবার ব্যার্থ হচ্ছে।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন সাগরকন্যাকে বলেন, দখলদারদের মাছ শিকারের কারনে ভঙ্গ দশায় পরিনত হয়েছে ভৌগলিকভাবে গুরুত্বপূর্ন স্লুইটি। চলতি বছরের জানুয়ারী ও মার্চ মাসের মধ্যভাগে দু’দফা স্লুইজ গেটের কাপাট উম্মুক্ত করে দেয়া হয়। কিন্তু পুনরায়: প্রভাবশালীরা দখলে নিয়ে মাছ শিকার করে শুরু করে। তিনি আরো বলেন, জুনের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্থ কপাটগুলো নতুন করে লাগানো হবে।

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ বলেন, গুরুত্বপূর্ন কচুপাত্রা নদীর স্লুইজগেট প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রনে থাকায় তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ নিয়ে কৃষকরা দফায় দফায় আন্দোলন করেও কোন প্রতিকার পাইনি। কৃষি অফিস ও কৃষক প্রতিনিধিদের মাধ্যমে স্লুইজগেটটি নিয়ন্ত্রনত্রিত হলে কৃষকদের উপকার হত।

 

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মো. শহীদুল হক বলেন, কৃষকদের সুবিধাকে গুরুত্ব দিয়ে জড়িতদের সনাক্ত করে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

 

 

 

জেআর/এমআর

 

বাংলাদেশ সময়: ১৪:০৩:২৭ ● ১৪৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ