খালাদে জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে সরকার: বিএনপি

প্রথম পাতা » রাজনীতি » খালাদে জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে সরকার: বিএনপি
মঙ্গলবার ● ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯


সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া হাসপাতালে দ্বিতীয় দফা চিকিৎসা শেষে কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়ার পর তিন মাসের বেশি সময় কোনো চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তুলেছে দলটি। বিএনপির অভিযোগ, তাদের নেত্রীকে এভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করে বলেন, কারাগারে যথা সময়ে দেশনেত্রীর চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করা এবং পরিত্যক্ত কারাগারে রেখে দেশনেত্রীর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটানোর মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের আশংকার কথাটা আমরা বার বার বলে আসছি। সেই ষড়যন্ত্র, সেই চক্রান্তটি হচ্ছে তাকে চিকিৎসা না দিয়ে অকালে এভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া। সুচিকিৎসা না দেওয়া এবং কয়েকদিন পর পরেই তাকে হুইল চেয়ারে করে আদালতে হাজির করে মানসিকভাবে হেনস্তা করা- এই সরকারের ষড়যন্ত্রের অংশ বলে দেশবাসী মনে করে।
রবিবার খালেদার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড তাকে কারাগারে দেখে এসেছে জানিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং চিকিৎসা না দেওয়ায় খালেদার রোগগুলো ‘মারাত্মক রূপ’ নিয়েছে। মঙ্গলবার সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, মেডিকেল বোর্ড সাড়ে তিনমাস পরে বিগত পরশু (রোববার) আদালতের নির্দেশে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়েছিল, পরীক্ষা করতে গিয়েছিল। তারা পরীক্ষা করে দেখে বিস্মিত হয়েছেন যে, বিগত সাড়ে তিন মাসে তার কোনো রকম রক্ত পরীক্ষা করা হয় নাই, তার ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা হয় নাই, কোনো এক্সরে করা হয়নি, তার ব্লাড প্রেসার মাপা হয় নাই, তাকে কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।
দুর্নীতির দুই মামলায় এক বছরের কারাবাসের মধ্যে খালেদা জিয়াকে দুই বার চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) নেওয়া হয়েছিল। প্রথমবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য গত এপ্রিলে। দ্বিতীয়বার নিয়ে ৬ অক্টোবর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত তাকে রাখা হয়েছিল। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সাড়ে তিন মাস আগে যে অসুখ নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সেই অসুখগুলো আরও বেড়ে গেছে। বাম কাঁধে ব্যথা বৃদ্ধি পেয়েছে, ডান কাঁধে নতুন করে ব্যথা হচ্ছে। বাম বাহু, বাম পায়ে এবং কবজিতে ব্যথা অনেক বেশি বেড়েছে। ফলে কারও সাহায্য ছাড়া তিনি এখন দাঁড়াতে ও চলতে পারছেন না। প্রচ- ব্যথা ও কাঁপুনির জন্য তিনি হাত দিয়ে কিছু ধরেও রাখতে পারছেন না। তিনি যে রোগগুলোতে ভুগছেন তা অত্যন্ত মারাত্মক রোগ। তার বয়স ৭৩ এর পথে। এই বয়সে এই রোগগুলোর যদি নিয়মিত চিকিৎসা না হয়, প্রতিদিন যদি মনিটর না করা হয়, তাহলে তার জীবনের প্রতি মারাত্মক হুমকি এসে যেতে পারে। বিগত সাড়ে তিন মাসে দেশনেত্রীর হৃদরোগ, লিভার কিংবা কিডনির কোনো পরীক্ষা করা হয়নি। যা নিয়মিতভাবে করা অত্যন্ত জরুরি ছিল।
খালেদা জিয়ার কোনো ক্ষতি হলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন ফখরুল। দলের চেয়ারপারসনের সর্বোত্তম সুচিকিৎসার জন্য যদি ‘বাড়তি’ ব্যয়ের প্রয়োজন হলে তা দল বহন করতে রাজি বলেও জানান মহাসচিব। বিএনপির পক্ষ থেকে করা সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, আগে খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা প্রতি সপ্তাহে দেখা করতে পারতেন। এখন ১৫ দিনের আগে কোনোমতে দেখা করতে দেওয়া হয় না। দলের পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে এর আগে কয়েক বার দেখা করেছি। চার মাস ধরে দলের পক্ষ থেকে কাউকে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এমনকি তাঁর আইনজীবীরাও সাক্ষাতের অনুমতি পাচ্ছেন না। মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য দীর্ঘকাল ধরে পরিকল্পনা করে আসছে। যে মামলাগুলো একটার পর একটা দেওয়া হচ্ছে, এর কোনোটার কোনো ভিত্তি নেই। এরইমধ্যে যে তিনি জামিন পেয়েছিলেন, তারও কোনো সুবিধা তাঁকে গ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। আপনারা জানেন, প্রায় ৩০টি সম্পূর্ণ সাজানো মামলা। তাঁর বিরুদ্ধে একটার পর একটা নিয়ে আসা হয় আর নিম্ন আদালতে গেলে অনেক দিন পরে আবার তারিখ দেওয়া হয়। খালেদা জিয়াকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে নেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে এবং তাঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দুবারের বিরোধীদলীয় নেতা। এখনো তিনি এই দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। নিরাপত্তা, চিকিৎসা, ন্যায়বিচার তাঁর প্রাপ্য। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৭:৪৪:৪৬ ● ৪৭২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ