মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহ দৃশ্য এখনো চোখের সামনে ভাসে- বীর মুক্তিযোদ্ধা শুকদেব

প্রথম পাতা » ঢাকা » মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহ দৃশ্য এখনো চোখের সামনে ভাসে- বীর মুক্তিযোদ্ধা শুকদেব
সোমবার ● ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২১


মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহ দৃশ্য এখনো চোখের সামনে ভাসে- বীর মুক্তিযোদ্ধা শুকদেব

গোপালগঞ্জ সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালে জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশকে শত্রু মুক্ত করতে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন মুক্তিযোদ্ধা সাবেক ব্যাংকার, শুকদেব মন্ডল। সম্মুখ সমরে তিনি দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছেন।
শুকদেব মন্ডলের বাড়ী গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর পূর্ব দক্ষিন পাড়া ২ নং ওয়ার্ডে। পিতা- সতীশ চন্দ্র মন্ডল, মাতা- জ্ঞানদা মন্ডল, স্ত্রী-নিভা রানী বিশ্বাস। তার দুই ছেলে ও পুত্রবধূ উচ্চ শিক্ষিত এবং চাকুরীজীবী। শুকদেব মন্ডল বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধালীগ, গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সম্পাদক।
মুক্তিযোদ্ধা শুকদেব মন্ডল বলেন, ১৯৭১ সালে ভারতে বীরভূম জেলায় উচ্চতর প্রশিক্ষন ও গেরিলা যুদ্ধে অংশ গ্রহন করি। আমার কমান্ডার প্রশিক্ষক ছিলেন যিনি তার নাম  ইন্দার সিং, গ্রুপ কমান্ডার ছিলেন জীবন ভৌমিক, আঞ্চলিক অধিনায়ক ছিলেন মোঃ আঃ মঞ্জুর (বীর মুক্তিযোদ্ধা),সেক্টর ছিল-০৮ নং। তার ব্যক্তিগত ক্রমিক নং - সি -১৭১( তালিকা ভূক্ত), তাং-২৪.১১.১৯৭১, র‌্যাঙ্ক এফ.এফ ( ফ্রিডম ফাইটার) , ব্যাচ নং- এম-৩,এম-১ । কল্যানী থেকেও আমাকে উচ্চতর ট্রেনিং এ মনোনয়ন দেওয়া হয়। শত্রুবাহিনীর মোকাবেলা করতে দলবেঁধে আমরা কালভার্টসহ ছোট বড় ব্রিজের গোড়ায় বড় বড় গর্ত করে রেখেছি। শত্রুবাহিনী যখন আক্রমন করতে আসতো তখন গর্তের কাছে তারা বাঁধাগ্রস্থ হলে আমরা পাল্টা আক্রমন করে তাদেরকে তাড়িয়ে দিতাম। তারা দিকবিদিক হয়ে ছুটে পালাতো। আবার ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে দিয়ে (বিচ্ছু বাহিনী) বিভিন্ন জায়গায় রেকি বা তাদের গোপন তথ্য নিতাম। গোপন তথ্যের মাধ্যমে তাদের উপর আক্রমন চালাতাম। ট্রেনিংকালে গ্রেনেড,কামান, বিস্ফোরক জাতীয় অস্ত্র (থ্রি নট থ্রি, এসএলার) দিয়ে ব্রিজ ধ্বংস করেছি। ঠিক সেই কায়দায় শত্রুবাহিনীর আস্তানাও আমরা গুড়িয়ে দিয়েছি। অনেক রাত কেটেছে বাগানে, বন-জঙ্গলে। গ্রেনেডে, বন্দুকের গুলির শব্দে ভয়ে একটুও ঘুমাতে পারিনি। একদিন রাত ২ টার সময় ভারতে পশ্চিম বঙ্গের নৈহাটি রেলসেতু পারাপারের সময় (গঙ্গা নদীর উপর) দুটি ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ হলে সেদিন আর জীবনে বাঁচতাম না।
ভারতের যশোরের পাইকগাছার তাবুতে থেকে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ করি। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে,কোন রকম খেয়ে না খেয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহন করার অনেক কষ্টের কথা স্মৃৃতিচারন করেন শুকদেব মন্ডল। একদিন শত্রুদের তাড়া করতে গিয়ে উচু থেকে নিচুতে লাফ দিয়ে পড়ার সময় পায়ের হাটুতে প্রচন্ড ব্যথা পাই। প্রায় এক সপ্তাহ ছুটি নিয়ে তাবুতে অবসর নেই। মাঝে মধ্যে এখনো সেই ব্যথা অনুভব করি। প্রায় ৫২দিন প্রশিক্ষন এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তৎকালীন গোপালগঞ্জ সিও অফিসের সামনে ক্যাম্প ছিল। সেখানে  ভারতীয় মিলিটারীদের  কাছে  আমাদের কাগজপত্র ও অস্ত্র জমা দেই। চোখের সামনে পাকিস্তানীদের গুলিতে অনেককে  নিহত হতে দেখেছি। কত যে আহত হয়েছে  তা হিসাব করে  বলতে পারব না। যুদ্ধকালীন সেই ভয়াবহ দৃশ্য এখনো চোখের সামনে ভাসে ।
তিনি আরও বলেন, সদ্য স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবকে কার্যকর না করা এবং অঙ্কুরেই স্ব¦াধীনতাকে ধ্বংশ করে পূনরায় পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে স্বাধীনতা বিরোধীরা ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় তারা বেঁচে যান। এপর্যায়ে স্বাধীনতার বিরোধীরা একটি চরম উগ্রবাদী, দেশদ্রোহী ধর্মভিত্তিক তথা সাম্প্রপ্রদায়িক সরকার গঠন করে। জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে। মূলত তারা  স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের চেতনাকে মুছে ফেলতে চেয়েছিল। দেশকে চরম বিপর্যয়ের মুখে ফেলতে চেয়েছিল। সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যাওয়া গণতন্ত্রের মানস কন্যা বঙ্গবন্ধু তনয়া  জননেত্রী শেখ হাসিনা জীবনকে বাজী রেখে দেশকে  অনেক সংগ্রাম, যুদ্ধ করে  ক্ষমতায় আসেন। দেশে ক্ষমতায় আসার পর কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী ও খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা ফাঁসি দিয়ে নজীর বিহীন  দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বর্তমান সরকারের আমলে শহীদ মিনার, বঙ্গবন্ধু মঞ্চ,  বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্র্য আধুনিকায়ন করা হয়েছে।  ২০২১ রূপকল্প অনুযায়ী আগামী এক দশকে দেশে ক্ষুধা, বেকারত্ব, অশিক্ষা, বঞ্চনা ও দারিদ্র থাকবে না।  সর্বচ্চ বিরাজ করবে শান্তি,সুখ,সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধি। যেখানে থাকবে শোষন  মুক্ত সমাজ ব্যবস্থা, সকলের জন্য থাকবে আইনের শাসন, মৌলিক অধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সকলের সমান অধিকার থাকবে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার অবদান, গৃহহীনদের কর্মসংস্থান। আমরা এখন দেখছি   নিজস্ব অর্থায়নে  স্বপ্নের  পদ্মাসেতু, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফূলী টানেল, মেট্রোরেল, ১০০ টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের মত অভাবনীয় প্রকল্পের বাস্তব দৃশ্য। শিক্ষা, কৃষি, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য প্রতিটি সেক্টরে উন্নয়ন ও  সংষ্কারে আওয়ামীলীগ সরকার কাজ করেছে। জঙ্গী দমনে সরকার বিরাট  সাফল্য  অর্জন করেছে। যা বিগত  দিনে কোন সরকারই এ অবদান রাখতে পারেনি। করোনার মহামারী দুর্যোগকেও  ঠিকমত মোকাবেলা করেছে এ সরকার।

এইচবি/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:১৩:০৮ ● ১২৮১ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ