
মো. রুহুল আমীন, নেছারাবাদ (পিরোজপুর) থেকে
পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার আটঘরের খালজুড়ে জমে উঠেছে শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী নয়নাভিরাম নৌকার হাট। জৈষ্ঠ্য থেকে আশ্বিন—এই কয়েক মাস ধরে এই হাটে চলে নৌকা বিক্রির ধুম। সপ্তাহে দুই দিন, সোমবার ও শুক্রবার সকাল হতেই খালে রঙিন হয়ে ওঠে শতশত নৌকায়।
নেছারাবাদের মানপাশা বাজারসংলগ্ন খালে বসা এই নৌ-হাটে বিক্রি হয় বিভিন্ন সাইজের ও কাঠের তৈরি নৌকা। একসময় সুন্দরি কাঠ দিয়ে নৌকা বানানো হতো, এখন ব্যবহার হচ্ছে চাম্বল, রেইনট্রি, মেহগনি, আমড়া ও কড়াই কাঠ। প্রতি হাটে ৪-৫ শতাধিক নৌকা বিক্রি হয়। দাম ২৫০০ থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
উপজেলার ডুবি গ্রামের নৌকা কারিগর সাহারুল ইসলাম জানান, এখন দেশি কাঠ দিয়েই বানাতে হয় নৌকা। আর চামী গ্রামের মিস্ত্রী মোশাররফ বলেন, একটি মাঝারি আকারের নৌকা তৈরিতে লাগে দুই জনের একদিন সময় ও প্রায় ২,৫০০–৭,০০০ টাকা খরচ।
নৌকার সাথে বিক্রি হয় বৈঠাও। আমইর, গাব, আমড়া কাঠের বৈঠা বিক্রি হয় ২০০-২৫০ টাকায়। হাটের পাশে বসে বৈঠার দোকান, আর রাস্তার পাশে বসে টোং দোকান—যেখানে বিক্রি হয় পিয়াজু, গোলগোল্লা, দেশীয় বেকারি সামগ্রী।
বিল-চরাঞ্চলের মানুষ, পেয়ারা ব্যবসায়ী, মাছ ধরার জেলেরা, এমনকি নার্সারির মালিকরা এই হাটের নৌকার উপরই নির্ভরশীল। ফলে শুধু বেচাকেনা নয়, এই নৌ-হাটকে কেন্দ্র করে আটঘর কুড়িয়ানা ও বলদিয়া ইউনিয়নের প্রায় ১২টি গ্রামের দেড় হাজার মানুষের কর্মসংস্থানও এখানে।
বর্তমানে নৌকার হাট যেন এক জীবন্ত ঐতিহ্যের রঙিন জলছবি হয়ে উঠেছে।