উপজেলার মনোনয়ন নিয়ে আ.লীগের তৃণমূল থেকে ৭০০ অভিযোগ

প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ » উপজেলার মনোনয়ন নিয়ে আ.লীগের তৃণমূল থেকে ৭০০ অভিযোগ
বৃহস্পতিবার ● ৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৯


উপজেলার মনোনয়ন নিয়ে আ.লীগের তৃণমূল থেকে ৭০০ অভিযোগ

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নের জন্য তৃণমূলের সুপারিশ পাঠানোর ক্ষেত্রে স্থানীয় সাংসদ ও জেলার নেতাদের প্রভাব খাটানোর ৭০০ অভিযোগ জমা পড়েছে দলীয় সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে। ক্ষমতাসীন এ দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দলের মনোনয়ন বোর্ড অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে। এখানে কার ভাই, কার বোন, কার ছেলে সেটা বিষয় নয়। প্রশ্ন হচ্ছে কার জনপ্রিয়তা বেশি, কে উইনেবল। তাদেরকে আমরা নমিনেশন দেব। এবার পাঁচ ধাপে দেশের ৪৯২ উপজেলা পরিষদে ভোট করার পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আগামি ১০ মার্চ প্রথম ধাপে ৮৭ উপজেলায় ভোট হবে। পঞ্চম ও শেষ ধাপের ভোট হবে ১৮ জুন।
স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন সামনে রেখে সোমবার মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে আওয়ামী লীগ। দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, উপজেলা কমিটির বর্ধিত সভা থেকে এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যন পদে মনোনয়নের সুপারিশ পাঠানোর কথা। তার ভিত্তিতেই কেন্দ্র থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার নিয়ম। সে অনুযায়ী, তৃনমূল থেকে পাঠানো তালিকার ভিত্তিতেই ঢাকায় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু অনেক জায়গায় এমপিরা প্রভাব খাটিয়ে একক নাম পাঠাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠলে সেই ব্যবস্থা বদল করা হয়। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্দেশনা দেন, মনোনয়নের সুপারিশ নিয়ে কারও আপত্তি থাকলে তা লিখিতভাবে জানাতে হবে। এরপর যারা লিখিত অভিযোগ দিচ্ছেন, সুপারিশের তালিকায় নাম না থাকলেও তাদের কাছে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয় মঙ্গলবার। বুধবার থেকে মনোনয়ন ফরম তোলার বিষয়টি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যলয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুধবার রাত পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাতশর মত অভিযোগ দপ্তরে জমা পড়েছে। অনেক উপজেলা থেকেই একাধিক অভিযোগ এসেছে। অভিযোগ জমা দেওয়ার পর বগুড়ার কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মোশফিকুর রহমান কাজল  বলেন, “তৃণমূল থেকে আমার নাম জেলাতে পাঠানোর পরে কেন্দ্রে এসে দেখি নাম নেই। পরে খবর নিয়ে জানলাম, জেলা আওয়ামী লীগ একজনের নাম পাঠিয়েছে। এখানে স্বজনপ্রীতি হয়েছে। দলের ত্যাগী নেতা হিসেবে আমি মনোনয়নের দাবিদার। মনোনয়ন পাই বা না পাই, কেন্দ্র পর্যন্ত নাম আসবে না কেন।
মোশফিকুরের দাবি, উপজেলায় বর্ধিত সভা করে তার নামই পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তা বাদ দিয়ে আবদুল মান্নানের নাম পাঠিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান মজনু বলেন, অনেক উপজেলাতেই তৃণমূল থেকে একজনের নাম পাঠিয়েছে। যেখানে তিন জনের নাম এসেছে, সেখানে আমরা জেলা সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদক ঐকমত্যের ভিক্তিতে একক প্রার্থীর নাম পাঠিয়েছি। এখানে অন্য কোনো বিষয় নেই। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. তোফাজ্জল হোসেন খান তোহাও ঢাকায় এসে অভিযোগ জমা দিয়ে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।
তিনি বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রার্থী বাচাইয়ের জন্য ভোট হয়, সেখানে ২২ ভোট পেয়ে প্রথম হয়েছি আমি। অথচ জোর করে ১৮ ভোট দেখিয়ে তাতে আমার স্বাক্ষর নিয়েছে। জেলা থেকে কেন্দ্রে যে লিস্ট পাঠিয়েছে, সেখানে আমার নাম রাখেনি। নরসিংদীর সাংসদ শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন ‘প্রভাব খাটিয়ে’ নিজের ছোট ভাই নজরুল মজিদ মাহমুদ স্বপনের নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মনোহরদী উপজেলার চার বারের চেয়ারম্যন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম খান বীরু।
তিনি বলেন, আমি চারবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যন, আমার নাম তারা না দিয়ে এককভাবে এমপি সাহেবের ভাইয়ের নাম দিয়ে পাঠিয়েছে। এখন কি আর করব, অভিযোগ দিয়ে মনোনয় ফরম নিয়ে গেলাম। একই রকম অভিযোগ এসেছে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা থেকেও। সেখান থেকে পাঠানো হয়েছে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর ছেলে রাজীব আহমেদ পার্থর নাম। এ বিষয়ে কথা বলতে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম হীরুকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। অভিযোগের বিষয়ে মন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন বা সাবেক মন্ত্রী রাজুর বক্তব্যও   জানতে পারেনি। পটুয়াখালী সদর উপজেলার চেয়ারম্যান পদে তিনজনের নাম সুপারিশ করে পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রে। তালিকায় প্রথম যার নাম এসেছে, তিনি স্থানীয় এমপি শাহজাহান মিয়ার ছেলে তারিকুজ্জামান মনি। তালিকার দুই নম্বর প্রার্থী এমপির ভাইয়ের ছেলে আবুল কালাম মৃধা। এই তালিকায় তিন নম্বর প্রার্থী হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের নাম রাখা হয়েছে। পাশের মির্জাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের মনোনয়নের সুপারিশে এক নম্বরে রয়েছে গাজী আতাহারউদ্দীনের নাম। তিনি সাংসদ শাহজাহান মিয়ার ছোট ছেলে তারিকুজ্জামান রনির শ্বশুর। বর্তমান চেয়ারম্যান পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য খান মো. আবু বক্কর সিদ্দকীর নাম ওই তালিকার তিন নম্বরে রাখা হয়েছে। প্রার্থী বাছাই নিয়ে প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অভিযোগ করেছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. ইউসুফ আলী চৌধুরী সেলিম।
তিনি লিখেছেন, নিয়ম অনুযায়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভার মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করার কথা। কিন্তু বিগত  ১৭ বছর ধরে কেরানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। এ অবস্থায় বর্ধিত সভা করার সুযোগ নেই। দুটি থানা নিয়ে গঠিত এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের কমিটি না থাকায় এককভাবে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন আহ্বায়ক ও বর্তমান চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ। কেন্দ্র থেকে নামের তালিকা চাওয়া হলে তিনি নিজের নামই পাঠিয়েছেন। সংবাদটি কেরানীগঞ্জ আওয়ামী লীগের সর্ব মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। ইউসুফ আলী চৌধুরী সেলিম ছাড়াও আলতাফ হোসেন বিপ্লব ঢাকার পাশের এ উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী।
তৃণমূলের অভিযোগ নিয়ে এক প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এমপি মন্ত্রীরা নিজেরাই তো আছেন, আবার তাদের আত্মীয় স্বজনদের টানবেন কেন? তৃণমূল থেকে নাম পাঠানোর সময় কেউ কোনো অনিয়ম করল কিনা, সেটা আমাদের মনোনয়ন বোর্ড দেখবে। সঠিকভাবে নাম না এলে দলের জরিপ আছে। সব মিলিয়ে আমরা মনোনয়ন দেব।
কাদের বলেন, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মনোনয়ন বোর্ড বসবে। সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে জনগণের কাছে ‘অধিকতর গ্রহণযোগ্য’ ব্যক্তিকেই উপজেলায় মনোনয়ন দেওয়া হবে।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৪:৫৭:৩৪ ● ৫৫২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ