নওগাঁয় দাদন ব্যাসায়ীদের খপ্পরে পড়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত

প্রথম পাতা » রাজশাহী » নওগাঁয় দাদন ব্যাসায়ীদের খপ্পরে পড়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত
রবিবার ● ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯


নওগাঁয় দাদন ব্যাসায়ীদের খপ্পরে পড়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত

নওগাঁ সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

নওগাঁর সাপাহার উপজেলায় অসংখ্য দাদন ব্যাবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে অনেক সাধারণ ব্যাবসায়ী, ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী কৃষিজীবী সহ বিভিন্ন পেশা শ্রেণীর মানুষ প্রতিনিয়ত সর্বস্বান্ত হলেও বিষয়টি যেন দেখার কেউ নেই। আর দীর্ঘ দিন ধরে এই দাদন ব্যাবসা চলতে থাকায় বিষয়টি যেন সবার গা সওয়া হয়ে গেছে, বিষয়টির প্রতি কেউ কোন গুরুত ¡না দেয়ায় দিন নিদ বেড়েই চলেছে দাদন ব্যাবসায়ীদের দৌরাতœা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে খোদ উপজেলা সদরেই রয়েছে প্রায় অর্ধশত দাদন ব্যাবসায়ী, যাদের খপ্পরে পড়ে ধারণাতিথ চড়া সুদ দিতে গিয়ে ইতোমধ্যে অনেকেই সর্বশান্ত হয়েছেন। অতি সম্প্রতি সদরে অবস্থিত মিলন সুতাঘরের সত্ত্বাধিকারী মিলন হেসেন নামের এক বৃহত সুতা, নেট জাল ও সেলাই মেশিন ব্যাবসায়ী বিগত ২০১৮সালের ডিসেম্বর মাসে তার ব্যাবসায়কি কাজে কিছু অর্থের প্রয়োজন হওয়ায় তিনি উপজেলার তুলশীপাড়া গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে আ: ছাত্তার নামের এক দাদন ব্যাবসায়ীর নিকট হতে ব্যাংকের ফাঁকা চেকে সহি করে তার নিকট প্রদান করে ৪লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন। সে সময় দাদন ব্যাবসায়ীর টাকার সুদ ছিল প্রতি মাসে প্রতি লাখে ১০হাজার টাকা। সে হিসেবে ব্যাবসায়ী মিলন হোসেন ওই দাদন ব্যাসায়ীকে প্রতিমাসে ৪০হাজার টাকা করে ২০১৯সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত সর্বমোট ৩লক্ষ ৬০হাজার টাকা সুদ হিসেবে দিয়ে এসেছেন। বর্তমানে ওই দাদন ব্যাবসায়ী মিলনের নিকট হতে তার মুলধন ৪লক্ষ টাকা ফেরত নিতে চাহিলে একই সঙ্গে সে এত টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। তড়িৎগতিতে সে তার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় এরইমধ্যে ওই দাদন ব্যাবসায়ী তাকে তার নিকট থাকা ফাঁকা চেক দিয়ে তার বিরুদ্ধে ২০লক্ষ থেকে ২৫লক্ষ টাকার মামলা দায়ের করবেন বলে বিভিন্ন ধরনের হুমকী দিয়ে চলেছে। বর্তমানে ব্যাবসায়ী মিলন হোসেন তার হুমকীর ভয়ে দোকান পাট বন্ধ করে গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে। পরিবারের কোন সদস্যের সাথেও তার কোন যোগাযোগ নেই বর্তমানে পরিবারের লোকজন তাকে নিয়ে দারুন উৎকন্ঠায় রয়েছে বলে তার বাবা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
এ ছাড়া মজিবর রহমান মন্ডল নামের এক দাদন ব্যাসায়ীর খপ্পরে পড়ে কয়েক বছর পূর্বে উপজেলার শিরন্টি গ্রামের সালেক নামের এক ক্ষুদ্র ওষুধ ব্যাবসায়ী তার বশত বাড়ী, জমি জমা সম্পূর্ন শেষ করে সর্বশান্ত হয়ে দীর্ঘ দিন ধরে সে এলাকা ছেড়ে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে অন্যত্র জীবন যাপন করছে। সমসাময়িক সময়ে শিরন্টি ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের নাসির মাষ্টার নামের এক ব্যক্তিও সংসার জীবনের তার সব কিছু হারিয়ে এখন নি:শ্ব জীবন যাপন করছেন। মহরম আলী নােেমর এক দাদন ব্যবসায়ির নিকট থেকে ২ লক্ষ টাকা দাদন নিয়ে ৯ লক্ষ টাকা সুদ দেয়ার পরেও চেকের মামলার হুমকীর মধ্যে দিনাতিপাত করছেন মন্ডল জুয়েলার্সের মালিক হুুমায়ন, ওই দাদন ব্যবসায়ি সম্প্রতি রাস্তা থেকে জোর করে তার একটি ট্রাক্টর আটক করে সুদের সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা দাবী করে তা আদায় করার চেষ্টা চালায়। এ ছাড়া তার খপ্পরে পড়ে অনেকেই সর্বশান্ত হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।
বেশ কিছু দাদন ব্যাবসায়ীগন প্রতি দিনের হিসাব নিকাশ প্রতিদিন করার জন্য লোক নিয়োগ করে উপজেলা সদরের বিভিন্ন মার্কেটে ভাড়া অফিস ঘর খুলে সন্ধ্যে বেলায় তাদের অর্থের হিসাব নিকাশ করে আসছেন। বর্তমানে উপজেলায় দাদন ব্যাসাটি যেন একটি বৈধ ব্যাবসায় পরিণত হয়েছে। দির্ঘদিন ধরে এই ব্যাবসা বেশ দাম্ভিক্যের সাথে চলতে থাকায় তাদের বিভিন্ন ধরণের হুমকী ধামকীর ভয়ে অনেকেই সর্বশান্ত হলেও মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা। বর্তমানে অনুসন্ধানে জানা গেছে খোদ উপজেলা সদরে দাম্ভিক্যের সাথে যারা দাদন ব্যাবসা চালিয়ে আসছেন তারা হলেন মিলন চৌধুরী, তুলশী পাড়ার আ: ছাত্তার, মজিবর রহমান, তার ছেলে রানা বাবু, জিয়া সরকার, ডাঙ্গাপাড়ার সাইফুল ইসলাম, বদিউল আলম তার ভাই বেলাল হোসেন, মানিকুড়া গ্রামের রানা, অগ্রণী ব্যাংকের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী মিঠু, মধইল বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পিয়ন নাজিমুদ্দীন।
এ ছাড়া মহিলা দাদন ব্যাবসায়ীর শীর্ষে রয়েছেন সদরের নাজমা খাতুন, রেবা খাতুন ও আইহাই ইউনিয়নের ভাবুক ভোতড়া পাড়ার জৈনক নুরুন্নাহার (রজলী)বেগম, তার খদ্দেরের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিরীহ শিক্ষকগন। দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা এদের দাদন ব্যাবসার খপ্পরে পড়ে অসংখ্য মানুষ এখন তাদের পরিবারের সকল সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব জীবনযাপন করছে। অপর দিকে বেশ কিছু চতুর ব্যাক্তি দাদন ব্যাসাটিকে বৈধ ব্যাবসায় রুপ দেয়ার কৌশল অবলম্বন করে বেশ কিছু সংগঠন তৈরী করে সামজ সেবা অফিস থেকে একটি করে রেজিষ্ট্রেশন নিয়ে সমাজের সেবা দুরের কথা প্রকাশ্যে তারা অফিস খুলে তাদের দাদন ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার সাধারণ মানুষ এই দাম্ভিক্য দাদন ব্যাবসায়ীদের কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আকুল আবেদন জানিয়েছেন।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:৫৫:৩৮ ● ৪৫৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ