
মো. মহসীন খান
ডিসেম্বর বাঙালির জীবনে গৌরব ও অহংকারের মাস। দিকে দিকে উড়তে থাকে বিজয়ের পতাকা। মহান এই মাসেই শত্রু-অধ্যুষিত বাংলার গ্রাম, শহর, বন্দর একে একে মুক্ত হতে শুরু করে। প্রতিদিন নতুন নতুন অঞ্চল মুক্ত হয়ে বাঙালির বিজয় নিশ্চিত হয়, পরাজয় ঘটে পাকিস্তান ও তাদের সহযোগী রাজাকারদের।
আজ ১৩ ডিসেম্বর, শনিবার। ১৯৭১ সালের এই দিনে যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে সোভিয়েত ইউনিয়নের তৃতীয় দফা ভেটো বাংলাদেশের চূড়ান্ত বিজয়কে আরও ত্বরান্বিত করে। সে সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্মতি আদায়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।
এই দিনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ভেটো করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। এতে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায় এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয় আরও কাছে এগিয়ে আসে।
সোভিয়েত ভেটোর পর যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করে, সোভিয়েত ইউনিয়ন যদি পাকিস্তানের অখণ্ডতা সমর্থন করে ভারতকে যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ না দেয়, তবে রুশ-মার্কিন শান্তি বৈঠকে অংশ নেবে না প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন। একই দিনে মার্কিন সপ্তম নৌবহর সিঙ্গাপুর উপকূলে এসে অপেক্ষমাণ অবস্থানে থাকে।
বাংলাদেশে পাকিস্তানি প্রশাসনের অধীনস্ত বেসামরিক কর্মকর্তারা একের পর এক পদত্যাগ করতে শুরু করেন। আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনী আরও সাঁড়াশি আক্রমণ চালায়। এতে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসররা কোণঠাসা হয়ে পড়ে এবং বিস্তীর্ণ এলাকায় মুক্তিবাহিনীর মুখোমুখি টিকতে না পেরে ঢাকায় অবরুদ্ধ অবস্থায় ফিরে আসে।
দুদিন বিরতির পর ১৩ ডিসেম্বর ভারতীয় বিমানবাহিনী ঢাকার আকাশে পুনরায় আক্রমণ শুরু করে। কুর্মিটোলা সেনানিবাসে ব্যাপক বোমাবর্ষণ হয়। একই সঙ্গে গভর্নর হাউজে (বর্তমান বঙ্গভবন) বোমা নিক্ষেপ করা হয়, যাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। গভর্নর হাউজের কর্মকর্তারা মাটির নিচে নির্মিত শেল্টারে আশ্রয় নিয়ে প্রাণরক্ষা করেন।
-চলবে
লেখক: শিক্ষক ও সাংবাদিক