বুধবার ● ১০ ডিসেম্বর ২০২৫

বিজয়ের পথে ১০ ডিসেম্বর সরঞ্জাম ধ্বংসের নির্দেশ দিয়ে আত্মসমর্পণে প্রস্তুত পাকিস্তান সরকার

হোম পেজ » মুক্তিযুদ্ধ » বিজয়ের পথে ১০ ডিসেম্বর সরঞ্জাম ধ্বংসের নির্দেশ দিয়ে আত্মসমর্পণে প্রস্তুত পাকিস্তান সরকার
বুধবার ● ১০ ডিসেম্বর ২০২৫


 

ছবিটির সংগৃহীত

মো. মহসীন খান

ডিসেম্বর বাঙালির জীবনে গৌরব ও অহংকারের মাস। চারদিকে উড়তে থাকে বিজয়ের পতাকা। একে একে মুক্ত হতে থাকে শত্রুকবলিত বাংলার গ্রাম, শহর ও বন্দর। প্রতিদিনই যুক্ত হতে থাকে নতুন নতুন মুক্তাঞ্চল- বিজয়ের পথে অগ্রযাত্রা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

আজ ১০ ডিসেম্বর, বুধবার। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের টানা আক্রমণে ভেঙে পড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মনোবল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসতে থাকে একের পর এক বিজয়ের খবর। স্বাধীন বাংলাদেশের লালসবুজ পতাকা পতপত করে উড়তে থাকে সর্বত্র।

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিতাড়িত পাক সেনারা ঢাকায় ফেরার চেষ্টা করলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের সব পথই বন্ধ হয়ে যায়। মুক্তিবাহিনী দেশের অধিকাংশ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর ঢাকাকে চূড়ান্ত লক্ষ্য হিসেবে সামনে নেয়। ঢাকার তেজগাঁও, ফরিদপুর ও আশপাশের এলাকাগুলোতে বিমান হামলা জোরদার করা হয়।

টাঙ্গাইল মুক্ত হওয়ার পর কাদেরিয়া বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকার দিকে অগ্রসর হন। একই দিনে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রথম দল ঢাকায় প্রবেশ করে। পিছু হটার সময় পাক বাহিনী ভৈরব সেতু ধ্বংস করে দেয়, তবে মুক্তিবাহিনী দ্রুত ভৈরব শহর মুক্ত করে। হেলিকপ্টারের সাহায্যে মেঘনা নদী অতিক্রম করে মুক্তিবাহিনী পশ্চিম তীরে অবস্থান নেন এবং সেখান থেকেই ঢাকায় চূড়ান্ত আক্রমণের প্রস্তুতি চলে।

ঢাকায় আন্তর্জাতিক রেডক্রস হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল (বর্তমান রূপসী বাংলা হোটেল) ও হলি ফ্যামিলি হাসপাতালকে ‘নিরাপদ এলাকা’ ঘোষণা করে বিদেশিদের নিরাপত্তায় রাখে।

১০ ডিসেম্বর থেকেই পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি শুরু করে। এদিন পাকিস্তান সরকার পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান লে. জেনারেল এ এ কে নিয়াজীকে প্রয়োজন মনে করলে আত্মসমর্পণের অনুমতি দেয় এবং সামরিক সরঞ্জাম ধ্বংসের নির্দেশ পাঠায়।

এদিন আন্তর্জাতিক পরিসরেও উত্তেজনা বেড়ে যায়। পাক বাহিনীকে সহায়তা করতে মার্কিন সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগরের দিকে অগ্রসর হয় এবং সিকিম–ভুটান সীমান্তে চীনা সেনা তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। এরই মধ্যে যৌথবাহিনী দ্রুতগতিতে ঢাকার নিকটে পৌঁছে যায় এবং মিত্রবাহিনী হেলিকপ্টারে নরসিংদীর রায়পুরায় সেনা নামাতে থাকে। ঢাকাকে মুক্ত করাই ছিল একমাত্র লক্ষ্য।

এ সময় ঢাকার পাক ক্যাম্পগুলোতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলা অব্যাহত থাকে।

-(চলবে)

লেখক: শিক্ষক ও সাংবাদিক

বাংলাদেশ সময়: ১২:০৪:৩৪ ● ৩৯ বার পঠিত