কথোপকথনের অডিও ভাইরাল রাঙ্গাবালীতে শ্রমিক দলের আহ্বায়ক জুয়েলের বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ

হোম পেজ » পটুয়াখালী » কথোপকথনের অডিও ভাইরাল রাঙ্গাবালীতে শ্রমিক দলের আহ্বায়ক জুয়েলের বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ
বুধবার ● ৫ নভেম্বর ২০২৫


 

রাঙ্গাবালী উপজেলা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক বদরুল জামান জুয়েল

সাগরকন্যা নিজস্ব প্রতিবেদক

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক বদরুল জামান জুয়েলের বিরুদ্ধে কমিটির পদ বাণিজ্যের অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি কথোপকথনের অডিও ভাইরাল হয়, যেখানে শ্রমিক দলের কমিটিতে পদ দেওয়ার বিনিময়ে টাকা লেনদেন এবং পরবর্তীতে সুদসহ টাকা ফেরত চাওয়ার বিষয়টি শোনা যায়। অডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়।

অভিযোগ অনুযায়ী, উপজেলা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক মো. বদরুল জামান জুয়েল বিভিন্ন নেতাকর্মীর কাছ থেকে কমিটিতে পদ দেওয়ার কথা বলে মোবাইল ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা নিয়েছেন। কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ এক কর্মী টাকা ফেরত চান এবং কথোপকথনের অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।

ভাইরাল হওয়া অডিওতে বদরুল জামান জুয়েল ও ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়ন শ্রমিক দলের নবগঠিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল হাওলাদারের মধ্যে টাকার হিসাব-নিকাশ ও সুদসহ ফেরত চাওয়ার প্রসঙ্গ শোনা যায়। সেখানে বদরুল জামান জুয়েল বলেন, আমিতো পারি নাই, এখন কী করব, আপনার জিনিস (টাকা) রাইখা লাভ আছে? জবাবে জুয়েল হাওলাদার বলেন, আমার টাকা দুই বছর কেন রাখছেন? আপনি এখন কত টাকা ফেরত দিছেন? তখন বদরুল জানান, আমি ১০ হাজার টাকা দিছি। জুয়েল হাওলাদার ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, চালিতাবুনিয়া থেকে যে টাকা দিছি, সে টাকাও লাভসহ ফেরত দিতে হবে। দুই বছরের লাভ দিতে হবে। উত্তরে বদরুল জামান বলেন, সে টাকাও কি চান? সুদাসলে কত চান বলেন, আমি এখনই দিয়ে দিব।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ইউনিয়ন কমিটির বিভিন্ন পদে দায়িত্ব দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বদরুল জামান জুয়েল একাধিক নেতাকর্মীর কাছ থেকে নগদ ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু গত ২৮ অক্টোবর ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের ঘোষিত ৪১ সদস্যের শ্রমিক দল কমিটিতে তাঁদের কাউকেই কাঙ্ক্ষিত পদে রাখা হয়নি। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা টাকা ফেরত দাবি করেন।

অডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করা হয়। প্রথমে টাকা ফেরতের বিষয়টি স্বীকার করলেও পরে বদরুল জামান জুয়েল আর কোনো যোগাযোগ করেননি বলে অভিযোগ ওঠে।

ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের নবগঠিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল হাওলাদার বলেন, উপজেলা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক বদরুল জামান জুয়েল প্রায় দুই বছর আগে কমিটিতে পদ দেওয়ার আশ্বাসে তার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা এবং চালিতাবুনিয়া ইউনিয়ন কমিটিতে পদ পাওয়ার আশায় তার সহযোগীদের কাছ থেকে আরও ৪০ হাজার টাকা নেন। এছাড়া বহু নেতাকর্মীর কাছ থেকেও একইভাবে টাকা নিয়েছেন।

কোড়ালিয়া গ্রামের মাসুদ হাওলাদার অভিযোগ করেন, সাধারণ সম্পাদকের পদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর কাছ থেকে ৪৭ হাজার টাকা নেওয়া হয়, কিন্তু নতুন কমিটিতে তাঁকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।

উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাকিল মাহমুদ জানান, সভাপতির পদ দেওয়ার আশ্বাসে বিভিন্ন সময় প্রায় দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়েছেন বদরুল জামান জুয়েল। এছাড়া নয়াভাঙ্গুণী গ্রামের রিয়াদ আনসারি ও তিল্লা গ্রামের কাওসার আকনের কাছ থেকেও ৫ হাজার করে টাকা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগকারীরা জানান, বিষয়টি লিখিতভাবে শ্রমিক দলের পটুয়াখালী জেলা সভাপতি বরাবর পাঠানো হয়েছে। তাঁরা বিষয়টি তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত উপজেলা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক বদরুল জামান জুয়েল ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে দাবি করেন, তাঁকে জড়িয়ে ‘দলীয় পদ বিক্রি’ ও ‘লেনদেন সংক্রান্ত অডিও’ নিয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ ও পোস্ট প্রচার করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বানোয়াট।

তিনি আরও বলেন, আমার ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং রাজনৈতিক সম্মানহানি ঘটানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে। আমি স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, আমি কখনোই দলীয় পদ দেওয়ার নামে কারও কাছ থেকে কোনো অর্থ গ্রহণ করিনি বা কোনো অনৈতিক লেনদেনে জড়িত নই। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত কথিত অডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি ভুয়া ও বিকৃত ক্লিপ, যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক নেই। এটি আমার ও আমার সংগঠনের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর একটি ঘৃণিত প্রয়াস। এ ধরনের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালিয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল সংগঠনের ঐক্য নষ্ট ও আমাকে হেয় করার চেষ্টা করছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯:৩৯:৩৩ ● ৩৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ