
শনিবার ● ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ফকির দুর্ব্বিন শাহ: রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত লোকসংগীত সাধক
হোম পেজ » সর্বশেষ » ফকির দুর্ব্বিন শাহ: রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত লোকসংগীত সাধক
মীর আমান মিয়া লুমান, সাগরকন্যা প্রতিবেদক, ছাতক (সুনামগঞ্জ)
বাংলার লোকসংগীতের উজ্জ্বল নক্ষত্র ফকির দুর্ব্বিন শাহ। তিনি শুধু বাউল ছিলেন না, ছিলেন সুফি সাধক, দার্শনিক ও মানবতার বাণীবাহক। ১৯২১ সালের ২ নভেম্বর সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নোয়ারাই গ্রামের তারামনি টিলায় জন্ম নেন তিনি। পিতা সুফি সাধক সফাত আলী শাহ ও মাতা হাসিনা বানুর আধ্যাত্মিক পরিবেশে বেড়ে ওঠেন দুর্ব্বিন শাহ।
মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও সঙ্গীত, আধ্যাত্মিকতা ও দর্শনে ছিলেন অসাধারণ। কৈশোরে আখড়ায় গান গেয়ে পরিচিতি পান। তিনি ছিলেন ‘মালজোড়া গানের জনক’, যেখানে প্রেম, দেহতত্ত্ব, সুফি দর্শন ও মানবতাবাদ মিলেমিশে আছে।
জীবদ্দশায় এক হাজারেরও বেশি গান রচনা করেন তিনি। এর মধ্যে চার শতাধিক প্রকাশিত হয়েছে গ্রন্থাকারে। তাঁর কালজয়ী গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- নামাজ আমার হইলো না আদায়, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি, ছাড়িয়া যাইও না বন্ধু রে, আমার অন্তরায় আমার কলিজায়।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর জাগরণী গান ‘চল রে ভাটি দেশে, যাইয়া হাওরে’ মুক্তিকামী মানুষকে উজ্জীবিত করে। অস্ত্র হাতে না নিয়েও গানের শক্তিতে সংগ্রামী জনতার প্রেরণা হয়ে ওঠেন তিনি।
১৯৬৭ সালে কিংবদন্তি শিল্পী শাহ আবদুল করিমের সঙ্গে লন্ডনে গান পরিবেশন করে পান ‘জ্ঞানের সাগর’ উপাধি। ঋত্বিক ঘটকের চলচ্চিত্র ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’-তেও ব্যবহৃত হয় তাঁর গান।
১৯৭৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন এই মরমি সাধক। মৃত্যুর পাঁচ দশক পরেও ছাতকের দুর্ব্বিন টিলায় প্রতিবছর অসংখ্য ভক্ত ও অনুরাগী গান গেয়ে তাঁকে স্মরণ করেন।
তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে প্রেমসাগর পল্লীগীতি, পাক বঙ্গ ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ গীতি, আল্লামা দুর্ব্বিন শাহ, ফকির দুর্ব্বিন শাহ এবং দুর্ব্বিন শাহ সমগ্র। তাঁর ভক্ত সুমনকুমার দাশ রচিত ‘দুর্ব্বিন শাহ সমগ্র’ গ্রন্থ বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হয় ২০২৩ সালে।
তবু প্রশ্ন থেকে যায়, লালন, হাসন রাজা ও শাহ আবদুল করিম রাষ্ট্রীয় সম্মান পেলেও বাংলার লোকসংগীতে বিরাট অবদান রাখা ফকির দুর্ব্বিন শাহ কেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত?
বাংলাদেশ সময়: ১০:৪৬:৫৪ ● ৯৩ বার পঠিত