মহানবী (সা.) এর আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে করোনা প্রতিরোধ

প্রথম পাতা » ইসলামী জীবন » মহানবী (সা.) এর আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে করোনা প্রতিরোধ
রবিবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২০


প্রতীকী ছবি

আজ সমগ্র বিশ্ব করোনা ভাইরাসের কড়াল থাবায় বিপর্যস্ত। প্রতিদিন বাড়ছে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা, সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লাশের সংখ্যা। আর যারা সুস্থভাবে বেঁচে আছে তারা ঘরে বন্দী। সবার মাঝে বিরাজ করছে ভয়, শঙ্কা আর অনিশ্চয়তা।
ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যুগে যুগে পৃথিবীতে অসংখ্য মহামারীর প্রাদুর্ভাব হয়েছে। যার প্রভাব বা ক্ষয়ক্ষতি মানবসভ্যতাকে বারবার নাড়িয়ে দিয়েছে। স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, হে মানবজাতি তোমাদের এই সভ্যতা সাম্রাজ্যের উৎকর্ষতা তোমাদের নিরাপত্তা দিতে যথেষ্ট নয়। মানবজাতির অসহায়ত্ব প্রমাণ করেছে মানবজাতির উদ্ভাবিত বিজ্ঞান মহান সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টির মুখাপেক্ষী। প্রাচীনকালে আধুনিক ডিজিটাল চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিলনা। তাই তখনকার মহামারীতে মৃত্যুর হার বেশি ছিল। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানের এই চরম উৎকর্ষতার যুগে এক লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু মানবসভ্যতাকে আরেকবার চোখে আঙ্গুলদিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আমরা কতটা অসহায়। শুধু সতর্কতা, নির্দেশনা, আইনের প্রয়োগ করা সত্ত্বেও আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে আমাদের জীবন যাপন কতটা বেপরোয়া । ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং আধ্যাত্মিক জীবনে আমাদের বেপরোয়া জীবন যাপন ধীরেধীরে করোনা ভাইরাসকে আরো ভয়াবহ করে তুলছে।

প্রতিদিন মোবাইল ফোনে সবজান্তা গুগলের নোটিফিকেশন, কিংবা ফেসবুকের নিউজফিড, সংবাদপত্রের পাতা কিংবা দুরদর্শন এর পর্দায় সর্বত্র করোনার ভয়াবহ সরব উপস্থিতি। রাজনৈতিক-সামাজিক- বিনোদন ক্ষেত্র পেরিয়ে করোনার উপস্থিতি এখন মানুষের মনোজগতে। কিন্তু এত ভয়াবহ অবস্থা সত্ত্বেও আমরা কি করোনার  “করো-না” বিধিমালা মেনে চলছি?
কর্তৃপক্ষের বারবার সর্তকতা সত্ত্বেও আমরা ঘরে থাকার বদলে বিভিন্ন অজুহাতে রাস্তাঘাটে বের হয়ে পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলছি। প্রশাসন যখন বিভিন্ন এলাকার নিরাপত্তার কথা ভেবে সংক্রমণ রোধ করার চেষ্টা করছে সেখানে আমরা পার্সেল করার ট্রাক কিংবা মাছের ড্রামে লুকিয়ে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাওয়ার চেষ্টা করছি। পুরো বিশ্ব যখন থমকে গেছে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে, সেখানে আমাদের কোন কোন অতি ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাই বলছে “এই রোগ অমুসলিমদের জন্য আমরা মুসলমানদের কিছুই হবেনা” আবার কেউ বলছে “আল্লাহ  চাইলে সুস্থ থাকবো না হলে মরে যাবো এত কিছু মেনে কোন কাজ নাই”। ভাব এমন যে আল্লাহতা’লা ইলহাম করে জানিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মহানবী (সা.)এর মহামারীর দিনগুলোতে শিক্ষা ও আদর্শ কি ছিল। হুযুর (সা.) মহামারীর দিনগুলোতে মুসলমানদেরকে যেসব নির্দেশনা দিয়েছিলেন এই লেখায় সেগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

১। ভ্রমণ নিষিদ্ধ এবং হোম কোয়ারেন্টাইনঃ

মহামারীর দিনগুলোতে হযরত রসুলুল্লাহ (সা.) এর প্রথম এবং প্রধান নির্দেশনা ছিল, এ দিনগুলোতে যেন মানুষ এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ভ্রমণ না করে।
حَفْصُ بْنُ عُمَرَ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ قَالَ أَخْبَرَنِي حَبِيبُ بْنُ أَبِي ثَابِتٍ قَالَ سَمِعْتُ إِبْرَاهِيمَ بْنَ سَعْدٍ قَالَ سَمِعْتُ أُسَامَةَ بْنَ زَيْدٍ يُحَدِّثُ سَعْدًا عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّه“ قَالَ إِذَا سَمِعْتُمْ بِالطَّاعُونِ بِأَرْضٍ فَلاَ تَدْخُلُوهَا وَإِذَا وَقَعَ بِأَرْضٍ وَأَنْتُمْ بِهَا فَلاَ تَخْرُجُوا مِنْهَا فَقُلْتُ أَنْتَ سَمِعْتَه“ يُحَدِّثُ سَعْدًا وَلاَ يُنْكِرُه“ قَالَ نَعَمْ.

উসামাহ ইবনু যায়দ (রা.) থেকে বর্ণিতঃ: তিনি সা‘দ (রা.) -এর কাছে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহিওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেনঃ যখন তোমরা কোন অঞ্চলে প্লেগের বিস্তারের সংবাদ শোন, তখন সেই এলাকায় প্রবেশ করোনা। আর তোমরা যেখানে অবস্থান করো সেখানে প্লেগের বিস্তার ঘটলে সেখান থেকে বেরিয়ে যেওনা (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২০৪)
সহিহ বুখারী, হাদিস নং৫৭২৮ হাদিসের এই শিক্ষা মহামারীর সময় সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী একটি পদক্ষেপ। মহামারী করোনার এই ভয়াবহ অবস্থায় আমাদের সকলের উচিত নিজের, পরিবারের, সমাজের নিরাপত্তার কথা ভেবে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় না যাওয়া। বরং এই অবস্থায় আমাদের সকলের নিজের ঘরে অবস্থান করে সংক্রমণ রোধে সাহায্যকারী ভূমিকা রাখা উচিত।

২। সামাজিক দূরত্ব বজায় এবং আইসোলেশনঃ

মহামারীর দিনগুলোতে হুযুর (সা.) এর অন্যতম আদর্শ ছিল সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা।

حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ رَافِعٍ، حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ، عَنْ يَعْلَى بْنِ عَطَاءٍ، عَنْ رَجُلٍ، مِنْ آلِ الشَّرِيدِ يُقَالُ لَهُ عَمْرٌو عَنْ أَبِيهِ قَالَ كَانَ فِي وَفْدِ ثَقِيفٍ رَجُلٌ مَجْذُومٌ فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ “‏ ارْجِعْ فَقَدْ بَايَعْنَاكَ ‏”‏ ‏.‏

শারীদ বিন সুওয়ায়দ (রা.), থেকে বর্ণিতঃ:

সাকীফ গোত্রের প্রতিনিধি দলে এক কুষ্ঠরোগী ছিল (যিনি মহানবী (সা.) এর হাতে বয়াত করতে ইচ্ছুক ছিলেন)। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট লোক পাঠিয়ে বলেনঃ তুমি ফিরে যাও, আমি তোমার বাইয়াত করেছি।
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৫৪৪

হুজুর (সা.) এর এই নির্দেশনা অত্যন্ত প্রজ্ঞাপূর্ণ একটি শিক্ষা। কারণ অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শে একজন সুস্থ ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। তাই তিনি(সা.)  আইসোলেশনর নির্দেশনা দিয়েছেনঃ-

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ مُسْهِرٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَمْرٍو، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ “‏ لاَ يُورِدُ الْمُمْرِضُ عَلَى الْمُصِحِّ ‏”‏ ‏.‏

আবূ হুরায়রাহ (রা.), থেকে বর্ণিতঃ: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অসুস্থকে সুস্থদের সংস্পর্শে নেয়া উচিত নয়। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৫৪১

এমনকি হুযুর (সা.) অসুস্থ পশু সুস্থ পশু থেকে আলাদা রাখার নির্দেশ দিয়েছেনঃ

قَالَ أَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ تُورِدُوا الْمُمْرِضَ عَلَى الْمُصِحِّ.

আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিতঃ:

আবূ সালামাহ ইবনু ‘আবদুর রহমান বলেন, আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে শুনেছি, নবী (সা.) বলেছেনঃ রোগাক্রান্ত উট নীরোগ উটের সাথে মিশ্রিত করবে না। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৪৭)
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৭৭৪

বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সবচেয়ে জরুরী বিষয় হলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সাথে সাথে অসুস্থ ব্যক্তিদের আলাদা আইসোলেশনে রাখা। কিন্তু প্রশাসন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সেনাবাহিনী জেল-জরিমানা করেও মানুষকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাতে পারছেনা। কিন্তু হুজুর (সা.) এর যুগে এবং তার খলিফাদের যুগের দিনগুলোতে মুসলমানরা সামাজিক দূরত্ব এমনভাবে বজায় রাখতেন মনে হতো এটি শরীয়তের অংশ যার অনুমান এই হাদীস থেকে করা যায়ঃ-

و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي بَكْرِ بْنِ حَزْمٍ عَنْ ابْنِ أَبِي مُلَيْكَةَ أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ مَرَّ بِامْرَأَةٍ مَجْذُومَةٍ وَهِيَ تَطُوفُ بِالْبَيْتِ فَقَالَ لَهَا يَا أَمَةَ اللهِ لَا تُؤْذِي النَّاسَ لَوْ جَلَسْتِ فِي بَيْتِكِ فَجَلَسَتْ فَمَرَّ بِهَا رَجُلٌ بَعْدَ ذَلِكَ فَقَالَ لَهَا إِنَّ الَّذِي كَانَ قَدْ نَهَاكِ قَدْ مَاتَ فَاخْرُجِي فَقَالَتْ مَا كُنْتُ لِأُطِيعَهُ حَيًّا وَأَعْصِيَهُ مَيِّتًا.

ইবনু আবি মুলায়কা (রা.) থেকে বর্ণিতঃ:
বায়তুল্লাহর তাওয়াফরত কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত এক মহিলার নিকট দিয়ে উমার ইবনুল খাত্তাব (রা.) যাচ্ছিলেন। তখন তিনি তাঁকে বললেন, হে আল্লাহর দাসী, অন্য মানুষকে কষ্ট দিও না। হায়, তুমি যদি তোমার বাড়িতেই বসে থাকতে। পরে উক্ত মেয়েলোকটি নিজের বাড়িতেই বসে থাকত। একদিন একজন লোক তাকে বললঃ যিনি তোমাকে বাড়ির বাহিরে যেতে নিষেধ করেছেন, তিনি ইন্তিকাল করেছেন। এখন তুমি বের হয়ে আসতে পার। মেয়েটি বলল, জীবদ্দশায় তাঁকে মানব, আর মৃত্যুর পর অবাধ্য হব, আমি এমন স্ত্রীলোক নই।
মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস নং ৯৪৫

৩। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা

আমরা বাঙালিরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারটা শুধুমাত্র বইয়ের পাতায় থাকার জন্য, এটা বিশ্বাস করি। এখানে সেখানে ময়লা ফেলা, যেখানে সেখানে থু-থু কফ ফেলা, অরক্ষিত হাচি কাশি দেয়া আমাদের নিত্যকার কাজ। আর হাত ধৌত করার মত সাধারণ জ্ঞানের জন্য আমাদের দেশে কর্মসূচি হাতে নিতে হয়।  কিন্তু আজ করোনার জন্য বাধ্য হয়ে হলেও যথাযথভাবে হাত ধৌত করা, ঘরবাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখাতথা স্বাস্থ্যবিধি আমরা পালন করছি এবং শিখছি। কিন্তু এই সকল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা ইসলামের অন্যতম মৌলিক শিক্ষা। একটি মুসলমান ছোট বাচ্চাও এটা বলতে পারবে যে “পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক”। প্রত্যেক নামাযের পূর্বে একজন মুসলমান অজু করে পাক-পবিত্র হয়ে যাবে। তিনি মাথা থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত প্রতি অঙ্গ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করেন। হুযুর (সা.) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সাথে সাথে সামাজিক স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলতেন। হুযুর (সা.) যখন হাই তুলতেন বা হাচি দিতেন তখন কাপড় বা হাত দ্বারা মুখমণ্ডল ঢাকতেন। কেননা হাচি কাশির মাধ্যমে মাধ্যমে হাজারো রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। (শামায়েলে তিরমিজি)

এককথায় মুসলমান জাতি এমন এক জাতি যাদের আধ্যাত্মিকতার সাথে সাথে শারীরিক ও আত্মিক পরিছন্নতা শেখানো হয় এবং পরিচ্ছন্ন থাকতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। যেভাবে কোরআন বলছেঃ

إِنَّ اللَّـهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ
অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তওবাকারীগন কে এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন। (সূরা বাকারা-২২৩)
সুতরাং স্বাস্থবিধী মেনে চলার মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ইসলামের মৌলিক শিক্ষা। সকল মুসলমানদের উচিত এই শিক্ষার অনুসরণের মাধ্যমে রোগ জীবাণুকে দূরে রাখা এবং সুস্থ থাকা।

৪। চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা

ইসলাম সব ধর্ম অপেক্ষা সব থেকে বেশি বাস্তবিক ধর্ম হিসেবে স্বীকৃত। ইসলাম মানব জীবনকে কঠিন বা বন্দীশালা বানানোর জন্য প্রবর্তিত হয়নি বরং মানুষের জীবনকে সহজ সুন্দর সাবলীল করতে ইসলাম প্রবর্তিত হয়েছে। এক কথায় ইসলাম বাস্তবিক উপায়-উপকরণ অস্বীকার করে না। করোনার মত মানবজাতির এই মহা পরীক্ষার দিনে কিছু গোঁড়া মানসিকতার মানুষ চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে প্রচার করে বেড়ায় যে এটি অমুক ধর্মের জন্য আযাব আমাদের কিছু হবেনা।  কিন্তু হাদীস শরীফে উদ্ধৃত হয়েছে,

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَهِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنْ زِيَادِ بْنِ عِلاَقَةَ، عَنْ أُسَامَةَ بْنِ شَرِيكٍ، قَالَ شَهِدْتُ الأَعْرَابَ يَسْأَلُونَ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ أَعَلَيْنَا حَرَجٌ فِي كَذَا أَعَلَيْنَا حَرَجٌ فِي كَذَا فَقَالَ لَهُمْ ‏”‏ عِبَادَ اللَّهِ وَضَعَ اللَّهُ الْحَرَجَ إِلاَّ مَنِ اقْتَرَضَ مِنْ عِرْضِ أَخِيهِ شَيْئًا فَذَاكَ الَّذِي حَرَجٌ ‏”‏ ‏.‏ فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ عَلَيْنَا جُنَاحٌ أَنْ نَتَدَاوَى قَالَ ‏”‏ تَدَاوَوْا عِبَادَ اللَّهِ فَإِنَّ اللَّهَ سُبْحَانَهُ لَمْ يَضَعْ دَاءً إِلاَّ وَضَعَ مَعَهُ شِفَاءً إِلاَّ الْهَرَمَ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا خَيْرُ مَا أُعْطِيَ الْعَبْدُ قَالَ ‏”‏ خُلُقٌ حَسَنٌ ‏”‏ ‏.‏

উসামাহ বিন শরীক (রা.) থেকে বর্ণিতঃ:
আমি উপস্থিত থাকা অবস্থায় বেদুইনরা নবী (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলো, এতে কি আমাদের গুনাহ হবে, এতে কি আমাদের গুনাহ হবে? তিনি বলেনঃ আল্লাহর বান্দাগণ! কোন কিছুতেই আল্লাহ গুনাহ রাখেননি, তবে যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের ইজ্জতহানি করে তাতেই গুনাহ হবে। তারা বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা যদি (রোগীর) চিকিৎসা না করি তবে কি আমাদের গুনাহ হবে? তিনি বলেনঃ আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা চিকিৎসা করো। কেননা মহান আল্লাহ বার্ধক্য ছাড়া এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার সাথে প্রতিষেধকেরও ব্যবস্থা করেননি (রোগও রেখেছেন, নিরাময়ের ব্যবস্থাও রেখেছেন)। তারা বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! বান্দাকে যা কিছু দেয়া হয় তার মধ্যে উত্তম জিনিস কী? তিনি বলেনঃ সচ্চরিত্র।
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৪৩৬

নবী করীম (সা.) রোগ মুক্তির উপায় স্পষ্ট করতে আরও বলেনঃ-
حَدَّثَنَا هَارُونُ بْنُ مَعْرُوفٍ، وَأَبُو الطَّاهِرِ، وَأَحْمَدُ بْنُ عِيسَى، قَالُوا حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي عَمْرٌو، - وَهُوَ ابْنُ الْحَارِثِ - عَنْ عَبْدِ رَبِّهِ بْنِ سَعِيدٍ، عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ ‏ “‏ لِكُلِّ دَاءٍ دَوَاءٌ فَإِذَا أُصِيبَ دَوَاءُ الدَّاءِ بَرَأَ بِإِذْنِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ ‏”‏ ‏.‏

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিতঃ:

হারূন ইবনু মা‘রূফ এবং আবূ তাহির ও আহমাদ ইবনু ‘ঈসা (রহ.) ……জাবির (রা.) এর সানাদে রসূলুল্লাহ (সা.) হতে বর্ননা করেন যে, তিনি বলেছেন-প্রতিটি ব্যাধির প্রতিকার রয়েছে। অতএব রোগে যথাযথ ঔষধ প্রয়োগ করা হলে আল্লাহর ইচ্ছায় আরোগ্য লাভ হয়। (ই.ফা. ৫৫৫৩, ই.সে. ৫৫৭৮)
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৬৩৪

সুতরাং করোনার এই মহাবিপদে আমাদের সকলের উচিত সতর্কতা ও স্বাস্থবিধী পালনের সাথে সাথে চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

৫। ফ্রি মেডিকেল সেবা ও অসহায়দের সহায়তা

মহামারীর দিনগুলোতে মানুষের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা এবং মানবিক সহায়তা প্রদান অত্যন্ত জরুরি। কারণ আজকের বিশ্বে করানোর জন্য সকল কাজকর্ম বন্ধ। হাজারো দিন মজুর শ্রমিক মানুষ কর্মহীন পড়েছে। এই অবস্থায় মানুষকে ঘরে রাখতে হলে তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস এবং চিকিৎসা সেবা তাদের ঘরের দোরগোড়ায় নিশ্চিত করতে হবে। না হলে মানুষ বাধ্য হয়ে ঘর ছেড়ে বের হবে। তাই বলা যায় সংক্রমণ রোধ করতে মানবিক সহায়তা এবং চিকিৎসা সেবা মানুষের দোড়গোড়ায় নিশ্চিত করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
ইসলামে বায়তুলমালের পথ চলা হুজুর (আ.) যুগে হয়েছিল কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বায়তুলমালের কার্যক্রম উমর (রা.) এর যুগে হয়েছিল। হুজুর (সা.) এর যুগে এবং তার খলিফাদের যুগে বায়তুলমাল থেকে সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ, প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ, বিধবা এবং অন্যদের সাহায্য প্রদান করা হতো। যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা বিপদে মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া হতো। এমনকি রাতের আধারে মহামান্য খলিফা উমরের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার কথা ইতিহাস থেকে প্রমাণিত।
ইতিহাস থেকে জানা যায় যে হযরত উমার (রা.) সিরিয়া অভিমুখে যাত্রা করেছিলেন পথিমধ্যে তিনি কিছু খৃষ্টান ধর্মালম্বী কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত লোকদের সাথে মিলিত হন তাদের অবস্থা দেখে খলিফা উমর (রা.) সাথে সাথে আদেশ দিলেন যে তাদের জন্য যেন চিকিৎসা ব্যবস্থা করা হয়।

মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে রসুলল্লাহ (সা.) এর শিক্ষা অনুসরণের মাধ্যমে আমরা এক দিকে যেমন সংক্রমণ রোধ করতে পারি । অন্যদিকে এই আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ পেতে পারি।
তাই আসুন আমরা সবাই করোনার “করো-না” বিধি মেনে চলি। নিয়মিত হাত ধৌত করি, জীবন যাপনে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখি, নিজ নিজ ঘরে থাকি, নিজ নিজ সাধ্যমতো একে অপরকে সাহায্য করি। এবং সর্বোপরি সর্বশক্তিমান আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে বেশি বেশি দোয়ায় রত থাকি। তাহলে অতি শীঘ্রই এই মহামারী কড়াল গ্রাস থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

মসীহ উর রহমান

বাংলাদেশ সময়: ১৭:৩৮:০৯ ● ১৩২১ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ