কৃষকদের মানসম্মত আলুবীজ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার

প্রথম পাতা » জাতীয় » কৃষকদের মানসম্মত আলুবীজ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার
রবিবার ● ২৫ আগস্ট ২০১৯


কৃষকদের মানসম্মত আলুবীজ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥


দেশে মানসম্মত আলুবীজের চরম সঙ্কট বিরাজ করছে। এ অবস্থায় কৃষদের মাঝে বীজ আলু সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে পরিকল্পনা কমিশনে ‘মানসম্মত বীজ আলু উৎপাদন ও সংরক্ষণ এবং কৃষক পর্যায়ে বিতরণ জোরদারকরণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। আর তাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮৮ কোটি ২১ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি আলু রফতানি বৃদ্ধি পাবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় প্রকল্পটি উপস্থাপন করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন বাস্তবায়ন করবে। পরিকল্পনা কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আলু এদেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্য। বর্তমানে আলু উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। ইতিমধ্যে দেশের চাহিদা মিটিয়ে আলু রফতানি কার্যক্রম সীমিত পরিসরে শুরু হয়েছে। তবে রোগ মুক্ত এবং রফতানি উপযোগী জাতের বীজ আলুর অভাব, প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণের অপ্রতুলতা, অপর্যাপ্ত হিমাগার সুবিধা, প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের অভাব এবং দেশের অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থা আলু চাষাবাদে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দিয়েছে। দেশে বর্তমানে আলুর মোট উৎপাদন ১০৩ দশমিক ১৭ লাখ টন। এজন্য সাড়ে ৭ লাখ টন বীজ আলু চাহিদা রয়েছে। সরকারি সংস্থা বিএডিসি বীজ আলু চাহিদার মাত্র ৪ শতাংশ এবং বেসরকারি খাত হতে মাত্র ১ শতাংশ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। অবশিষ্ট ৯৫ শতাংশ বীজ আলু কৃষকরা নিজেরাই উৎপাদন করেন অথবা স্থানীয় উৎস হতে সংগ্রহ করছেন। যার গুণগত মান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি বিএডিসির ৩০টি বিদ্যমান আলুবীজ হিমাগারের মোট ধারণ সক্ষমতা ৪৫ হাজার ৫০০ টন। প্রস্তাবিত প্রকল্পটির মাধ্যমে বিএডিসির আলুবীজ বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মোট চাহিদার ৬ শতাংশ মানসম্মত বীজ আলু উৎপাদন, সংরক্ষণ এবং কৃষক পর্যায়ে বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় প্রধান যেসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে সেগুলো হচ্ছে, চারটি নতুন হিমাগার নির্মাণের মাধ্যমে বীজ আলুর ধারণ ক্ষমতা ৮ হাজার টন বৃদ্ধি করা হবে। এছাড়া বিদ্যমান ৩০টি হিমাগার সার্ভিসিং-ওভারহোলিং ও পুরাতন দুটি হিমাগার সংরক্ষণ ও আধুনিকায়ন করা হবে। তিনিটি অফিস ভবন, ২০ হাজার বর্গমিটার সটিং শেড, ২ হাজার রানিং মিটার সীমানা প্রাচীরসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করা হবে। এছাড়া ৩ দশমিক ৫৯ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ৬৭ লাখ ৪৮ হাজার চটের বস্তা, ৪ হাজারটি ত্রিপল, ৪১৪টি কৃষি, সেচ যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ক্রয়, দেড় হাজার প্রদর্শনী প্লট স্থাপন এবং ৮ হাজার ৪০০ চুক্তিবদ্ধ কৃষক, বীজ ডিলার, এনজিও কর্মী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
এদিকে প্রকল্পটি অনুমোদন প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বে রয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য মো. জাকির হোসেন আকন্দ। একনেকের জন্য তৈরি করা প্রকল্পের সার-সংক্ষেপে তিনি উল্লেখ করেছেন, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর ২ জানুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সুপারিশ অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশে মানসম্মত আলু বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ এবং কৃষক পর্যায়ে বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনায় বিএডিসির সক্ষমতা বাড়বে। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) এবং বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সাবেক সভাপতি ড. শামসুল আলম জানান, আলু ও পাট বীজসহ বিভিন্ন ফসলের উন্নত বীজের সংকট রয়েছে। ফলে খাদ্য উৎপাদন কম হওয়ার এটিও একটি অন্যতম কারণ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আলু বীজের ঘাটতি পূরণে অনেকটাই সহায়ক হবে। তবে চুক্তিবদ্ধ কৃষকদের মধ্যমে আলু বীজ উৎপাদন করা প্রয়োজন। এতে করে ওই কৃষকও শিখতে পারবেন। ফলে তারা নিজেদের জন্য উন্নত বীজ তৈরির পাশাপাশি ব্যবসায়িক ভিত্তিতে বীজ উৎপাদনে সক্ষম হবেন। কেননা বিএডিসির পক্ষে সব কৃষককে বীজ দেয়া সম্ভব নয়।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২১:১৫:৪৮ ● ৩১৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ