আমদানি-রফতানি বৃদ্ধি এবং সহজ করতে নির্মিত হচ্ছে বে টার্মিনাল

প্রথম পাতা » জাতীয় » আমদানি-রফতানি বৃদ্ধি এবং সহজ করতে নির্মিত হচ্ছে বে টার্মিনাল
বুধবার ● ৭ আগস্ট ২০১৯


আমদানি-রফতানি বৃদ্ধি এবং সহজ করতে নির্মিত হচ্ছে বে টার্মিনাল

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং সহজ করতে দেশের প্রথম বে টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ওই টার্মিনাল নির্মিত হবে। আগামী বছর থেকে বে টার্মিনালের মূল অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হচ্ছে। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। এটি নির্মাণ হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পাবে। বে টার্মিনালটিকে গভীর সমুদ্রবন্দরের বিকল্প এবং আগামীর বন্দর হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সাগরপারে গড়ে উঠছে বিধায় এটি হবে প্রকৃত সমুদ্রবন্দর। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আসা-যাওয়া জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভরশীল। নাইট নেভিগেশন করা যায় না।  কিন্তু নতুন বে টার্মিনালে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই জাহাজ ভিড়তে পারবে। পাশাপাশি বিদ্যমান বন্দরের চেয়ে বেশি ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে। সর্বোচ্চ ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজগুলো অনেক বেশি কনটেইনার বহন করতে পারবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে যেখানে মাত্র ১৯টি জাহাজ ভিড়তে পাওে, সেখানে বে টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৫টি জাহাজ বার্থিং নিতে পারবে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে বে টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে নির্মাণ করা হবে। সেজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ২০ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা (এক ডলার ৮৩ টাকা হিসেবে)। এ ক্ষেত্রে ‘পিএসএ সিঙ্গাপুর’কে প্রাথমিক বিনিয়োগকারী হিসেবে নির্বাচন করা হচ্ছে। প্রকল্পটির আনুমানিক অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছে ৫০ বছর এবং চুক্তির মেয়াদ ধরা হয়েছে ২৫-৫০ বছর। এটি পরবর্তী সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পূর্ণ করার সময় চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে। বিগত ২০১৩ সালে বে টার্মিনাল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্য জার্মান প্রতিষ্ঠান এইচপিসি এবং সেলহর্নকে যৌথভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট এবং লে আউট অনুযায়ী প্রস্তাবিত টার্মিনালটি সাগরের তীরে অবস্থিত এবং ড্রাফট ১২ মিটার হবে। অনধিক ২৮০ মিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট পোস্ট প্যানাম্যাক্স জাহাজ এখানে সরাসরি ভিড়তে পারবে। বে টার্মিনালটির ধারণক্ষমতা চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং থেকে নির্ধারণ করা হয়েছে। ফিজিবিলিটি স্টাডিতে বে টার্মিনালের জন্য এক হাজার ৫০০ মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল, এক হাজার ২২৫ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল-১ এবং ৮৩০ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল-২ নির্মাণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া তাতে মোট জেটির সংখ্যা ১৩টি, যার দৈর্ঘ্য থাকবে তিন হাজার ৫৫৫ মিটার। সাগরের ঢেউ থেকে টার্মিনালটি রক্ষা করার জন্য একটি ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট ব্রেকওয়াটার নির্মাণ করতে হবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের ইকুইপমেন্ট ফ্লিটে ‘কি গ্যান্ট্রি ক্রেন’ ১০টি, রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেন ৪১টি, আরএমজি একটি, মোবাইল হারবার ক্রেন তিনটি, স্ট্রাডল ক্যারিয়ার ৫১টি রয়েছে। তাতে চট্টগ্রাম বন্দর বছরে অতিরিক্ত ৭ লাখ টিইইউ’এস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম। তাছাড়া ইয়ার্ড বৃদ্ধির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের আরো ৩ লাখ টিইইউ’এস কনটেইনার হ্যান্ডলিং বৃদ্ধি পাবে। সেগুলোর পাশাপাশি পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও ওভারফ্লো কনটেইনার টার্মিনাল কার্যক্রম শেষে আরো চার লাখ ৫০ হাজার টিইইউ’এস কনটেইনার হ্যান্ডলিং সম্ভব হবে।
সূত্র আরো জানায়, ইতিমধ্যে বে টার্মিনালের জেটি ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ এবং অপারেশনের জন্য ৯টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রস্তাব পাওয়া গেছে। সেগুলোর মধ্যে কোরিয়া, ইন্ডিয়া, সিঙ্গাপুর, সউদি আরব, চিনা, ডেনমার্ক, এডিবিও রয়েছে। রয়েছে ভারতের আডানি গ্রুপও। বে টার্মিনালের সম্পূর্ণ এলাকা প্রায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বিধায় সেটি চাহিদা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে পিপিপি বা জিটুজি পদ্ধতিতে প্রস্তাব ও যোগ্যতার ভিত্তিতে বেসরকারি পার্টনার নিয়োগ করে বাস্তবায়ন সঙ্গত হবে বলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় মনে করছে। আগেই ব্যক্তিমালিকানাধীন ৬৮ একর জমি অধিগ্রহণ করে বে টার্মিনালের স্থাপনা নির্মাণ শুরু হয়েছে। তবে ঝুলে ছিল ৮০৩ একর সরকারি খাসজমি অধিগ্রহণের কাজ। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটি বে টার্মিনালের জন্য প্রস্তাবিত ৮০৩ একর খাসজমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দিয়েছে। ফলে এখন নির্মাণকাজ পুরোদমে শুরু করতে আর কোনো বাধা রইল না। ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বে টার্মিনাল নির্মিত হলে অপারেশনের ক্ষেত্রে বর্তমান সক্ষমতা তিন গুণ বেড়ে যাবে। এর ফলে আমদানি-রপ্তানি থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ আরো সহজে করা যাবে। সবচেয়ে বড় কথা, বড় জাহাজ আরো বেশি ভিড়তে পারবে।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:৫২:৪২ ● ৩৩৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ