আমতলী সদর ইউপি নির্বাচনে ত্রিমূখী লড়াই

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলী সদর ইউপি নির্বাচনে ত্রিমূখী লড়াই
শনিবার ● ২০ জুলাই ২০১৯


আমতলী সদর ইউপি নির্বাচনে ত্রিমূখী লড়াই

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

আমতলী উপজেলার আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বাকী আর মাত্র চার দিন। আগামী ২৫ জুলাই ভোট। প্রচার প্রচারনায় সর্বত্র ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। অলিগলি সর্বত্র চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা। দিন যতই ঘনিয়ে আসলে ততই উৎকন্ঠা বাড়ছে সাধারণ ভোটারদের মাঝে। ভোটাররাও কষছে নিখুত হিসেব নিকেশ, কাকে তারা পাঁচ বছরের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের শাসনের ভার দিবেন?
জানাগেছে, বরগুনার আমতলী উপজেলার আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদের ভোট গ্রহনের বাকী আর মাত্র চারদিন। ইতিমধ্যে প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা প্রচার প্রচারনায় ব্যস্ত সময় পাড় করছে। দম ফুরানোর ফুসরত নেই তাদের। বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ভোটারদের মন কারছেন তারা। কিন্তু মুখ খুলছে না সাধারণ ভোটার। বিভিন্ন প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনেরও অভিযোগ আছে। এ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ছয়জন চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেও মুল প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন তিনজনে। আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী সেচ্ছাসেবকলীগ সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহিদুল ইসলাম মিঠু মৃধা (নৌকা), আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী উপজেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি মোঃ মোতাহার উদ্দিন মৃধা (ঘোড়া) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ জালাল উদ্দিন ফকির (আনারস)। এ তিনজনের মধ্যেই হবে মুল প্রতিদ্বন্ধিতা। এ মধ্যে জাহিদুল ইসলাম মিঠু মৃধা ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে বিএনপি-জামায়াতের আহুত সরকারী বিরোধী আন্দোলনের প্রতিবাদ করতে গিয়ে নির্যাতনে স্বীকার হন। ওই সময় তাকে উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী জালাল উদ্দিন ফকিরের নেতৃত্বে শতাধিক সন্ত্রাসী কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছিল। সরকারের একান্ত প্রচেষ্টায় উন্নত চিকিৎসার কারনে বেঁচে যান তিনি। দলের পক্ষে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করায় ভাগিয়ে নেন আওয়ামীলীগের মনোনয়ন। তরুন নেতা হিসেবে তার জনপ্রিয়তা থাকলেও স্বজনদের কারনে তিনি  ভোটরদের মাঝে কিছু আতঙ্ক। বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ মোতাহার উদ্দিন মৃধা গত ৮ বছর এই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছেন। ইউনিয়নের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দান অনুদানের সফলতা থাকলেও তার শাসনামলে রয়েছে যথেষ্ট ব্যর্থতা। যথা সময়ে এ ইউনিয়নে নির্বাচন না হওয়ায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যে রয়েছে তীব্র ক্ষোভ। সাধারণ ভোটাররা মনে করেন যথাসময়ে নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা মুল কারিকর তিনি। তিনি আদালতে মামলা করে নির্বাচন হতে দেয়নি। তিনি আবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে এই ইউনিয়নে মামলা লেগেই থাকবে। এছাড়াও ৮ বছরের শাসনামলের ইউনিয়নে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ছিল ধীরগতি। এনিয়েও রয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ। উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ জালাল উদ্দিন ফকিরও রয়েছে ব্যর্থতা। তবে গত ৮ বছরে তার সেই ব্যর্থতা ভুলে গেছে সাধারণ মানুষ। সাধারণ ভোটাররা মনে করেন এই তিনজনের মাঝেই হবে মুল প্রতিদ্বন্ধিতা। প্রচার প্রচারনায় আওয়ামীলীগ ও স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী এগিয়ে থাকলেও বিএনপি প্রার্থীর প্রচারনায় কৌশল অবলম্বন করেছেন। তিনি ঢিলেতামে চালিয় যাচ্ছেন তার প্রচার প্রচারনা। তবে তিনি ভোট বিপ্লবের প্রতিক্ষায় রয়েছেন। সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে পারলে তার পক্ষে ভোট বিপ্লব হবে বলে তার কর্মী-সমর্থকরা ধারনা করেন। কিন্তু দৃশ্যমান প্রচার প্রচারনা না থাকায় তার দলের কর্মী-সমর্থকরা নৌকা ও ঘোড়া প্রতিকের পক্ষে কাজ করছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি জরিপে দেখাগেছে,৪৬ জন মন্তব্যদাতাদের মধ্যে আওয়ামীলীগ প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম মিঠু মৃধাকে ১৪, বিদ্রোহী প্রার্থী মোতাহার উদ্দিন মৃধাকে ৩ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জালাল উদ্দিন ফকিরকে ১৪ জনে সমর্থণ করেছে। এদিকে নির্বাচনে দিন যতই ঘনিয়ে আসলে ততই সাধারণ ভোটারদের মাঝে উৎকন্ঠা বেড়েই চললে। কেউ মুখ খুলছে না। কি হচ্ছে আমতলী সদর ইউনিয়নে নিরব বিপ্লব, তরুনকে বরন না পুরাতনকে স্বাগত জানানো?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সাধারণ ভোটার বলেন, আমরা উন্নয়ন চাই। সেই হিসেবে দু’জনকেই দেখেছি। দু’জনের কেউ অবহেলিত আমতলীর উন্নয়ন চায়নি। তারা শুধু নিজের আখের গুছিয়েছে। তারা আরো বলেন, গত ৮ বছরে মানুষ বিভিন্নভাকে হয়রানীর শিকার হয়েছে। মামলা করে বর্তমান চেয়ারম্যান তিন বছর নির্বাচন হতে দেয়নি।
আওয়ামীলীগ প্রার্থী মোঃ জাহিদুল ইসলাম মিঠু মৃধা শতভাগ জয়ের আশা ব্যক্ত করে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ মোতাহার উদ্দিন মৃধা ও তার লোকজন সাধারণ ভোটার, আমার কর্মী-সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, সাধারণ ভোটাররা আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে। আমি এই অবহেলিত আমতলীকে উন্নয়ন করে একটি আধুনিক ও মডেল ইউনিয়ন হিসেবে গড়ে তুলবো।
স্বতন্ত্র প্রার্থী জালাল উদ্দিন ফকির বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে আমি বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করবো।
বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ মোতাহার উদ্দিন মৃধা বলেন, আমি ৮ বছর আমতলী ইউনিয়নে সাধারণ মানুষের পাশে ছিলাম। তাদের সুখ ও দুঃখ দেখেছি। তারা আমাকে বিমুখ করবে না। আমি তাদের ভোটে জয়লাভ করে প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করবো। তিনি আরো বলেন, আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থী আমার কর্মী-সমর্থকদের হুমকি ও মারধর করছে।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২২:০৬:২২ ● ৬৬১ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ