আমতলীতে ধর্ষক স্কুল শিক্ষকের বিচার দাবীতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলীতে ধর্ষক স্কুল শিক্ষকের বিচার দাবীতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
রবিবার ● ৩০ জুন ২০১৯


আমতলীতে ধর্ষক স্কুল শিক্ষকের বিচার দাবীতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

বরগুনার আমতলী উপজেলার কাঠালিয়া তাজেম আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) মোঃ জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্কুল ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ এনে বিচার চাইলেন স্কুল শিক্ষার্থীরা। রবিবার (৩০ জুন) শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করে ওই শিক্ষকের বিচার দাবীতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করেছে। এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভে স্কুল শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় পাঁচ শতাধিক মানুষ অংশগ্রহন করেছেন। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ওই শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসলে তারা আর এ বিদ্যালয় লেখাপড়া করবেন না।
জানাগেছে, উপজেলার কাঠালিয়া তাজেম আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শরীর চর্চা শিক্ষক মোঃ জহিরুল ইসলাম গাজী ২০১৫ সালে ২২ জুলাই বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর থেকেই বিদ্যালয়ের মেয়েদের উত্যাক্ত করে আসছিল। এ বিষয়টি কয়েকবার প্রধান শিক্ষকের নজরে আনেন শিক্ষার্থীরা। প্রধান শিক্ষক তাকে শাসিয়ে দেন। ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর এক ছাত্রীকে গত বছর ডিসেম্বর মাসে শিক্ষক জহিরুল ইসলাম অনৈতিক কাজের প্রস্তাব দেয়। শুরুতে ওই ছাত্রী তার প্রস্তাবে রাজি হয়নি। ওই ছাত্রীর অভিযোগ পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে গত ছয় মাস ধরে তাকে শিক্ষক জহিরুল ইসলাম গাজী একাধিকবার জোড়পূর্বক ধর্ষণ করেছে। এ বছর ফেব্রুয়ারী মাসে এতে ওই ছাত্রী অন্তঃস্বত্তা হয়ে পড়ে। এ ঘটনা ওই ছাত্রী শিক্ষক জহিরুল ইসলামকে জানালে তিনি পেটে টিউমার হয়ে বলে তাকে বরিশাল চিকিৎসা করতে নিয়ে যান। ওইখানে নিয়ে জোড়পূর্বক পেটের বাচ্চা নষ্ট করা চেষ্টা করেন। কিন্তু ওই ছাত্রী তাতে রাজি হয়নি। এ ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হয়ে গেলে শিক্ষক জহিরুল ইসলামের বড় ভাই কুকুয়া আদর্শ স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ ফারুক গাজী ছাত্রীর বাবাকে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে গর্ভের বাচ্চা নষ্ট করতে চাপ দেয়। ওই ছাত্রীর বাবা এতে রাজি না হওয়াতে জোড় করে ছাত্রীকে পটুয়াখালী নিয়ে গর্ভের বাচ্চা নষ্ট করেছে বলে অভিযোগ ওই ছাত্রীর। প্রভাবশালী শিক্ষকের ভাইয়ের ভয়ে ওই ছাত্রী ও তার পরিবারের লোকজন এলাকা থেকে পালিয়ে গেছে। গত শুক্রবার এ ঘটনাটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, প্রধান শিক্ষক ও ব্যাবস্থাপনা কমিটির নজরে আসে। রবিবার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ধর্ষক শিক্ষক জহিরুল ইসলামের বিচার দাবী করে পরীক্ষা বর্জন করেন। পরে শিক্ষার্থী,অভিভাবক ও স্থানীয় লোকজন ওই শিক্ষকের বিচার দাবী করে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে রবিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে। পরে প্রধান শিক্ষক আওলাদ হোসেন ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর বিচারের আস্বাসে ১৫ মিনিট পরে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেন। মানববন্ধনে শিক্ষার্থী মিতু, আশামনি, বৃষ্টি, হাফিজা, সোনিয়া, ফারজানা, হুমায়ূন, শামিম, ফজলে রাব্বি,  মেহেদী ও ফেরদৌস শিক্ষকের বিচার দাবী করে বলেন, ওই শিক্ষক বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর থেকেই মেয়েদের উত্যাক্ত করে আসছে। এ বিষয়ে আমরা প্রধান শিক্ষক আওলাদ হোসেনের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। প্রধান শিক্ষক তাকে বহুবার শাসিয়ে দিয়েছেন কিন্তু তিনি নিবৃত হয়নি। বর্তমানে ওই শিক্ষক আমাদের এক স্কুল ছাত্রীকে পরীক্ষার ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে জোড়পূর্বক ধর্ষণ করেছে। আমরা ওই শিক্ষকের কঠোর শাস্তি দাবী করছি। তারা আরো বলেন, ওই শিক্ষক যদি এই বিদ্যালয়ে ফিরে আসে তাহলে আমরা এই বিদ্যালয়ে আর  লেখাপড়া করবো না। অভিভাবক মোঃ মাহবুব মৃধার সভাপতিত্বে ঘন্টাব্যাপী এ মানবন্ধনে বক্তব্য রাখেন  ব্যাবস্থাপনা কমিটির সদস্য আব্বাস মিয়া, জামাল খাঁন, অভিভাবক জোসেফ তালুকদার, সোহবাফ গাজী,ইউপি সদস্য একেএম মাসুদ মৃধা,  মোস্তফা সিকদার ও মাহাতাব হোসেন খাঁন প্রমুখ। এ ঘটনার পরপর ওইদিন প্রধান শিক্ষক আওলাদ হোসেন ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভা ডেকে শিক্ষক জহিরুল ইসলাম গাজীকে কেন সাময়ীকভাবে  বরখাস্ত করা হবে না এই মর্মে ৭ কার্য দিবসের মধ্যে জবাব দেয়ার জন্য নোটিশ দিয়েছেন। এ ঘটনার পরপর শিক্ষক জহিরুল ইসলাম গা-ঢাকা দিয়েছেন।
ওই ছাত্রী মুঠোফোনে অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষক জহিরুল ইসলাম পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে আমাকে একাধিকবার জোড়পূর্বক ধর্ষণ করেছে। এতে আমি অন্তঃস্বত্তা হয়ে পড়ি। এ খবরটি শিক্ষককে জানালে তিনি আমাকে পেটে টিউমার হয়েছে বলে বরিশাল চিকিৎসা করাতে নিয়ে যায়। পরে আমাকে জোড়পূর্বক বাচ্চা নষ্ট করানো চেষ্টা করে। আমি এতে রাজি না হওয়ায় তার বড় ভাই ফারুক হোসেন আমার বাবাকে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে আমার পেটের বাচ্চা নষ্ট করেছে। তাদের ভয়ে আমি ও আমার পরিবার এলাকা থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
এ বিষয়ে শিক্ষক জহিরুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ছাত্রীর বাবা বলেন, মুই গরিব মানু। মোর সর্বনাশ হরছে। এ্যাহোন মুই ওই শিক্ষকের বড় ভাই প্রভাবশালী ফারুক গাজী মোরো মাইর‌্যা হালানের ডর দ্যাহাতেছে। মুই হ্যার ডরে পলাইয়্যা থাহি। মুই এ্যাইয়্যার বিচার চাই।
কাঠালিয়া তাজেম আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মোঃ আওলাদ হোসেন বলেন, এ বিষয়ে ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভা ডেকে শিক্ষক জহিরুল ইসলামকে কেন সাময়ীকভাবে বরখাস্ত করা হবে না মর্মে ৭ কার্য দিবসের মধ্যে জবাব চেয়ে নোটিশ দিয়েছি।
আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা মোঃ খন্দকার আমিনুল ইসলাম বলেন, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আওলাদ হোসেন আমাকে জানিয়েছেন এক শিক্ষকের বিচার দাবীতে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী থানার ওসি মোঃ আবুল বাশার বলেন এ বিষয়টি আমি জেনেছি। ক্ষতিগ্রস্থদের পক্ষ থেকে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাঃ মনিরা পারভীন বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৭:২৪:৪৮ ● ৭১৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ