স্টেশনে-টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষ, ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ে ভোগান্তি

প্রথম পাতা » জাতীয় » স্টেশনে-টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষ, ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ে ভোগান্তি
শনিবার ● ১ জুন ২০১৯


ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ে ভোগান্তি

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, যাত্রাপথে বাড়ছে ঘুরমুখো মানুষের ভিড়। গতকাল শনিবার সকাল থেকেই সড়ক, রেল ও নৌপথে বাড়ির উদ্দেশে ছুটছে রাজধানীর বাসিন্দারা। তবে সকালে বৃষ্টির কবলে পড়ে অনেকেই ভোগান্তিতে পড়ে। কিন্তু যত ভোগান্তিই হোক, এসব উপেক্ষা করে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ছুটছে মানুষ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আগারগাঁও কার্যালয়ের আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানান, শনিবার (১ জুন) সকালে রাজধানীতে ৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। সকাল থেকে গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদসহ বিভিন্ন টার্মিনালে অসংখ্য ঘরমুখো মানুষ জড়ো হয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা দেন। বৃষ্টির কারণে রাজধানীর অভ্যন্তরে গণপরিবহনের দুর্ভোগে পড়ে যাত্রীরা। তবে শনিাবর যাত্রীদের চাপ তুলনামূলকভাবে কম ছিল বলে জানিয়েছে বিভিন্ন পরিবহন কর্তৃপক্ষ। তার পরও কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়। আগামি ৪ তারিখ থেকে সরকারি ছুটি শুরু হওয়ার কারণে ৩ তারিখ থেকে ভিড় আরো বাড়বে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বলছে, মহাসড়কে এবার কোনো দুর্ভোগ নেই। আর এজন্য কোনোরকম ভোগান্তি ছাড়াই বাসগুলো চলাচল করছে এবং নির্দিষ্ট সময়েই বাস ছেড়ে যাচ্ছে গন্তব্যের উদ্দেশে। যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীও টার্মিনালগুলোতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে।
এদিকে, কমলাপুর রেলস্টেশনে ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে প্রথম দিনের মতো ভিড় না থাকলেও কয়েকটি ট্রেন দেরিতে ছাড়ায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে ঢাকা থেকে বাড়িমুখো মানুষদের। ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিন গতকাল শনিবার ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতি এক্সপ্রেস ও খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ছেড়েছে দেরিতে। নীলসাগর এক্সপ্রেসের যাত্রীরাই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। ট্রেনটি সকাল ৮টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সাড়ে তিন ঘণ্টা দেরিতে ছেড়ে যায় সাড়ে ১১টার দিকে। রংপুর এক্সপ্রেস সোয়া এক ঘণ্টা দেরি করে কমলাপুর ছেড়ে যায় সোয়া ১০টার দিকে। কমলাপুর স্টেশনের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রংপুর এক্সপ্রেসের নিয়মিত যে ট্রেন সেটি নির্ধারিত সময়ের পরও কমলাপুর এসে না পৌঁছানোয় এ ট্রেনের যাত্রীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় আরেকটি ট্রেন যুক্ত করা হয়। ফলে ট্রেনের আসন বিন্যাসেও আনা হয় পরিবর্তন। আর এতে চরম বিড়ম্বনা এবং দুর্ভোগের শিকার হওয়ার কথা বলেছেন যাত্রীরা। ট্রেনের যাত্রী ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, আমি টিকিট কেটেছি এসির। কিন্তু এসি বগিতে আমি আমার সিট খুঁজে পাচ্ছি না। ট্রেনে যারা আছেন, তারাও কোনো সমাধান দিতে পারছেন না। এই ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশে ট্রেন ব্যবস্থাপনা, সময়সূচি কোনো দিনও ঠিক হবে না। নির্ধারিত সিট না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই ট্রেনের আরেক যাত্রী মো. আবুল বাশার। তিনি বলেন, আমি কোনো সিটই পাইনি। সঙ্গে আমার স্ত্রীও আছেন। কীভাবে যাব, আল্লাহই জানে। স্টেশন ম্যানেজারকে পর্যন্ত বললাম, তারপরও কিছু হয়নি। ট্রেনটি ছাড়ার সময়ও এই যাত্রীকে ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। আবুল বাশারের মতো অনেক যাত্রীকে এ অভিযোগ করতে দেখা গেছে।
কমলাপুরের স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আমিনুল হক বলেন, সকাল থেকে সারাদিনে ৫২টি ট্রেন আমরা চালাব। এর মধ্যে আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেন মিলে (সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ) ১৭টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটা ছাড়তে গতকাল (গত শুক্রবার) সাত ঘণ্টা লেট হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রী মহোদয়ের আশ্বাসে ভিত্তিতে আজকে (গতকাল শনিবার) আমরা বিকল্প রেক দিয়ে চালাচ্ছি। কিছুক্ষণ আগে (সোয়া ১০টায়) ছেড়ে গেল। আসনবিন্যাসে অব্যবস্থাপনার বিষয়টি আমিনুল হকও স্বীকার করেন। এ নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এই ট্রেনটিতে আমরা সাধ্যমত আসন রিপ্লেস করেছি। দুটি এসি চেয়ারকোচ কম থাকাতে ফার্স্ট ক্লাস চেয়ারে বা ফার্স্ট ক্লাস কেবিনে সিট দিয়েছি। সবগুলো সিটই আমরা বরাদ্দ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিট সঙ্কুলান করতে না পারায় কিছু সিট সাধারণ শ্রেণিতে দিতে হয়েছে। রংপুর এক্সপ্রেসের সূচি পরিবর্তনের কারণ বলতে গিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, বিগত ৩০ মে আমরা ট্রেনটি রাইট টাইমে ছেড়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু সেতুতে যাওয়ার পর ট্রেনটির একটি কোচ ড্যামেজ হয়ে যায়। ফলে ওইখানেই প্রায় তিন-চার ঘণ্টা সময় লেগে গেছিল। যেতে-আসতে দেরি হওয়ায় আজকেও সেটি ছাড়তে দেরি হয়েছে। আগমীকাল থেকে সেটা হবে না বলে আশা করছি। চিলাহাটীর নীলসাগর এক্সপ্রেসের যাত্রী নীলফামারীর নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, ৮টায় ট্রেন, সাড়ে ৭টা থেকে স্টেশনে এসে বসে আছি দুই বাচ্চাকে নিয়ে। রেলের লোকদের কাছে জানতে গেলে খালি বলে আসবে আসবে। ডিসপ্লেতে দেখাচ্ছে, ১০টা ৫০ মিনিটে আসবে, আসলেই হয়। নীলসাগর এক্সপ্রেসের এরকম অসংখ্য যাত্রীদের এভাবে বসে থাকতে দেখা যায়। এছাড়া খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৭টা ১৯মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এক ঘণ্টা দেরি করে কমলাপুর থেকে ট্রেনটি ছেড়ে যায় ৮টা ২০ মিনিটে। চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতি এক্সপ্রেস ট্রেনটিও আধাঘণ্টা দেরি করে কমলাপুর ছাড়ে। সকাল সোয়া ৭টার দিকে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও আধা ঘণ্টা দেরি করে ট্রেনটি পৌনে ৮টায় ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী রাজশাহী এক্সপ্রেস ট্রেনটির ১২টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু ৩টা ২০ মিনিটেও এটি প্ল্যাটফর্মে আসেনি। রাজশাহীগামী সিল্ক সিটির যাত্রাও পিছিয়েছে। এটির ২টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও তা এখন ৫টা ১০ মিনিটে ছাড়বে বলে জানানো হয়েছে। এর বাইরে দেশের অন্যান্য গন্তব্যের ট্রেনের সময়সূচি নিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে তেমন কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপ আমিনুল হক বলেন, আজকের ৫২টা ট্রেনের মধ্যে চারটা ট্রেন ডিলে হয়েছে। এবার রোজার ঈদ উপলক্ষে রেলওয়ে প্রথম যে দিনের আগাম টিকেট বিক্রি করেছিল, সেই ট্রেন ছাড়া শুরু হয়েছে গত শুক্রবার। কিন্তু প্রথম দিনই বেশ কয়েকটি ট্রেন ছাড়তে দেরি হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে গরমের মধ্যে যাত্রীদের পড়তে হয়েছে অপেক্ষার বিড়ম্বনায়। ভোগান্তির জন্য যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে রেলমন্ত্রী বলেছিলেন, আগামীকাল (গতকাল শনিবার) থেকে আর কোনো ট্রেন বিলম্বে ছাড়বে না। যে কটি ট্রেন আজ দেরি করে ছাড়তে হয়েছে, সেগুলোর দিকে আলাদা নজর দিয়ে নির্ধারিত সময়ে ছাড়ার ব্যবস্থা করা হবে।
শনিবার সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কমলাপুর স্টেশনে যাত্রীদের তেমন একটা বাড়তি চাপ দেখা যায়নি। স্টেশন সংশ্লিষ্টদের অনেকের ভাষ্য, সাধারণ ছুটি বা সাপ্তাহিক ছুটিতে যে চাপ থাকে যাত্রীদের, তার চেয়ে যাত্রীচাপ একটু বেশি। রোববার, সোমবার এ চাপ আরেকটু বাড়তে বলে ধারণা করছেন তারা। সদরঘাটেও ঘরমুখো মানুষ পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য জড়ো হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ গত বৃস্পতিবার থেকেই নিজেদের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য জড়ো হচ্ছে। বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভিড় করছে সদরঘাটে। অনেকেই লঞ্চের শিডিউল না জানায় আগেই সদরঘাটে উপস্থিত হয়েছে। এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যারা সদরঘাটে আসছিল তাদের অনেকেই বৃষ্টির কারণে দুর্ভোগে পড়ে।
অন্যদিকে, এবার ঈদযাত্রায় ২১৫টি লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন লঞ্চ মালিকরা। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানিয়েছে, প্রতিদিন ১০০টিরও বেশি লঞ্চ সদরঘাট থেকে দক্ষিণাঞ্চলের দিকে ছেড়ে যাচ্ছে।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২৩:০৩:২৭ ● ৯৮৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ