ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দারিদ্র্যের হার পাহাড়ে ৬৫ এবং সমতলে ৮০ শতাংশ

প্রথম পাতা » জাতীয় » ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দারিদ্র্যের হার পাহাড়ে ৬৫ এবং সমতলে ৮০ শতাংশ
বৃহস্পতিবার ● ১৬ মে ২০১৯


ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দারিদ্র্যের হার পাহাড়ে ৬৫ এবং সমতলে ৮০ শতাংশ

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী দেশে দারিদ্র্যের হার ২১ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে এলেও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে এই হার অনেক বেশি বলে উঠে এসেছে নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠনের জরিপে।
জরিপে বলা হয়েছে, পার্বত্য অঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৬৫ শতাংশ এবং সমতলের ৮০ শতাংশ এখনও দারিদ্র্যসীমায় রয়ে গেছে। ‘আদিবাসীদের জন্য সুনির্দিষ্ট ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজেট চাই’ শিরোনামে গত বুধবার রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারে এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় কাপেং ফাউন্ডেশন তাদের জরিপের এই তথ্য প্রকাশ করে।
ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক সোহেল চন্দ্র হাজং বাংলাদেশের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর আর্থ সামাজিক অবস্থান তুলে ধরেন সভায়। এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ক আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ, ব্যুরো অব ইকোনমিকস রিসার্চের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এম আকাশ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।
সোহেল চন্দ্র হাজং জানান, আদিবাসীদের দারিদ্র্যের হার জাতীয় দারিদ্র্যের হারের চেয়ে অনেক বেশি; পার্বত্য চট্টগ্রামে ৬৫ শতাংশ ও সমতলে ৮০ শতাংশ। কাপেং ফাউন্ডেশনের জরিপে উঠে এসেছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কৃষি জীবন, গড় আয়ের দিকটিও। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর গড় আয় জাতীয় গড় আয় থেকে ২৬ শতাংশ, সমতলে ৪১ শতাংশ কম। এসব জনগোষ্ঠীর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৭২ শতাংশ ও সমতলে ৮০ শতাংশ কৃষিনির্ভর জীবনযাপন করে। সোহেল জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে ৯০ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিবাসীদের ভূমির মালিকানা ছিল; প্রত্যেকের গড়ে ৩.২ একরের মতো জমি ছিল। বিগত তিন দশকে এদের ২৫ শতাংশ ভূমি হারিয়েছেন। সমতলে বসবাসরত দুই-তৃতীয়াংশ উপজাতি এখন ভূমিহীন। জরিপ বলছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা ( পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতিত) নামে যে প্রকল্প সুবিধা চালু আছে, সে সম্পর্কে সমতলের মাত্র ৫ শতাংশ উপজাতি জানে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ৫৪ শতাংশ, সমতলে ৬২ শতাংশ উপজাতি সাধারণত মহাজনদের কাছ থেকে ১০ শতাংশ সুদে ঋণ নেয়।
বাংলাদেশে বসবাসরত ১৫ লাখ ৮৬ হাজার উপজাতি সাংবিধানিকভাবে ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে যখন বিফল হচ্ছে, তখন কাপেং ফাউন্ডেশন দাবি করছে বিশাল এই জনগোষ্ঠী এখন ‘আত্মপরিচয় সংকটে’ ভুগছে। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের মতে, বাংলাদেশে ৫৪টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ৩০ লাখ মানুষ বসবাস করছে। পরিসংখ্যানে জনসংখ্যা অর্ধেক দেখানোয় সরকারি জরিপের সমালোচনা করে কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, সঠিক পরিসংখ্যানের অভাবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাজেট বরাদ্দে বৈষম্যের শিকার। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ে ১৩০৯ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ থাকলেও তার সবটুকু কেবল পাহাড়ে বসবাসরত ১৪ শতাংশ উপজাতিদের জন্য ব্যয় হয় না বলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া আসে এই সভা থেকে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা’ তহবিল থেকে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে বলে সভায় জানান কাপেং ফাউন্ডেশনের আরেক গবেষক খোকন সুইটেন মুরমু। তবে সভায় অভিযোগ করা হয়, এই খাত থেকে বরাদ্দও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য যা পাওয়া যায় তা অপ্রতুল। খোকন সুইটেন মুরুম পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানান, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের জন্য জনপ্রতি গড় বাজেট ছিল ২০০ টাকা। এ টাকার অর্ধেক ১৫ কোটি টাকা দেশের আটটি বিভাগের ১২০টি উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আয় বর্ধন প্রকল্প, শিক্ষা বৃত্তি ও অন্যান্য খাতে খরচের জন্য বিভাজন করা হয়। ওই বছরের বাজেটে দেখা যায়, কতগুলো উপজেলা রয়েছে যেখানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত, কিন্তু বাজেট নেই। কিন্তু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকা নয়, এমন এলাকা নয় কিন্তু বরাদ্দ ২০ লাখ টাকার ওপর।
জাতীয় বাজেটে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার সুনিশ্চিতকরণে ১৪ দফা দাবি উত্থাপন করে কাপেং ফাউন্ডেশন। সভায় প্রধান অতিথি রাশেদ খান মেনন বলেন, সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন না আসলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নীতির ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসবে না। সবার আগে সেখানে পরিবর্তন আনতে হবে। মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে যে বৈষম্য রয়ে গেছে, সেখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। নাইলে এসডিজির অভীষ্ট্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার সফল হবে না।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২১:২৩:০৭ ● ৩৮৭ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ