নানামুখী সঙ্কটে তলিয়ে যাচ্ছে বিজেএমসি

প্রথম পাতা » জাতীয় » নানামুখী সঙ্কটে তলিয়ে যাচ্ছে বিজেএমসি
শুক্রবার ● ২৬ এপ্রিল ২০১৯


নানামুখী সঙ্কটে তলিয়ে যাচ্ছে বিজেএমসি

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন (বিজেএমসি) ক্রমাগত সঙ্কটে তলিয়ে যাচ্ছে। উৎপাদন এবং আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে সংস্থাটি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও ছুঁতে পারেনি বিজেএমসি। একইভাবে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা থেকেও বহুদূর পিছিয়ে পড়েছে। ফলে বেড়ে চলেছে সংস্থাটির দায়-দেনার পরিমাণ। বিগত অর্থবছরে ৩১০ কোটি টাকা লোকসান দেয়া বিজেএমসির এবার লোকসানের পরিমাণ চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসেই ৩৯৫ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। কাঁচাপাট ক্রয়, পাটপণ্য উৎপাদন এবং বিদেশে ও স্থানীয় বাজারে ওই পণ্য বিক্রি- সব ক্ষেত্রেই লক্ষ্যমাত্রা থেকে বহুদূর পিছিয়ে পড়েছে বিজেএমসি। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিজেএমসির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ টন। বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৫২ হাজার ৩৭২ টন। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সংস্থাটির পাটক্রয়ের নিট লক্ষ্যমাত্রা ১৭ লাখ ৯০ হাজার কুইন্টাল। তার মধ্যে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে সংস্থাটি কিনেছে মাত্র ৪ লাখ ১৫ হাজার কুইন্টাল কাঁচা পাট। অর্থাৎ অর্থবছরের দুই-তৃতীয়াংশে পাটক্রয় লক্ষ্যমাত্রার মাত্র এক-পঞ্চমাংশ ছুঁতে পেরেছে বিজেএমসি। তাছাড়া উৎপাদনকৃত পাটপণ্য বিক্রির ক্ষেত্রেও একই দশা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির। চলতি অর্থবছরে বিজেএমসির মোট ১ লাখ ৪১ হাজার ৮৯৭ টন রফতানি লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কিন্তু ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৯৪ হাজার ৫৯৮ টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রফতানি হয়েছে মাত্র ২২ হাজার ১০৪ টন। ওই সময় ৮৮২ কোটি টাকা রফতানি আয় লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জিত হয়েছে মাত্র ১৯৫ কোটি ১১ লাখ টাকা। তাছাড়া স্থানীয় বাজারে পাটপণ্য বিক্রির ক্ষেত্রেও পিছিয়ে পড়েছে বিজেএমসি। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৮ হাজার ৪৩৫ টন স্থানীয় বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অর্জিত হয়েছে ২৩ হাজার ১৭ টন। ফলে ওই খাত থেকে ৩৯৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ২৪৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, বর্তমানে বিজেএমসির পাটকলগুলোয় মোট তাঁতের সংখ্যা ১০ হাজার ৮৩৫টি। তার মধ্যে চালুর উপযোগী তাঁত ৯ হাজার ৫৫২টি। আর অকেজো হয়ে আছে ১ হাজার ২৮৩টি। যদিও সংস্থাটি বিদ্যমান সক্ষমতার সবটুকু কাজে লাগাতে পারছে না। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭ হাজার ৭৩৪টি বাজেটেড তাঁতের মধ্যে চালু ছিল ৪ হাজার ৩৮৯টি। ফলে উৎপাদন-আয় এবং সক্ষমতা-সচলতার এমন বেহাল অবস্থায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিজেএমসির দায়-দেনার পরিমাণ। ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ সংস্থাটির দায়-দেনার পরিমাণ (সাময়িক) ২ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত অর্থবছরে সংস্থাটির লোকসানের পরিমাণ (সাময়িক) ছিল ৩১০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসেই লোকসান (সাময়িক) দাঁড়িয়েছে ৩৯৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। যদিও পাট খাতের উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্যোগ নিয়ে চলেছে সরকার। তবে দুর্নীতি ও অদক্ষতার জন্য সেসব উদ্যোগ কাজে আসছে না।
এদিকে এ বিষয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মির্জা আজম জানান, বিজেএমসিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের জন্য বাস্তবভিত্তিক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিজেএমসির পাটকলগুলো দীর্ঘদিনের পুরনো হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আধুনিকায়নের কাজ চলছে। পাট থেকে চারকোল, কম্পোজিট জুট টেক্সটাইল, পাট পাতার কোমল পানীয়, নদীভাঙন রোধে পরিবেশবান্ধব জুট জিও টেক্সটাইল, পলিথিনের বিকল্প পাটের শপিং ব্যাগ উদ্বোধনের মাধ্যমে পাট খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। ফলে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে বিজেএমসি ও পাট খাতের সুদিন ফিরিয়ে আনতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর।

 

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৯:০০:২৮ ● ৩৯৪ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ