বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন মালিকদের বীমায় আগ্রহ নেই

প্রথম পাতা » জাতীয় » বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন মালিকদের বীমায় আগ্রহ নেই
শনিবার ● ৬ এপ্রিল ২০১৯


বাধ্য না হলে বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন মালিকদের বীমায় আগ্রহ নেই

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

দেশের বেশিরভাগ বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনের কোনো বীমা নেই। তবে ভবন নির্মাণের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে ব্যাংকের শর্ত মোতাবেক ভবন মালিকরা অগ্নিবীমা করে। কিন্তু ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের পর তারা আর বীমা নবায়ন করে না। অথচ বিগত এক দশকে দেশে ১ লাখ ৭৩ হাজারের মতো অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ বছরে গড়ে ১৭ হাজার ৩৮৭টি করে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটছে। ওসব অগ্নিকা-ে গড়ে বছরে ১২২ জনের প্রাণহানি ছাড়াও আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৫০ কোটি টাকা। দেশে শিল্প-কারখানা ও আমদানি-রফতানি পণ্যের বীমা করা থাকলেও বেশিরভাগ বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনের কোন বীমা নেই। বীমা খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এদেশে স্বেচ্ছায় কোনো ব্যক্তি কোনো সম্পদের অগ্নি বীমা করে না। বরং গ্রাহকরা বাধ্য হয়েই অগ্নি বীমার অধিকাংশ পলিসি করে থাকে। দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা অনুসারে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কোনো শিল্প-কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা ভবন নির্মাণ করা হলে ওসব সম্পত্তির অগ্নি বীমা করা হয়ে থাকে। ফলে অগ্নি বীমার অধিকাংশ গ্রাহক তার অগ্নি বীমা পলিসি সম্পর্কে সচেতন থাকেন না। ওসব সম্পত্তির অগ্নি বীমার ক্ষেত্রে ব্যাংক যেহেতু নিজেও একটি পক্ষ সে কারণে ঋণগ্রহীতা ওসব বীমা গ্রাহক পলিসি করতে ব্যাংকের ওপরই নির্ভর করে থাকে। অনেক সময় ঋণগ্রহীতা ওই বীমা গ্রাহক জানেন নাই কোন কোম্পানিতে পলিসি করা হয়েছে। ওই কোম্পানির দাবি পরিশোধের সক্ষমতা বা গ্রাহক সেবার মান কেমন। আর ওসব না জানার কারণে অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত হলে অধিকাংশ গ্রাহককে হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়। অনেক সময় সঠিকভাবে পলিসি না করার কারণে তারা বীমা দাবিও পায় না।
সূত্র জানায়, দেশে ব্যবসারত নন-লাইফ বীমা কোম্পানিতে যেসব বীমা পলিসি ইস্যু করা হয় তার অধিকাংশই মোটর বীমা। অন্যান্য বীমার বিষয়ে সচেতনতা না থাকায় শুধু বাধ্যতামূলক হওয়ায় ওই পলিসি গ্রাহকরা গ্রহণ করছে। বিগত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নন-লাইফে প্রায় ২০ লাখ পলিসি ইস্যু হয়েছে। তার মধ্যে ১৪ লাখই মোটর বীমা। রাস্তায় মামলা ও জরিমানা থেকে পরিত্রাণ পেতে ওই মোটর বীমা পলিসি গ্রহণ করে গ্রাহকরা। তবে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থেকে শুরু করে অনেক ভবন এখনো বীমার আওতার বাইরেই রয়ে গেছে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) তথ্যানুযায়ী, নন-লাইফ ২০১৮ সালের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে বীমা পলিসির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৯২ হাজার ৪১৫টি। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পলিসি রয়েছে মোটর বীমার, ১৪ লাখ ২ হাজার ৪৫৭। অর্থাৎ ৭০ শতাংশ পলিসিই মোটর বীমার। তবে প্রিমিয়াম সংগ্রহের দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে অগ্নি বীমা পলিসি। অগ্নি বীমায় ৪৯ শতাংশ প্রিমিয়াম এসেছে। গেল বছর ২ লাখ ৩ হাজার ৫৫৫টি অগ্নি বীমা পলিসির বিপরীতে ১ হাজার ৬৭১ কোটি ২১ লাখ টাকা প্রিমিয়াম এসেছে। গেল বছর ২ হাজার ৭১ কোটি টাকার অগ্নিবীমা দাবির মধ্যে ৬৮২ কোটি টাকার বীমাদাবি নিষ্পত্তি হয়েছে। অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে ১ হাজার ৩৯০ কোটি টাকার দাবি।
এদিকে ফায়ার সার্ভিসের তথ্যানুযায়ী ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিগত ১০ বছরে দেশে মোট অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮৭৫। অর্থাৎ বছরে গড়ে ১৭ হাজার ৩৮৭ করে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটছে। ওসব অগ্নিকা-ে গড়ে বছরে ১২২ জনের প্রাণহানি ছাড়াও আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৫০ কোটি টাকা। বিগত ১০ বছরে দেশে অগ্নিকা-ের ঘটনা প্রায় আড়াই গুণ বেড়েছে। ২০০৮ সালে ৯ হাজার ৩১০ আগুনের ঘটনায় প্রাণ গেছে ২২৯ জন, ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২৩০ কোটি টাকার। ২০০৯ সালে দেশে ১২ হাজার ১৮২ অগ্নিকা-ের ঘটনায় ১২০ জন নিহত হয়। তাদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ২ জন সদস্যও রয়েছে। ওই বছর আগুনে আর্থিক ক্ষতি হয় প্রায় ৩০৬ কোটি টাকা। পরের বছর অগ্নিকা-ের ঘটনা আরো বেড়ে হয় ১৪ হাজার ৬৮২টি। তাতে ২৭১ জনের প্রাণহানি ছাড়াও ৩২৬ কোটি টাকার সম্পদ পুড়ে যায়। ২০১১ সালে ১৫ হাজার ৮১৫ অগ্নিকা-ের ঘটনায় ২৯৩ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সঙ্গে ৩৬৫ জনের প্রাণ যায়। পরের বছর অগ্নিকা-ের ১৭ হাজার ৫০৪ ঘটনায় ২১০ জন নিহত হয়। ওই বছর মোট আর্থিক ক্ষতি হয় ৪৮২ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে ১৭ হাজার ৯১২ অগ্নিকা-ে নিহত হয় ১৬১ জন। তবে ২০১৪ সাল থেকে অগ্নিকা-ে নিহতের সংখ্যা কমে আসে। ওই বছর ১৭ হাজার ৮৩০টি ঘটনায় ৭০ জনের প্রাণহানি ও ৩৫৯ কোটি টাকার সম্পদহানি ঘটে। পরের বছর ১৭ হাজার ৪৮৮ অগ্নিকা-ে নিহত হয় ৬৮ জন। ২০১৬ সালে ৫২ জনের প্রাণ যায় ১৬ হাজার ৮৫৮ ঘটনায়। তাতে আর্থিক ক্ষতি হয় ২৪০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে ১৮ হাজার ১০৫ অগ্নিকা-ে ৪৫ জনের প্রাণহানির সঙ্গে সম্পদ পুড়ে ২৫৭ কোটি টাকার। ২০১৮ সালে ১৬ হাজার ১৬২ অগ্নিকা-ে ৫৫ জনের প্রাণহানির সঙ্গে ২১৭ কোটি টাকার সম্পদ পুড়েছে।
অন্যদিকে বেসরকারী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর মতে, দেশে মোটর বীমা পলিসি বাড়লেও প্রিমিয়াম বাড়ছে না। কারণ রাস্তায় চলতে মোটর বীমা বাধ্যতামূলক তাই এই বীমা নিচ্ছেন গ্রাহকরা। সরকার যদি অগ্নি বীমাসহ আরও কিছু পলিসি বাধ্যতামূলক করে তাহলে বীমা ব্যবসার পরিধি বাড়বে, মানুষের নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে।
এ বিষয়ে বীমা কোম্পানির মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন জানান, আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন মালিকরা বীমা করতে চান না। তবে শিল্পকারখানাগুলো বীমা করে। ওসব ভবনকে অগ্নিবীমার আওতায় আনতে সরকারের তরফ থেকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন বা সিটি করপোরেশনের কর পরিশোধের ক্ষেত্রে অগ্নিবীমা থাকা বাধ্যতামূলক করলেই তা সম্ভব।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৫:২৩:৫৫ ● ৫২৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ