টাকার অভাবে পাট কিনতে পারছে না বিজেএমসির পাটকলগুলো

প্রথম পাতা » সর্বশেষ » টাকার অভাবে পাট কিনতে পারছে না বিজেএমসির পাটকলগুলো
রবিবার ● ২০ জানুয়ারী ২০১৯


টাকার অভাবে পাট কিনতে পারছে না বিজেএমসির পাটকলগুলো

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) মিলগুলো টাকার অভাবে পাট কিনতে পারছে না। সংস্থার ২৩টি মিলে গড়ে আর মাত্র দু’সপ্তাহের পণ্য উৎপাদনের পাটও মজুদ নেই। একই সময়ে বিজেএমসির কাছে ক্ষুদ্র পাটচাষিদের বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৪২৫ কোটি ৩৭ লাখ ৫৬৩ টাকা। এ বছর বিজেএমসির ১৯ লাখ ৫৩ হাজার কুইন্টাল পাট কেনার টার্গেট ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত চাহিদার মাত্র ২০ শতাংশ পাটও কিনতে পারেনি সংস্থাটি। ইতিমধ্যে পাওনা পরিশোধ না হলে বাকিতে পাট না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র পাট চাষি সমিতি। বিজেএমসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে ও মধ্যপ্রাচ্য সংকটে এদেশের পাট এবং পাটজাত পণ্য রফতানিতে মন্দা শুরু হয়েছে। বিশেষত চলতি বছর ওই রফতানি আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। আর মধ্যপ্রাচ্যে রীতিমতো ধস নেমেছে। বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১১৪ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের পাটপণ্য রফতানি হয়েছে। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে তা গত বছরের একই সময়ের অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। এমন অবস্থায় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোতেও পাটজাত পণ্য উৎপাদন কমে এসেছে। কারণ টাকার অভাবে পাট কিনতে পারছে না বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)। গত ১৫ জানুয়ারির হিসাবে বিজেএমসির ২৩টি মিলে গড়ে আর মাত্র ১৩ দিনের পণ্য উৎপাদনের পাট মজুদ রয়েছে। আর একই সময়ে বিজেএমসির কাছে ক্ষুদ্র পাটচাষিদের বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৪২৫ কোটি ৩৭ লাখ ৫৬৩ টাকা।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কাঁচা পাটের পাশাপাশি জুট ইয়ার্ন, টুওয়াইন, চট ও বস্তা রফতানি হয়। পাশাপাশি যায় হাতে তৈরি বিভিন্ন পাটজাত পণ্য ও কার্পেট। বিশ্বে উৎপাদিত কাঁচা পাটের ৫৫ শতাংশ উৎপাদন করছে ভারত।  সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবদান ৪০ শতাংশ। তবে পাট খাতের বৈশ্বিক রফতানি আয়ের ৭২ শতাংশই বর্তমানে বাংলাদেশের দখলে। মধ্যপ্রাচ্যের মন্দা অর্থনীতি বাংলাদেশকে পাট রফতানির আয়ে পিছিয়ে দিচ্ছে। বর্তমানে পাট রফতানি আয়ে ভারতের অংশীদারিত্ব ১৯ শতাংশ। তাছাড়া চীন, নেপাল ও পাকিস্তানের প্রত্যেকের অবদান রয়েছে প্রায় এক শতাংশ করে।
সূত্র আরো জানায়, সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কৃষকের হাতে পাট থাকে। মৌসুমের শুরুতে এ বছর পাটের মণপ্রতি দাম ছিল ১৫০০-১৭০০ টাকা। বিজেএমসির হাতে পাট না থাকায় ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা এখন হঠাৎ করেই এর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। পাট বিক্রি হয়েছে দুই হাজার থেকে ২২৫০ টাকা মণে। মৌসুমের শেষে পাটকলগুলোতে দ্বিগুণ দামে পাট বিক্রি করেছে ফড়িয়ারা। অথচ এক মাস আগে পাটের দাম তুলনামূলকভাবে কম থাকলেও বিজেএমসি তখন কৃষকদের কাছ থেকে পাট কিনতে পারেনি। ফলে ফড়িয়াদের কাছে কৃষক সস্তায় পাট বিক্রি করতে বাধ্য হয়। এখন মজুদ করা সেই পাট চড়া দামে সরকারি মিলে সরবরাহ করছে ফড়িয়ারা। পাটের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিজেএমসিকে গচ্চা দিতে হবে প্রায় ১৮০ কোটি টাকা। পাশাপাশি পাওনা পরিশোধ না হলে বাকিতে পাট না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র পাট চাষি সমিতি।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী এবার সারাদেশে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টর জমি। বিগত বছর সারাদেশে ৬ লাখ ৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়। বাংলাদেশ ও ভারতে বিশ্বের মোট পাটের ৯০ শতাংশ উৎপাদিত হয়। দুই দেশই নিজের ব্যবহারের পাশাপাশি চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাট, পাট সুতা ও পাটের তৈরি বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে।
অন্যদিকে বিজেএমসি সচিব এ কে এম তারেক জানান, টাকার অভাবে বিজেএমসি পাট কিনতে পারছে না। মিলগুলোর কোনোটাতে এক সপ্তাহ আবার কোনোটাতে দুই সপ্তাহের পাট মজুদ আছে। পাটের অভাবে মিলগুলো যাতে বন্ধ না হয়, সেজন্য বিজেএমসি পাট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করছে। ব্যবসায়ীরা সময়মতো পাটের জোগান দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মূলত মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নীতির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটে পাট ও পাটজাত দ্রব্য রফতানিতে এবার ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে। আর মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাট কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দ চাইলেও এখনো টাকা পাওয়া যায়নি। তবে পাটকলগুলোর যন্ত্রপাতি আধুনিকায়ন হলে ও সঠিক সময়ে টাকা ছাড় করলে সেগুলোকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি কৃষকদেরও পাটচাষে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১০:১৫:২৯ ● ৫২৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ