ঈগলের ভোট নৌকায় যাওয়ার আভাস তৃণমূলেকাউখালীতে নির্বাচনী হিসাব মিলাতে ব্যস্ত ভোটার ও প্রার্থীরা

প্রথম পাতা » পিরোজপুর » ঈগলের ভোট নৌকায় যাওয়ার আভাস তৃণমূলেকাউখালীতে নির্বাচনী হিসাব মিলাতে ব্যস্ত ভোটার ও প্রার্থীরা
মঙ্গলবার ● ২ জানুয়ারী ২০২৪


কাউখালীতে নির্বাচনী হিসাব মিলাতে ব্যস্ত ভোটার ও প্রার্থীরা

পিরোজপুর সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পিরোজপুর-২ (কাউখালী- ভান্ডারিয়া-নেছারাবাদ-) আসনে শেষ মূহুর্তে জমে উঠেছে ভোটের লড়াই। এই আসনটিতে ৭ জন প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে ১৪ দলীয় জোট প্রার্থী ও জাতীয় পার্টি জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নৌকা ও জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ মহিউদ্দিন মহারাজের ঈগল প্রতীকের মধ্যে। এই আসনে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী অপর প্রার্থীরা হলেন, তরিকত ফেডারেশনের মোহাম্মদ জাকির হোসাইন, গণফ্রন্ট দলের মোঃ মাহাতাব উদ্দিন মাহমুদ ,বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মোহাম্মদ মিজানুর রহমান , ন্যাশনাল পিপলসের মোহাম্মদ আবুল বাশার ,বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোঃ সগির মিয়া। পিরোজপুর -২ আসনটিতে  ১ লক্ষ ৯২ হাজার পুরুষ এবং ১ লক্ষ ৯১ হাজার নারী ভোটার সহ মোট ৩ লক্ষ ৮৪  হাজার ৪ শত ৯৩ ভোট রয়েছে।

এই আসনের ৭ বারের  এমপির মধ্যে ৫ বার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা জাতীয় পার্টি জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এইবার প্রথম বাইসাইকেল রেখে তিনি আওয়ামী লীগের শরিক জোট হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন।  অপরদিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্ব থেকেই  আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপির  সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী পিরোজপুর জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ মহিউদ্দিন মহারাজ নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার চেষ্টাকরলেও দলীয় মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তী সময় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে শুরু করেন নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগলের পক্ষে আসনের  উপজেলা গুলোতে ব্যাপক  সাড়া জাগিয়ে তোলেন। নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে মহিউদ্দিন মহারাজ হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে সকলকে কাছে টানেন।এমনিভাবে প্রতিটি উপজেলার ইমাম সমিতির নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে সকল মসজিদের ইমামদের সাথে সভা করে ভুরিভোজ ও উপটৌকন দিয়ে
তাদেরকেও কাছে আনতে চেষ্টা করেছেন তিনি।
একই ভাবে তিনি আসনের তিনটি উপজেলার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান , দুই পৌরসভার মেয়র, ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সাবেক চেয়ারম্যান, মেম্বারদেরকে কাছে ডেকে তাদের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঈগলের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে মরিয়া হয়ে উঠেন । নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে এবং পরে  মহিউদ্দিন মহারাজ একাই মাঠচষে বেড়ান দীর্ঘ সময়। এমনকি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ইউনিয়নে ১৫ ই আগস্ট  উপলক্ষে ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা প্রদান করে জাতীয় শোক দিবস পালনের ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। যার ফলে সকলের কাছে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। আর নির্বাচনের সূচনা থেকেই আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নির্বাচনী মাঠে না আসায় একতরফা ভাবে মহিউদ্দিন মহারাজ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ , ছাত্রলীগ ,যুবলীগ সহ সকল পেশার মানুষদেরকে ঈগল মার্কার প্রচারে সম্পৃক্ত করেন। তারা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাঠে ঘাটে গ্রাম-গঞ্জে সর্বত্রই স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে মিটিং মিছিল লিফলেট বিতরণ করে ঈগলের পক্ষে ভোট আদায়ের চেষ্টা করছেন। এই স্বতন্ত্র প্রার্থী   মহিউদ্দিন মহারাজের ঈগল প্রতীকের যখন চারিদিকে জয়জয়কার ঠিক তখনই বাজে বিপত্তি। কারণ সাধারণ মানুষ  আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নির্বাচনী মাঠে আসবেন না ভেবেই  সকলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে যখন জোয়ারে গা ভাসায়।  ঠিক তখনই শুরু হয় নির্বাচনী বিপরীত মুখি ঝড়। গত ২৯ শে ডিসেম্বর বরিশালে বিশাল এক নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে তার মনোনীত নৌকার প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট চান। এরপরেই আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পক্ষে জনতার দ্বারে দ্বারে প্রধানমন্ত্রী নৌকার পক্ষে ভোটের দাবি করেন তার সমর্থক গোষ্ঠী। যার ফলে ঈগলের জমানো ভোট ব্যাংকে ভাটা লেগে নৌকার পালে হাতছানি দেওয়া শুরু করে। যেখানে শুধু একতরফা ঈগলের পোস্টার, ব্যানার, মাইকিং ,মিটিং ,মিছিলে জমজমাট ছিল মাঠ ঘাট সেখানেই আজ চলছে নৌকার প্রচার অভিযান। মাঠে ঘাটে সর্বত্রই আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর স্ত্রী ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রতিদিন নির্বাচনী এলাকার পথে ঘাটে। যার ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই নির্বাচনের গতিবিধি পাল্টে গিয়ে নৌকার পালে হাওয়া লাগতে শুরু করে। এমন আভাস পাওয়া যায় কাউখালী ভান্ডারিয়া এবং নেছারাবাদ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভোটারদের সাথে আলাপ করে।
সরজমিন ঘুরে ভোটারদের সাথে আলাপ করে  জানাযায় যে শহর মুখী মানুষ , যুব সমাজ ও নতুন ভোটারেরা বেশিরভাগ লোক  স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন মহারাজের ঈগল মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য উৎসাহী।অন্যদিকে এতদিনের জমানো নির্বাচনী মাঠের অধিকাংশ বয়স্ক মানুষ অভিমত ব্যক্ত করে গুরুত্বপূর্ণ চারটি তথ্য উপস্থাপন করেন সংবাদকর্মীদের কাছে।এর মধ্যে হিন্দু সম্পদের অধিকাংশ মানুষের অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে জানান আমরা নৌকা ছাড়া অন্য কিছুতে ভোট দিলে কেউ বিশ্বাস করে না। অপরদিকে বয়-বৃদ্ধ অনেকেই জানিয়েছেন ৩৭ বছরের  ইতিহাসে এই আসনটি একটি শান্তিপূর্ণ আসন হিসেবে চেনেন। কারণ হিসেবে বলেছেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু  রাজনীতিতে আসার পর থেকে  প্রতিহিংসার রাজনীতি করেননি। হিন্দু ,মুসলিম,  জাতীয় পার্টি ,বিএনপি ডানপন্থী কিংবা বামপন্থী দলের সকলের সাথেই ছিল সমান সম্পর্ক এক কথায় দলীয় কোন প্রভাব আছে কিনা এই আসনের ভোটাররা জানেন না। যে কারণে তারা আবারো শান্তিতে বাঁচতে চান।এছাড়াও অনেকে জানিয়েছেন নৌকার সরকার  আছে নৌকার বিপক্ষে ভোট দিলে লাভ কি? অন্যদিকে সরকারের বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীনদের যে গৃহ দেওয়া হয়েছিল এই সমস্ত আবাসনে বসবাস করা মানুষেরা জানান ঘর দিয়েছেন হাসিনা তার প্রার্থী ছাড়া আমরা কাউকে চিনি না। সবকিছু মিলে নির্বাচনে একক কোনো প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা এখন ক্ষীণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই আসনে  ৭ জন প্রার্থীর ৫ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও
নৌকা এবং ঈগলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা ক্রমশ বাড়ছে বলে অভিজ্ঞ জনেরা মতামত প্রকাশ করেছেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন মহারাজ এর পক্ষে নেতৃত্বদানকারী আমরাজুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর মুন্সী বলেন, নির্বাচনে ঈগলের বিজয় নিশ্চিত। তিনি দাবি করেন নৌকা দশ পার্সেন্ট ভোট পেলেও বাকি ভোট স্বতন্ত্র প্রার্থী পেয়ে বিজয়ী হবেন।

আওয়ামী লীগ মনোনীত জোট প্রার্থী আনোয়ার মঞ্জুর পক্ষে কাউখালী উপজেলার জাতীয় পার্টি জেপির সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল মাহফুজ পায়েল বলেন, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এই আসনে ৩৮ বছর এমপি হিসেবে ছিলেন তিনি দক্ষিণ অঞ্চলের ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছেন, শিক্ষা খাতে তার অবদান অনেক বেশি তিনি  উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  বহুতল বিশিষ্ট ভবন করেছেন, এবং এই এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় তার অবদান সবচেয়ে বেশি বলেও দাবি করেন তিনি।তিনি জানান বর্তমান নির্বাচনে  নৌকার প্রার্থী কোন আচরণ বিধি লঙ্ঘন না করে কেন্দ্রভিত্তিক প্রচার ক্যাম্প করেছে। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী শুধু কাউখালী উপজেলায় উপজেলা সদর সহ প্রতিটি ইউনিয়নের মোড়ে মোড়ে প্রায় আড়াইশো  নির্বাচনী অফিস তৈরি করে ৮-১০ বছরের শিশুদের হাতে টাকা তুলে দিয়ে তাদেরকে প্রচার প্রচারণা , মিটিং মিছিলে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি আরো জানান শিশু ও ছাত্রদের  হাতে টাকা তুলে দিয়ে পরিবেশ দূষণ করার কারণে এই সমস্ত অভিভাবকরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে  নৌকার প্রার্থী মঞ্জুকে পুনরায় বিজয়ী  করবেন বলে তিনি দাবি করেন।
সব মিলিয়ে এই আসনের নির্বাচনে বিজয়ীর নাম জানতে আমাদের  অপেক্ষা করতে হবে নির্বাচনী ফলাফল পাওয়া পর্যন্ত ।

 

 


আরএইচএম/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২২:৫২:০৪ ● ৯২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ