নিষেধাজ্ঞা মানছে না কেউদুমকিতে মা-ইলিশ শিকারের মহোৎসব

প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » নিষেধাজ্ঞা মানছে না কেউদুমকিতে মা-ইলিশ শিকারের মহোৎসব
শুক্রবার ● ১৪ অক্টোবর ২০২২


দুমকিতে অবরোধে চলছে মা-ইলিশ শিকারের মহোৎসব

দুমকি (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

প্রজনন মৌসুমে মা-ইলিশ সংরক্ষণে প্রশাসনিক অভিযানের মধ্যেও পটুয়াখালীর দুমকিতে চলছে  ইলিশ শিকারের মহোৎসব। জনবল স্বল্পতা আর যানবাহন সংকটে দায়সাড়া অভিযান এড়িয়ে পায়রা, পাতাবুনিয়া ও লোহালিয়া নদীতে দিনে-রাতে সমান তালে চলছে ইলিশ শিকার। উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, থানা পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিবর্গের সমন্বয়হীনতার সুযোগে পরিবারের ছোট ছোট শিশু-কিশোর সন্তানদের ব্যবহার করে জেলেরা দেদাছে শিকার করছে মা-ইলিশ।  দুর্বল ডিজেল ইঞ্জিনের ট্রলারে উপজেলা প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান ফাঁকি দিয়ে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে কৌশলী জেলেরা ইলিশ শিকারের উৎসবে মেতে ওঠেছে। অবরোধের ২/৩দিন পরেই পায়রা, পাতাবুনিয়া ও লোহালিয়া নদীর তীরবর্তি জেলেরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। নির্র্বাহী মেজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চললেও তাদের ঠেকাতে পারছে না প্রশাসন। প্রশাসন অবশ্য অভিযোগটি মানতে নারাজ। তাদের দাবি অভিযান মোটামুটি সফল হচ্ছে। মৎস্য বিভাগের নিয়মিত অভিযানে ২/৩টি নৌকা-ট্রলার ও কিছু পরিমান ইলিশ জাল আটক হওয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, উপজেলার পাংগাশিয়া, আঙ্গারিয়া, লেবুখালী ও মুরাদিয়া ইউনিয়ন বেষ্টিত পায়রা, পাতাবুনিয়া ও লোহালিয়া নদীর অন্তত: ১১টি পয়েন্টে জেলেরা দিনে রাতে সমান তালে ইলিশ শিকার করছে। কম সময়ে বেশী ইলিশ ধরা পরায় প্রজন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকেই (৭ অক্টোবর) নানান কৌশলের আশ্রয় নিয়ে নদীতে মা-ইলিশ শিকারে নামছে। নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা করছে না কেউ। মৎস্য বিভাগ ও প্রশাসনের বিশেষ অভিযানের গতিবিধি লক্ষ্য রেখেই ওইসব জেলেরা নৌকা-জাল নিয়ে নদীতে ইলিশ শিকার করছে। খোঁজ নিয়ে জানাযায়, স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে জেলেরা তাদের পরিবারের ছোট ছোট শিশু-কিশোর সন্তানদের হাতে নৌকা-জাল তুলে দিয়ে ইলিশ শিকার করছে। সূত্রমতে অবরোধকালে প্রতিটি জেলে পল্লীতে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। প্রতিটি জেলে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা নৌকা-জাল নিয়ে নদীতে নামে আর নারী, শিশু-যুবা সবাই নির্ঘুম পাহাড়ায় রাত কাটায় নদীর তীরে। দূর-দুরান্তে অভিযানের ট্রলার দেখলেই মোবাইল ফোনে স্ব স্ব জেলেদের সতর্ক সংকেত জানিয়ে দেয় তারা। সংকেত পাওয়া মাত্রই দ্রুত নৌকা-জাল নিয়ে নিরাপদ গোপনীয় ঝোপ-ঝাড়, পাতাবন ও ছোট ছোট নালা খালে ঢুকে আত্মগোপণে চলে যায়। অভিযানের ট্রলার ফাঁকা নদীতে মহড়া দিয়ে চলে গেলে ফের জাল ফেলে রাতভর ইলিশ শিকারে মেতে ওঠে।
সূত্রটি আরও জানায়, চলতি মৌসুমে টনকে টন ইলিশ ধরা পরলেও তা বাজারজাত হচ্ছে না। নির্দিষ্ট কয়েকজন পাইকার বিভিন্ন ঘাটে গোপনে মাছগুলো কিনে নিয়ে মওজুদ করে রাখছে। অবরোধের পরে তা বাজারে তোলা হবে। খোঁজ নিয়ে জানাযায়, উপজেলার হাজিরহাট, লেবুখালী ফেরীঘাট, ভাঙ্গার মাথা, আঙারিয়া বন্দর, পাতাবুনিয়ার হাট, জেলেপাড়া, কদমতলা বাজার, উত্তর মুরাদিয়া ও জোয়ারগরবদিসহ অন্তত: ১১টি মাছঘাট এলাকা সংলগ্ন পাইকারদের গোপনীয় আস্তানায় ককশেড ভর্তি করে ইলিশ মাছ মওজুদ রাখা হচ্ছে। দিনের বেলায় কোথাও ইলিশের চিহ্নমাত্র দেখা না গেলেও প্রতিদিন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পর পরই নৌকা-জাল গুটিয়ে সারারাতের আহরিত ইলিশ বস্তায় ভর্তি করে জেলেরা যে যার মতো সটকে পড়ছে। একদিকে ভ্রাম্যমান আদালতের বিশেষ অভিযান চলছে অন্য দিকে এখানের নদ-নদীতে দেদারছে ইলিশ শিকারও অব্যাহত আছে।
ইলিশ শিকার রোধ প্রশ্নে উষ্মা প্রকাশ করে আঙ্গারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ গোলাম মর্তুজা বলেন, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও সমন্বয়হীনতার কারণে এ বছর ঠেকানো যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, আগের বছর এবং তারও আগের বছর ব্যপক প্রচারাভিযান হয়েছে। উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে জেলেদের উপস্থিতিতে রজানৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সভা করে ইলিশ রক্ষায় কঠর অবস্থান নেয়া হয়। ওই সময় শতভাগই সফল হয়েছে। কিন্ত এ বছর শুরুতে তেমন সভা-সেমিনার কিম্বা প্রচারাভিযান চোখে পড়েনি, জানিনা হয়েছে কিনা। তবে অভিযানের সপ্তাহ খানেক পরে দেরিতে হলেও উপজেলার মাসিক আইনশৃঙ্খলা মিটিংএ এ বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ততক্ষনে প্রজনন মৌসুমের অর্ধেকের বেশী সময় পেড়িয়ে গেছে। যা হবার তাই হচ্ছে।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, নিয়মিত অভিযানে (৭অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত) ফারুক হাওলাদার নামের এক জেলেকে আটক, ২টি ইঞ্জিনচালিত নৌকাসহ ১৫হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে। উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো: নুরুল ইসলাম জনবল স্বল্পতা ও দ্রতযান সংকটের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমরা আমাদের সীমিত শক্তি দিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আল-ইমরান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নদীতে তেমন একটা নৌকা-জাল নেই। ইলিশ শিকার হচ্ছে না বলব না, তবে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। স্থ-ানীয় লোকজন সহযোগিতা করতে এগিয়ে এলে শতভাগই নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবো।

এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:২১:০৯ ● ১০৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ