আগরে রাতেই ভোট দেওয়া হয়ে গেছে: রিজভী

প্রথম পাতা » রাজনীতি » আগরে রাতেই ভোট দেওয়া হয়ে গেছে: রিজভী
বৃহস্পতিবার ● ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯


নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র কে হবেন তা ভোটের আগের রাতেই নির্ধারিত হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ভোটের দিনের দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তার এ মন্তব্য আসে। তিনি বলেন, আজকে যে নির্বাচন দেখছেন তা নির্ধারণ হয়ে গেছে, ঠিক হয়ে গেছে বুধবার রাতেই। যাকে দেওয়ার, সরকারের মনোনীত যিনি, তাকে ভোট দিয়ে ব্যালট অলরেডি সেখানে (বাক্সে) পড়ে গেছে। ব্যালট বক্স স্টাফিং হয়ে গেছে গত রাতেই। নিঃসন্দেহে। আজকে শুধু ফলাফল ঘোষণা করবে।
বিগত ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে ভরাডুবির পর সরকারে বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ তোলা বিএনপি ও শরিকরা ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং দুই সিটির ৩৬টি নতুন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। নিরুত্তাপ এ নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যেও তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। অধিকাংশ কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। সে প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, দেখুন, আজকে সারা শহরের কী পরিস্থিতি, কী অবস্থা! কোথাও কোনো উত্তাপ, কোনো প্রতিযোগিতা আছে কী? নির্বাচন তো আমাদের দেশে একটা উৎসব। সেই উৎসবের লেশমাত্র আছে কোথাও? এখানে বিরাজ করছে এক ধরনের কবরের নীরবতা।
বিএনপি নেতা রিজভীর ভাষায়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার গণতন্ত্রের উত্তাপ, গণতন্ত্রের প্রতিযোগিতাকে ‘হত্যা’ করেছে। বাংলাদেশকে একটা স্বৈরাচারী দেশে পরিণত করেছে তারা। এখন একটা নির্বাচন দেখাতে হবে, দেখাচ্ছেন। অর্থা’ স্বৈরশাহীর চেহারার মধ্যে প্লাস্টিক সার্জারি করে একটা গণতন্ত্রের চেহারা দেখাতে চাচ্ছেন তারা। কিন্তু সেটাও তারা (সরকার) পারছেন না, ওইটাও ব্যর্থ হচ্ছে। স্বৈরশাহীর চেহারা এত নির্মম-নিষ্ঠুর যে, প্লাস্টিক সার্জারি করে ওটা ঢেকে রাখতে পারছেন না, ওটা বেরিয়ে পড়ছে।
ঢাকা উত্তরের ভোটার সিইসি কে এম নূরুল হুদা সকালে উপ নির্বাচনে ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ভোটকেন্দ্রে ভোটার না আসার দায় নির্বাচন কমিশনের নয়। এ দায় রাজনৈতিক দলগুলোর এবং প্রার্থীদের। তার ওই বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, জনগণ ও দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে বর্তমান সিইসি ও নির্বাচন কমিশনের কোনো ‘গ্রহণযোগ্য’ নেই। যে দেশে ভোটের আগের রাতেই ব্যালট পেপারে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়, ভোট চুরি হয়, ভোট দিতে পারে না, সেদেশের জনগণের কাছ থেকে বর্তমান নির্বাচন কমিশন ধিক্কার ছাড়া অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য নয়।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, সিইসি জনগণকে প্রতারিত করেছেন। তার আজ্ঞাবহ জীবন দর্শনের জন্য গণতন্ত্র এখন রাহুগগ্রস্থ। ৩০ ডিসেম্বর ভোট চুরির মহোৎসব করে একটা অবৈধ শাসকগোষ্ঠিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসিয়ে দেশকে গভীর সংকটে নিপতিত করার হোতা হচ্ছেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা। দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো এখন এই কমিশন থেকে ‘মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব। অবৈধ সরকার নিজেদের আসন আরো পাকাপাকি করতে বিএনপির চেয়ারপারসনকে নিয়ে ষড়যন্ত্রে মেতেছে মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, অসুস্থ দেশনেত্রীকে টানাহেঁচড়া করে ঘনঘন আদালতে নিয়ে আসা, অন্ধকারাচ্ছন্ন শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশে তাঁর জন্য আদালত স্থাপন করা, তাঁর পছন্দমতো চিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসা করতে না দেওয়া, তাঁকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালে না নেওয়া, সাত দিন পর পর নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়া, আত্মীয়স্বজনকে দেখা করতে দিতে বিলম্ব করা, অস্বাস্থ্যকর ও কীটপতঙ্গে ভরা কারাকক্ষে থাকতে বাধ্য করা। খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, যে মামলায় অন্যরা জামিন পেয়েছেন, সেই একই মামলায় তাঁকে জামিন না দেওয়া ইত্যাদিতে প্রমাণিত হয়, সরকার দেশনেত্রীকে এক অশুভ পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে চায়। সে জন্যই বেআইনিভাবে নির্দোষ খালেদা জিয়াকে আটকে রাখা হয়েছে। ২৯ ডিসেম্বরের মিডনাইট নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা হবে বলেই খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েক মাস আগেই কারান্তরীণ করা হয়েছে। গণতন্ত্রের সূর্যকে অস্তগামী করার জন্যই খালেদা জিয়া এখন কারাগারে। আমরা আবারও আহ্বান জানাচ্ছি, এই মুহূর্তে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু ও মুনির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৩:৪৯:৫৭ ● ৮৯৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ