বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের যুক্ত করা হবে-প্রধানমন্ত্রী

প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের যুক্ত করা হবে-প্রধানমন্ত্রী
রবিবার ● ২৪ অক্টোবর ২০২১


দুমকিতে ‘পায়রা সেতু’ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

দুমকি (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

 

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশকে আর কেউ পেছনে টানতে পারবে না। ৭৫’ পরবর্তি সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি বাধাগ্রস্থ করাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। বরিশাল বিভাগের মেঘা উন্নয়ন প্রকল্পের বর্ণণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজকে সারা বিশে^ উন্নত একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের যুক্ত করা হবে।
গতকাল রবিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের লেবুখালীতে পায়রা নদীর ওপর অত্যাধুনিক ‘পায়রা সেতু’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেছেন। একই অনুষ্ঠানে ঢাকা-সিলেট ও সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে পৃথক এসএমভিটি লেনসহ ৬লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পেরও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম প্রকল্পগুলোর ওপর প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস গণভবন থেকে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রকল্পগুলোর ওপর পৃথক ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়। প্রকল্পের উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী পটুয়াখালী এবং সিলেট প্রান্তে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত প্রশাসন, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এমপি, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।
পায়রা সেতুর টোল প্লাজায় পটুয়াখালী প্রান্তে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি, পটুয়াখালী-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহজাহান মিয়া, পটুয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য আসম ফিরোজ, পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা, পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ মহিববুর রহমান, বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথ, বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য বেগম নাসরিন জাহান রতœা, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, মহিলা আসন ২৯’র সংসদ সদস্য কাজী কানিজ সুলতানা হেলেন, মহিলা আসন ২৮ এ্যাডভোকেট সৈয়দা রুবিনা আক্তার মীরা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ খলিলুর রহমান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মোঃ ইউনুচ, শেখ হাসিনা সেনা নিবাস কমান্ডার জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোঃ জিয়াউর রহমান, বিভাগীয় কমিশনার মোঃ সাইফুল হাসান বাদল, বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান, সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আব্দুস সবুর, প্রবিপ্রবি ভিসি ড. সদেশ চন্দ্র সামন্তসহ বরিশাল,পটুয়াখালী জেলার জেলা প্রশাসনের সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশে মাঝেই কিছু কিছু ঘটনা মাঝে মাঝে ঘটছে, ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো হচ্ছে, সেটা আপনারা নিজেরাও টের পান যাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। সেই সঙ্গে প্রচারও চালানো হয়।’তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যতই উন্নতি করি, ভালো কাজ করি, একটা শ্রেণীই আছে বাংলাদেশের বদনাম করতেই তারা ব্যস্ত।’ তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘এ দেশের স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক তারা কি তা চায় না? একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তাদের একটু কদর বাড়ে। সেজন্য উন্নয়নটা তারা দেখে না বরং ধ্বংসই সবসময় করতে চায়, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। এ ব্যাপারে দেশবাসীকে আরও সতর্ক থাকতে হবে।’
এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, আজ পায়রা নদীর ওপর দৃষ্টিনন্দন পায়রা সেতু নির্মিত হলো। এর ফলে এখানে পর্যটনের সুযোগ যেভাবে বৃদ্ধি পাবে, তেমনি সরকার পায়রায় যে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করছে, সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগও সৃষ্টি হবে। আর সমগ্র বাংলাদেশেও একটা যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরি হয়ে যাবে। তিনি দেশকে এগিয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান।
এদিকে পায়রা সেতুর উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কে ফেরীবিহীন সড়ক যোগাযোগ চালু হয়েছে। পায়রা সেতু উন্মুক্ত হওয়ায় বরিশাল, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের সঙ্গে পর্যটন নগরী কুয়াকাটা ও পায়রা বন্দর পর্যন্ত সড়ক পথ ফেরিবিহীন হলো। এর আগে বরিশাল থেকে মহাসড়ক পথে কুয়াকাটা পৌঁছাতে ছয়টি স্থানে ফেরি পার হতে হতো। চার লেনের এই পায়রা সেতুর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪৭০ মিটার, প্রস্থ ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার। জলতল থেকে সেতুটি ১৮ দশমিক ৩০ মিটার উঁচু। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর শাহ আমানত সেতুর আদলে নান্দনিক নকশায় সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে।
সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, সেতুর উভয় পারে সাত কিলোমিটারজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে সংযোগ সড়ক। নদীর মাঝখানে মাত্র একটি খুঁটি বা পিলার ব্যবহার করা হয়েছে। এ কারণে নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে না।
এ ছাড়া এই সেতুতে ‘ব্রিজ হেলথ মনিটর (সেতুর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণব্যবস্থা)’ স্থাপন করা হয়েছে। এতে বজ্রপাত, ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই যানবাহন চলাচলে সেতুর কোনো ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হলে আগেভাগেই সংকেত পাওয়া যাবে। আধুনিক টোল প্লাজা নির্মাণ করা হয়েছে। রাখা হয়েছে উভয় পার্শ্বে যানবাহনের ওজন পরিমাপের ব্যবস্থা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সরকার ২০১২ সালের মে মাসে পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
পায়রা সেতু নির্মাণে অর্থায়ন করেছে কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট ও ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট। নির্মাণকাজ করেছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লংজিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন।

এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:২১:৩০ ● ২৪৪ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ