আমতলীতে আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ৩৮

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলীতে আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ৩৮
বৃহস্পতিবার ● ১১ মার্চ ২০২১


আমতলীতে আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ৩৮

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥


বরগুনার আমতলী উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আগামী ১১ এপ্রিল। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ দলীয় মনোনয়ন পেতে ৩৮ জন দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন। উপজেলা আওয়ামীলীগ তৃণমুল নেতাকর্মীদের মতামত নিয়ে মনোনয়ন প্যানেল তালিকা করে ৩১ জনের নাম বরগুনা জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন। জেলা আওয়ামীলীগ সুপারিশ করে ওই তালিকা থেকে ৩০ জনের নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছে বলে দলীয় সুত্রে জানাগেছে।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলায় গুলিশাখালী, কুকুয়া, আঠারোগাছিয়া, হলদিয়া, চাওড়া ও আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ১১ এপ্রিল। এ ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩৮ জনে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। উপজেলা আওয়ামীলীগ তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে ইউনিয়নে ইউনিয়নে বিশেষ বর্ধিত সভা শেষে ৩১ জনের প্যানেল তালিকা বরগুনা জেলা আওয়ামীলীগ অফিসে পাঠিয়েছে। ওই তালিকা থেকে ক্রমানুসারে জেলা কমিটি ৩০ জনের সুপারিশ করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছে বলে দলীয় সুত্রে জানাগেছে। দলীয় বিশ^স্থ সুত্রে জানাগেছে, গুলিশাখালী ইউনিয়নে ছয় জনের মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ¦ অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম গত ১০ বছর জনগনের সেবক হিসেবে কাজ করলেও তার প্রতি জনগনের অসন্তোষ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে তার বাবা মোঃ মফিজ উদ্দিন শরীফ স্বাধীনতার সময় পিস কমিটির সদস্য ছিলেন। কিন্তু এলাকাবাসী জানান তার বাবা পিস কমিটির সদস্য থাকলেও তিনি মানুষের ক্ষতি করেনি। অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনি তরুন হিসেবে রাজনীতিতে পদার্পন করলেও তার বড় ভাই প্রকৌশলী আব্দুস ছত্তারের বিরুদ্ধে রয়েছে দূর্ণীতির বিস্তার অভিযোগ। তেমন জন সমর্থন না থাকলেও বড় ভাইয়ের কালো টাকাই মনিরের নির্বাচনের মুল হাতিয়ার। এছাড়া ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুল  মন্নান মৃধার ভাতিজা হিসেবে ব্যাপক পরিচিত মোঃ আসাদুর রহমান আসাদ মৃধার  রয়েছে জনপ্রিয়তা কিন্তু বিতর্কও তার পিছু ছাড়ে নি। হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন  অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে তিনি হত্যা মামলাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে দাবী করেন। ওই ইউনিয়নের অপর নেতা উপজেলা যুবলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সোবাহান লিটন গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। কুকুয়া ইউনিয়নে তিন জনের প্যানেলের মধ্যে সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন তালুকদারের ছোট ভাই বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ বোরহান উদ্দিন মাসুম তালুকদার গত পাঁচ বছরে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দায়িত্ব পালন কালে  বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পরেছে। অপর দিকে ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ¦ সামসুদ্দিন আহম্মেদ ছজুর ভাইয়ের ছেলে মাওলানা মোঃ ফজলুল হক চাচার সুবাদে জনপ্রিয় হলেও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ দেলোয়ার হোসেন গাজীর সাথে জনগনের কোন সম্পৃক্ততা নেই। আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের সাত জনের প্যানেল মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ হারুন অর রশিদ হাওলাদার দলছুট নেতা। ২০০২ সালে তিনি ছিলেন আমতলী উপজেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। ২০১৬ সালে আলাদিনের চেরাগের বদৌলতে দল পাল্টে তিনি ইউপি চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন হাতিয়ে নেন। এছাড়া গত ১০ বছরে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন কালে তিনি কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বড় ভাইয়ের স্ত্রীর নামে ভিজিএফসহ সকল কিছুতেই ছিল তার স্বজনপ্রীতি। তার বড় ভাই কালো টাকার মালিক অবসরপ্রাপ্ত কাষ্টমস কর্মকর্তা নুরুল ইসলামের প্রভাবেই তিনি হয়ে উঠেন জনপ্রিয়। কিন্তু গত ১০ বছরের কর্মকান্ডে এখন তিনি জনগণ থেকে বিছিন্ন। ওই ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ¦ গোলাম ছরোয়ার ফোরকানের ছোট ভাই মোঃ রফিকুল ইসলাম রিপন হাওলাদার চেয়ারম্যান থাকাকালিন অবস্থায় তার নামে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ছিল। কিন্তু গত ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকায় তার সেই অভিযোগ তলিয়ে গেছে। তার পরিবার বিএনপি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত বলে জানান এলাকাবাসী। তবে তার রয়েছে এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা। এছাড়া ওই ইউনিয়ন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন খানের জেষ্ঠ পুত্র অ্যাডভোকেট মোঃ গোলাম দেলোয়ার হোসেন খাঁন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক তালুকদারের এলাকায় কিছু জনপ্রিয়। অপর প্রার্থী  ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি মোঃ আব্দুল ছালাম সোহেল মোল্লা এবং সাধারণ সম্পাদক মোঃ হাবিবুর রহমান একেবারেই নতুন মুখ। আমতলী উপজেলা জাতীয় শ্রমিক লীগ সভাপতি মোঃ জহিরুল ইসলাম খোকন মৃধা অতিথি হিসেবে আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ মনোনয়ন প্রত্যাশী। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতার আসার পরে রাতারাতি তিনি বদলে যান। গড়ে তোলেন শ্রমিক সংগঠন। আমতলী-তালতলী উপজেলার বিভিন্ন সড়কে মাহেন্দ্রা গাড়ী নামিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। হলদিয়া ইউনিয়নে পাঁচ জনের প্যানেলের মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ শহীদুল ইসলাম মৃধার বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। বিএনপি জোট সরকারের আমলে তিনি তার ইউনিয়নে উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে ৬ টি  আয়রন ব্রীজের কাজ পান। ওই সময়ে উপজেলা প্রকৌশলী আতিয়ার রহমানের সাথে আতাত করে ওই কাজ না করে সমুদয় টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন। জমি দখল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে কলেজ করে টাকা আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতি ছিল তার সাধারণ ব্যাপার। ১০ বছরের তার কর্মকান্ডে হলদিয়ার মানুষ বিরক্ত। হলদিয়াবাসী এখন তার থেকে পরিত্রান চান। তার জনপ্রিয়তা নেই বললেই চলে দাবী এলাকাবাসীর। ওই ইউনিয়নে অপর প্যানেলভুক্ত সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম মোয়াজ্জেম হোসেন ফারুক মল্লিকের ছোট ভাই মোঃ আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিকের রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। তিনি এলাকাবাসীর কাছে  ক্লিন ইমেজের মানুষ হিসেবে পরিচিত। অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনির, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম ঝন্টু তালুকদারের ছেলে মোঃ দিলসাত পারভেজ রিপন তালুকদার ও সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুল লতিফ বিশ^াসের ছেলে মোঃ জাকির হোসেন বিশ^াসের তেমন জনপ্রিয়তা নেই। চাওড়া ইউনিয়নে তিন জনের তালিকার মধ্যে তিন জনই জনপ্রিয়তা শুন্য। এদের মধ্যে আলতাফ হোসেন হাওলাদার তিন বার নির্বাচন করে জামানত হারান। ফলে এলাকায় পরিচিত হলেও জনগনের সাথে তেমন সম্পৃক্ততা নেই। এছাড়া ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ আখতারুজ্জামান খান বাদলের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দূর্ণীতি, অনুপ্রবেশকারী এবং দলছুটের অভিযোগে তার নাম প্যানেল তালিকা থেকে বরগুনা জেলা আওয়ামীলীগ বাদ দিয়েছেন বলে নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে। তবে তিনি ইউনিয়নে জনপ্রিয়।
আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে ছয় জনের প্যানেল তালিকার মধ্যে তিন জন নতুন মুখ। অপর তিন জনের মধ্যে মোঃ হুমায়ূন কবির ২০১৬ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এক হাজার ৫’শ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন কিন্তু তিনিও সমালোচনার বাহিরে নন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন কাজে অনিয়মের অভিযোগ। গত নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনয়ন নিয়ে সুলতাল আহম্মেদ নওয়াব মিয়া ৫’শ ২৫ এবং বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে মোঃ মাহবুবুর রহমান জাফর বিশ^াস ৪’শতাধিক ভোট পেয়ে জামানত হারান। ওই ইউনিয়নে প্যালেন তালিকায় একমাত্র নারী বিএনপি নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম একে এম নুরুল হক তালুকদারের স্ত্রী শিউলি পারভীন মালা। তিনি তার প্রায়াত স্বামীর জয়প্রিয়তাই জনপ্রিয়। কিন্তু বাস্তবে তার কোন জনপ্রিয়তা নেই। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তিনি রাতারাতি খোলস পাল্টে বিএনপি ছেড়ে মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী হয়েছেন।
আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অ্যাডভোকেট এমএ কাদের মিয়া বলেন, যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আবেদন করেছেন সকলের নাম তালিকা করে বরগুনা জেলা আওয়ামীলীগ অফিসে পাছিয়েছি। বরগুনা জেলা আওয়ামীলীগ সুপারিশ করে কেন্দ্রিয় দপ্তরে পাঠিয়ে দিবে।
বরগুনার জেলা আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ গোলাম সরোয়ার টুকু বলেন, আমতলী উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেকের নাম কেন্দ্রিয় দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, চাওড়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান বাদল খাঁন জেলা আওয়ামীলীগ নেতাদের কটাক্ষ করে কথা বলা এবং জাতীয় পার্টি ও বিএনপি রাজনৈতিক সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে জেলা কমিটি তার নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:২৬:০৭ ● ৫৭৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ