বিএডিসির বীজ ধান সংকট কলাপাড়ায় আমন আবাদ নিয়ে কৃষক চরম উৎকন্ঠায়

প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » বিএডিসির বীজ ধান সংকট কলাপাড়ায় আমন আবাদ নিয়ে কৃষক চরম উৎকন্ঠায়
শুক্রবার ● ২৬ জুন ২০২০


এটি একটি প্রতীকী ছবি।

মেজবাহউদ্দিন মাননু ॥

কলাপাড়ায় মৌসুমের শুরুতেই আমন বীজের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কৃষকরা নির্ধারিত ডিলারের দোকানে ঘুরেও বিএডিসির বীজধান পাচ্ছেনা। ফিরছে খালি হাতে। তারা জানান, বীজতলা করার সময় পার হয়ে যাচ্ছে, অথচ বীজধান মিলছেনা। ফলে যথাসময় আমনের বীজতলা তৈরি নিয়ে বড় ধরনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কলাপাড়ায় বিএডিসির বীজ ধান বিক্রির যে কয়জন ডিলার রয়েছে এর মধ্যে কলাপাড়া শহরের গৌতম হাওলাদার, আলীপুরের শহিদ মুসল্লী, মহিপুরের সোহাগ ও ধানখালীর একজন বীজধান উত্তোলন করে বিক্রি করছে। তাঁরা যে পরিমান বীজধান পটুয়াখালী থেকে উত্তোলন করেছিল তা বৃস্পতিবার দুপুরে বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। এখন বিএডিসির কোন বীজধান বাজারে নেই। ফলে বীজের শঙ্কট প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। কৃষকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। অনেক কৃষক বলেছেন সিন্ডিকেট করে এটি কৃত্রিম সঙ্কট করা হয়েছে। পশ্চিম সোনাতলা গ্রামের বড় কৃষক হারুন মাঝি জানান, তার অন্তত ৯০ বিঘা জমির আমন আবাদের জন্য ২১০ কেজি বীজ ধানের প্রয়োজন। তিনি ব্রি-৪৯,২৩ এবং গুটি স্বর্ণা জাতের বীজধান খুজছিলেন। শহরের গৌতম হাওলাদারের দোকানে গিয়ে ফিরে গেছেন। যেখানে বিএডিসির বীজ ধান  ১০ কেজি বস্তা তিন শ’ টাকায় বিক্রির কথা তা বিক্রি করছে ৩৫০ টাকায়। তাও মিলছে না। আর বাইরের কোম্পানির বীজধান কিনতে হয় কৃষককে ৮০-৯০ টাকা কেজিতে। তাও ভেজাল। সোনাতলা গ্রামের বেল্লাল হোসেন এবং হোসেনপুর গ্রামের সুলতান হাওলাদার জানান, তারাও বীজধান সঙ্কটের শঙ্কায় পড়েছে। বীজতলা তৈরির এখন জো (সময়) তাই কৃষক শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, সরকারিভাবে কৃষককে ন্যায্যমূল্যে বীজধান ক্রয়ের জন্য বিএডিসি চাহিদার ৩০ ভাগ বীজধান ফি বছর সরবরাহ করে আসছে। এবছর চাহিদা বাড়িয়ে ৪০ ভাগ করা হয়েছে। কিন্তু গেল বছরের ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের তান্ডবে অধিকাংশ ধান চিটা হয়ে গেছে। ফলে শতকরা ৯৫ ভাগ কৃষক স্থানীয়ভাবে বীজধান সংগ্রহ করতে পারেনি। তাই চাহিদা হঠাৎ বেড়ে গেছে। উপকূলীয় জনকল্যান সংঘের সভাপতি জয়নাল আবেদীন জানান, বুলবুলের কারনে কোন কৃষক বীজধান সংগ্রহ করতে পারেনি। তাই এখন সকল কৃষকের বীজধানের প্রয়োজন রয়েছে। কৃষকরা জানান, আমন একমাত্র মৌসুম সকল জমিতে ধানের আবাদ করেন তারা। আর এখন বীজের সঙ্কটে চাষাবাদে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। কৃষি অফিসের দেয়া তথ্যমতে, কলাপাড়ায় আমন আবাদযোগ্য জমির পরিমান প্রায় ৮৬ হাজার একর। যেখানে ৮৬০ টন বীজধানের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু বিএডিসি থেকে থেকে সর্বোচ্চ ৪০ ভাগ সরবরাহ করা হলেও বাকি ৬০ ভাগ কৃষককে বাইরে থেকে চড়ামূল্যে কিনতে হবে। তাতে সঙ্কট কাটছে না। তবে কৃষিকর্মকর্তা বলেছেন আগামি রবিবার আরও কিছু বীজধান ডিলাররা আনবেন। তখন কৃষকরা বীজধান সংগ্রহ করতে পারবেন। কিন্তু বিএডিসির বীজ ধান যদি প্রান্তিক, বর্গাচাষীদের মধ্যে বিলি-বন্টন করা যেত তাইলে এরা উপকৃত হতো। নইলে ৮০-৯০ টাকা কেজি দরে বীজধান কিনে বীজতলা তৈরি করতে হবে। কৃষকরা আরও জানান, তারা সাধারণত অধিকাংশ জমিতে ব্রী-৪৯, ২৩, ১১, ৫১, ৫২, ৩২ ও ২২ জাত ছাড়াও গুটি স্বর্ণা জাতের ধানের আবাদ করেন। এছাড়া নিচু জমিতে স্থানীয় জাত মোটা কুটি অগ্রানী, ক্যারেঙ্গাল মোটা, মোথা মোটা জাাতের ধানের আবাদ করেন। এসব বীজধান বাজারে থাকা প্রয়োজন। বিএডিসির ডিলার গৌতম চন্দ্র হাওলাদার জানান, তিনি বিএডিসির প্রায় সাড়ে সাতটন ধানবীজ এনেছেন। আরও পাওনা রয়েছে আড়াই টন। সবশেষ বৃহস্পতিবার ২২৫ প্যাকেট ধানের বীজ এনেছিলেন। তা মুহুর্তে শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে কয়েক প্যাকেট বীনা জাতের ধানের বীজ রয়েছে। তার মন্তব্য বীজধানের সঙ্কটের সুযোগে এক শ্রেণির অখ্যাত কোম্পানি নিম্নমানের মিশ্রজাতের ধানের বীজ বাজারে ছেড়ে দিচ্ছে। যা কিনে কৃষক প্রতারিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

এমইউএম/এনবি

বাংলাদেশ সময়: ১৭:০০:৪৩ ● ৩২৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ