কলাপাড়ায় সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের

প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » কলাপাড়ায় সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের
শুক্রবার ● ১ মে ২০২০


ছবিটি লতাচাপলী ইউনিয়নের তুলাতলী গ্রাম থেকে সম্প্রতি তোলা হয়েছে।

এ এম মিজানুর রহমান বুলেট॥
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় রবিশষ্য চাষাবাদে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ। সূর্যমুখী’র চাষাবাদে সরকারী রাজস্ব খাত থেকে কৃষি বিভাগ কৃষকদের প্রনোদনা দেয়ায় স্বচ্ছলতা অর্জনে সূর্যমুখী চাষাবাদে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের। উপকূলীয় এ অঞ্চলের মাটির গুনাগুন, অবহাওয়া ও জলবায়ু সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য উপযোগী হওয়ায় এটির চাষাবাদ কৃষকের কাছে লাভজনক হয়ে উঠছে। এছাড়া রাজস্ব খাতের প্রকল্পের অধীন কৃষকের সূর্যমুখী প্রদর্শনী মাঠ স্থাপন করায় আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জনে বেকার যুবরা সূর্যমুখী চাষাবাদে উৎসাহিত হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সূর্যমুখী একটি তেল ফসল। এটি স্থানীয় ভাবে উচ্চ মূল্যের ফসল হিসেবেও পরিচিত। ভোজ্য তেলের মধ্যে সূর্যমুখী শরীরের জন্য অত্যন্ত ভাল তেল। এটি শরীরের কোলষ্টোরেল ঠিক রাখে। তাই সূর্যমুখীর চাষাবাদ কৃষকের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে সরকার রবিশষ্যের প্রনোদনার আওতায় কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরন করছে। দক্ষিনাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার মাটির গুনাগুন, আবহাওয়া ও জলবায়ূ সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য উপযোগী হওয়ায় কৃষকের আগ্রহ সৃষ্টিতে রাজস্ব খাতের প্রকল্পের অধীন কৃষককে প্রনোদনা দিচ্ছে সরকার। সাধারনত জানুয়ারী ফেব্রুয়ারী মাসের শুরুতে সূর্যমুখীর চাষাবাদ হয়ে থাকে। সূর্যমুখী চাষাবাদের এ সময়টা এ অঞ্চলের জমি অনেকটা ফাঁকা থাকে। মার্চ এপ্রিলের মধ্যে ফসল কাটার উপযোগী হয়। উৎপাদিত ফসল কৃষি বিপনন অধিদপ্তর ন্যায্য মূল্যে কৃষকের কাছ থেকে মাঠ পর্যায় থেকে ক্রয়ের জন্য সহায়তা দিচ্ছে। কৃষি বিভাগ সূত্র আরও জানায়, উপজেলায় এবছর ৫০ হেক্টর জমি সূর্যমুখী চাষাবাদের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল। চাষাবাদ হয়েছে প্রায় ৮০ হেক্টর। উপজেলার প্রতি ইউনিয়নে কম বেশী সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। এবছর সূর্যমুখীর চাষাবাদে এগিয়ে রয়েছে নীলগঞ্জ, টিয়াখালী, লতাচাপলি ও কুয়াকাটা পৌরসভা। উপজেলায় এবছর অন্তত: প্রায় ৩০০ কৃষক সূর্যমুখীর চাষাবাদ করেছে। এটির চাষাবাদে পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি প্রস্তুত, বীজ রোপন, সার প্রয়োগ, আন্ত:পরিচর্যা, সেচ ও বালাই নাশক প্রয়োগে হেক্টর প্রতি খরচ পড়ে ৩৫ হাজার টাকা। এতে হেক্টর প্রতি নীচে ৪১ মন ফলন হলেও তা বিক্রয় হয় প্রায় ১লক্ষ ১২ হাজার টাকায়।

উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের আমিরাবাদ গ্রামের যুবক গোলাম সরোয়ার (৩২) বলেন, ’আমি এবছর ১ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। এতে আমার জমি প্রস্তুত খরচ হয় ১৫০০ টাকা, সেচ খরচ ৬০০ টাকা, আগাছা নিধন, নিরানী ও বেড তৈরী খরচ ২৪০০ টাকা এবং বালাই নাশক প্রয়োগ ২০০ টাকা সহ মোট খরচ হয় ৪,৭০০ টাকা। দু’একদিন আগে আমি ফসল কেটে ঘরে তুলেছি যা আনুমানিক ৫মন। স্থানীয় বাজারে প্রতিমন সূর্যমুখী’র দানা বিক্রী হচ্ছে ২৭০০ টাকা, যাতে অন্তত: আমি ১০,৮০০ টাকায় ফসল বিক্রী করতে পারবো। এবছর কৃষি বিপনন অধিদপ্তর মাঠ পর্যায় থেকে কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে সূর্যমুখী কেনার কথা রয়েছে। যাতে আমি সন্তোষজনক মূল্য পাবো আশা করছি। তবে এর পেছনে কৃষি বিভাগের অবদান রয়েছে। তারা আমাকে বিনামূল্যে বীজ, সার সরবরাহ করা সহ মাঠ পর্যায়ে এসে সার্বক্ষনিক পরামর্শ দিয়েছে।’ নীলগঞ্জ ইউনিয়নের সদরপুর গ্রামের স্নাতক ডিগ্রী ধারী যুবক মার্টিন বৈরাগী (৩৮) বলেন, ’এবছর আমি তিন বিঘা জমিতে প্রথমবারের মত সূর্যমুখী চাষ করেছি। কৃষি অফিস থেকে সার্বক্ষনিক পরামর্শ সহ বীজ ও সার পেয়েছি। আমার জমি
প্রস্তুত খরচ হয় ৩,০০০ টাকা, সমন্বিত সার প্রয়োগ খরচ ৩,০০০ টাকা, বীজ রোপন খরচ হয় ৩,০০০ টাকা, পানি সেচ খরচ ১,০০০ টাকা, ছত্রাক নাশক খরচ হয় ৫০০ টাকা, অতিরিক্ত বীজ খরচ ৩,০০০ টাকা এবং ফসল কাটা ও মাড়াই খরচ ২,০০০ টাকা সহ আমার মোট খরচ হয় ১৫,০০০ টাকা। আমি অন্তত: ১৫ মন ফসল পেয়েছি। যা থেকে আমার ব্যবহারের জন্য রেখে উদ্বৃত্ত ফসল বিক্রী করবো।’ মার্টিন বৈরাগী আরও বলেন, ’আমি কৃষি বিভাগের পরামর্শ ছাড়াও চাষাবাদ করতে গিয়ে সমস্যার পড়ে কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। জমি চাষ দিয়ে বীজ রোপনের পূর্বে এমওপি, ডিওপি, ইউরিয়া, টিএসপি, জিপসাম মিশিয়ে সমন্বিত সার প্রয়োগ করেছি। এরপর এক সারি থেকে অপর সারির দূরত্ব অন্তত: ২ফুট এবং একটি বীজ থেকে অপর বীজ রোপনের স্থান দেড় ফুট দরত্ব বজায় রেখেছি। গাছ ১ফুটের কাছাকাছি এলে সেচ ও সার প্রয়োগ করেছি। সূর্যমুখী গাছের গোড়ায় ছত্রাক আক্রমণ করে থাকে। এতে গাছ শুকিয়ে নির্জীব হয়ে যায়। ছত্রাক আক্রমণ করা গাছ গুলো গোড়া সহ উপড়ে সতেজ গাছ গুলোতে ছত্রাক নাশক এমকোজিম স্প্রে করেছি। এতে আমার ফলন মোটামুটি ভাল হয়েছে। তবে শেষ দিকে সেচের পানির একটু সংকট না থাকলে আরও ভাল ফলন পেতাম। প্রথমবার হলেও আমি সূর্যমুখী চাষ করে কমবেশী সফল হয়েছি। স্থানীয় কৃষি বিভাগ সহ স্থানীয়রা আমার সূর্যমুখী ক্ষেত দেখেতে আসে। তবে সূর্যমুখি প্রক্রিয়াজাত করনে এখানে আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় পুরনো সেই পদ্ধতিতে নির্ভর করতে হচ্ছে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বলেন, ’সূর্যমুখী একটি উচ্চমূল্যের তেল ফসল। এটি ভোজ্য তেল হিসেবে শরীরের জন্য খুব উপকারী। এ অঞ্চলের মাটির মাঝারি ধরনের লবনাক্ততা, আবহাওয়া ও জলবায়ু সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য উপযোগী। তাই কৃষককে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী করার জন্য সরকার প্রনোদনা দিচ্ছে। এবছর অন্তত: ৩০০ কৃষক সূর্যমুখীর চাষাবাদ করেছে। ঘূর্নিঝড় বুলবুল’র কারনে কৃষক কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন হলেও অধিকাংশ কৃষকের ফসল তোলা হয়ে গেছে। আর কৃষকের উৎপাদিত এসব ফসল মাঠ পর্যায় থেকে ন্যায্য মূল্যে বিক্রী নিশ্চিত করার জন্য কৃষি মন্ত্রনালয়ের সচিব মো: নাসিরুদ্দিন স্যার কৃষি অধিদপ্তর থেকে যোগাযোগ রক্ষা করে বিভিন্ন তেল কোম্পানীকে আগ্রহী করেছেন।’

বাংলাদেশ সময়: ১১:০৬:৩৯ ● ৩৬৪ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ