বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে মাঠে নামছে দুদক

প্রথম পাতা » সর্বশেষ » বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে মাঠে নামছে দুদক
মঙ্গলবার ● ২৯ জানুয়ারী ২০১৯


বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে মাঠে নামছে দুদক

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দীর্ঘদিন ধরেই একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় নানা অনিয়ম করে আসছে। ওসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান আইনে বর্ণিত বেশির ভাগ নির্দেশনাই অনুসরণ করছে না। বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্তেও গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু আইনি সক্ষমতা না থাকায় ইউজিসি ওসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এমন ওসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সুপারিশও খুব বেশি গুরুত্ব পায়নি। এমন অবস্থায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনিয়ম খতিয়ে দেখতে মাঠে নামতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইউজিসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আর্থিক অনিয়ম খুঁজে দেখতে ইউজিসির কাছে তথ্য চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি পৃথক চিঠির মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তহবিল আত্মসাৎ, আয়-ব্যয়ের হিসাব না দেয়া ও ট্রাস্টি সদস্যদের আর্থিক অনিয়ম বিষয়ে তথ্য সংবলিত প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ওসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও ইউজিসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আর্থিক অনিয়মের মধ্যে ট্রাস্টি সদস্য কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অন্যতম। ইউজিসির তদন্ত কমিটি গতবছর রাজশাহী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল আজিজের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পায়। কমিটির দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল আজিজ তার ঢাকাস্থ আবাসিক ফ্ল্যাটের একাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের লিয়াজোঁ অফিস হিসেবে ব্যবহার করেন। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি মাসে ৬৫ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। যা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অর্থ আত্মসাতের শামিল। বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবদুল আজিজ প্রতি মাসে তার ঢাকাস্থ আবাসিক ফ্ল্যাটের একাংশের ভাড়া হিসেবে বিপুল অংকের টাকা গ্রহণ করায় নৈতিক স্খলনজনিত কারণে ট্রাস্ট অ্যাক্ট ১৮৮২ এবং সোসাইটিজ রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট ১৮৬০-এর আওতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে বলেও তখন সুপারিশ দেয় তদন্ত কমিটি। আর তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে অধ্যাপক আজিজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠায় ইউজিসি। কিন্তু তারপর ওই বিষয়ে এখনো কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। শুধু রাজশাহী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি নয়, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেই এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে। তদন্তে প্রমাণও মিলেছে। ওই আলোকে ইউজিসি থেকে মন্ত্রণালয়ে সুপারিশও পাঠানো হয়েছে। তবে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
সূত্র আরো জানায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অর্থ আত্মসাৎ গোপন করতে বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব অডিট করার কথা থাকলেও তা করছে না। যদিও আইন অনুযায়ী প্রতি বছর আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারি অর্থে পরিচালিত হওয়ায় ওসব প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা সরকারি উদ্যোগে করা হয়। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের (সিএ ফার্ম) মাধ্যমে নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন ইউজিসিতে জমা দেয়ার কথা। প্রতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ওই প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদন নিয়মিত জমা দিচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান জানান, হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই অনিয়মে জড়িত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি সদস্যদের বিরুদ্ধে বড় বড় অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। অনেক ঘটনা তদন্তে প্রমাণিত। ওসব বিষয়ে ইউজিসি বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। কয়েকদিন আগে দুদক থেকে অনিয়মের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। তার কয়েক মাস আগে মন্ত্রণালয়ও একই ধরনের অনিয়ম বিষয়ে জানতে চেয়েছে। ওসব বিষয়ে প্রতিবেদন প্রণয়নের কাজ প্রক্রিয়াধীন।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ৮:০৫:০৩ ● ৫৯৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ