দশমিনায় নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে চলছে ইলিশ শিকার

প্রথম পাতা » সর্বশেষ » দশমিনায় নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে চলছে ইলিশ শিকার
শুক্রবার ● ১৮ অক্টোবর ২০১৯


দশমিনায় নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে চলছে ইলিশ শিকার

দশমিনা (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥


পটুয়াখালী জেলার দশমিনার তেঁতুলিয়া নদীতে সরকারি নিষেধ উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ শিকার করছে উপজেলার জেলেরা। ইলিশের প্রজনন মৌসুম নিরাপদ করতে চলতি মাসের ৩০তারিখ পর্যন্ত ২২ দিন মা ইলিশ শিকার, বহন, আহরন ও মজুত নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ সময় সারা দেশের মতো এ উপজেলার জেলেদের বিরত থাকার জন্য ভিজিএফ সহায়তা মাথাপিছু ২০ কেজি চাল দেয়া হয়। ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় এ চাল বিতরণ করা হলেও ব্যাংক ও এনজিও থেকে নেয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করা জেলেদের ওপর ভয়াবহ বোঝা হয়ে  দাড়িয়েছে।  অসহায় জেলেরা ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ সময়ে তাদের ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ সময়ে জেলেরা তেঁতুলিয়া নদীতে না নামতে পারলেও ঋণের কিস্তি থেকে রেহাই নেই জেলেদের। আর কিস্তি পরিশোধের জন্য বাধ্য হয়েই অনেক জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকারে যাচ্ছেন জেলেরা। এতে সরকারের উদ্দেশ্য অনেকটাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। সফল হচ্ছেনা মা ইলিশ শিকার সরকারের নিষেধদ্ধা। অবরোধের ২২ দিন ব্যাংক ও এনজিও থেকে নেয়া ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন উপজেলার ভুক্তভোগী জেলেরা।
উপজেলার বাশঁবাড়িয়া  গ্রামের শাহআলম খা, ঢনঢনিয়া গ্রামের লাল মিয়াসহ একাধিক জেলে জানান, বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে তারা ঋণ নেন। ঋণের টাকা দিয়ে জাল ও নৌকা তৈরি করেছে। মাছ বিক্রি করে ওই ঋণের টাকা পরিশোধ করা হয়। অবরোধের সময় জেলেরা চরম বেকার থাকেন।
উপজেলার ১০হাজার ১৭১জন জেলের মধ্যে অধিকাংশ জেলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করেন। একদিকে অনাহারে অন্য দিকে ব্যাংক ও এনজিওর নেয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপ এ দু’মিলিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দিন কাটাতে হয় তাদের। কিস্তি পরিশোধ করতে না পারলে চলে মানসিক নির্যাতন। তাই বাধ্য হয়ে জেলেরা মাছ শিকারে যায় নদীতে।
দক্ষিন দাসপাড়া গ্রামের জেলে জাকির বলেন,  সময় মত কিস্তি দিতে না পারলে আর ঋণ পাবো না।  সুদ ও কিস্তির কারণে সংসারে অশাস্তি লেগে আছে। কাজেই অনিচ্ছায় হলেও বিকল্প কোনো পথ না থাকায় সরকারি আইন উপেক্ষা করে চরম ঝুঁকি নিয়ে নদীতে মাছ শিকারে নামেন। আর সেই মাছ বিক্রি করে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে থাকি।
স্থানীয়রা জানান, সরকারের উচিত এ সময়টায় জেলেদের কিস্তি পরিশোধের শর্ত শিথিল করে দেয়া। তারা যেনো কোনো হয়রানি ছাড়া ঋণ পান তার ব্যবস্থা করা।
বাঁশবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আলতাব হোসেন আকন বলেন, অবরোধের ২২দিন জেলেদের ব্যাংক ও এনজিও থেকে নেয়া ঋন আদায় বন্ধ রাখা উচিৎ। এ সময় জেলেরা যাতে অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়ে মাছ শিকারে না নামেন সে দিকে সবার নজর রাখা দরকার।
ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির উপজেলা সভাপতি মহাসিন জোমাদ্দার বলেন, অবরোধের দিগুলো উপজেলার জেলেই ধারদেনা, বসত বাড়ির গাছ বিক্রি ও দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান ও কিস্তির টাকা পরিশোধ করেন। তাই ব্যাংক ও এনজিও ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ রাখা উচিত।
এ ব্যাপারে স্থানীয় এনজিও সমন্নয়কারী পিএম বাদল বলেন, যদি কেউ স্বেচ্ছায় ঋণের কিস্তি দেয় তারটাই নেয়া হবে। কারো সমস্যা হলে এ সময়ে কিস্তি বন্ধ রাখা হবে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহাবুব আলম ঝান্টা জানান, ব্যাংক ও এনজিও থেকে জেলেদের নেয়া ঋণের টাকা পরিশোধের বিষয় তাদের কোনো হাত নেই। তবে মানবিক কারণে অবরোধের সময় ঋণের কিস্তি আদায় শিথিলযোগ্য করা হলে জেলেরা খুব উপকৃত হবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুভ্রা দাস এর সরকারি মোবাইলে ফোন দিলে রিসিভ না করার কারনে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

এসবি/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:৫১:৫৫ ● ৩৮১ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ