সোমবার ● ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫

গৌরনদীতে পাঠদানহীন মাদ্রাসার নামে বই বরাদ্দ নিলেন জামায়াত নেতা

হোম পেজ » বরিশাল » গৌরনদীতে পাঠদানহীন মাদ্রাসার নামে বই বরাদ্দ নিলেন জামায়াত নেতা
সোমবার ● ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫


 

গৌরনদীতে পাঠদানহীন মাদ্রাসার নামে বই বরাদ্দ নিলেন জামায়াত নেতা

সাগরকন্যা প্রতিবেদক, গৌরনদী (বরিশাল)

বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় কাগজে-কলমে থাকা একটি ইফতেদায়ি মাদ্রাসার নামে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক বরাদ্দকৃত ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের নতুন বই মসজিদে মজুদ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, ইফতেদায়ি প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৮০ জন শিক্ষার্থীর নামে নতুন পাঠ্যবই বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে সরেজমিনে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের পিঙ্গলাকাঠী এলাকায় অবস্থিত বোরাদী গরঙ্গল জামে মসজিদের ভেতরে ওই বিপুল সংখ্যক নতুন বই স্তূপ করে রাখা রয়েছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আরও দেখা যায়, মসজিদের পাশে একটি ছোট ঘর রয়েছে, যা স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী আগে মক্তব হিসেবে ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে ঘরটি সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। সেখানে কোনো শিক্ষার্থী, শিক্ষক কিংবা নিয়মিত পাঠদানের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। স্থানীয়দের ধারণা, দীর্ঘদিন ধরে ঘরটি ব্যবহার করা হচ্ছে না।

সরেজমিনে উপস্থিত মোঃ আশিক ফকির ও নজরুল ইসলাম জানান, ওই এলাকায় বর্তমানে কোনো ইবতেদায়ি মাদ্রাসা বা নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম নেই। তাদের দাবি, এখানে কখনোই ইফতেদায়ি স্তরের পূর্ণাঙ্গ মাদ্রাসা পরিচালিত হয়নি।

অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন আব্দুল সত্তার ফকিরের ছেলে ও নলচিড়া ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর অর্থ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন (আলমাস)। এ বিষয়ে তিনি দাবি করেন, ‘গরঙ্গল বোরাদী আফজালিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানে পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট সেমিপাকা ভবন, টেবিল-চেয়ার, হাই ও লো বেঞ্চ, টুল ও আলমিরাসহ প্রয়োজনীয় আসবাব রয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল জলিল তদন্ত সাপেক্ষেই বই বরাদ্দ দিয়েছেন।

তবে বাস্তবে তার দাবির পক্ষে কোনো দৃশ্যমান প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সরেজমিনে কেবল একটি পরিত্যক্ত মক্তবের ঘর ছাড়া কোনো শ্রেণিকক্ষ বা চলমান শিক্ষা কার্যক্রমের চিহ্ন দেখা যায়নি।

সরেজমিনে আরও জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির নামে কোনো ছাত্রছাত্রীর হাজিরা খাতা নেই, নেই শিক্ষকদের হাজিরা খাতা। কোনো বৈধ পরিচালনা কমিটির কাগজপত্র বা সরকারি অনুমোদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও পাওয়া যায়নি। কেবল ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৯ সালের কয়েকটি রেজুলেশন খাতা দেখানো হলেও সংশ্লিষ্টদের মতে, এসব নথি দিয়ে একটি সচল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব প্রমাণ করা সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে বোরাদী গরঙ্গল জামে মসজিদের ইমাম ও মুসল্লি নজরুল ইসলাম বলেন, জামায়াত নেতা ও মসজিদের সেক্রেটারি আলমাস এসব বই এনে মসজিদে রেখেছেন। বর্তমানে এখানে কোনো মাদ্রাসার পাঠদান কার্যক্রম নেই।

অভিযোগের বিষয়ে গৌরনদী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল জলিল বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। অনিয়ম প্রমাণিত হলে বিধি অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সরকারি বই বিতরণে এমন অনিয়ম ও ভুয়া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বই উত্তোলনের অভিযোগে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।

বাংলাদেশ সময়: ২২:১০:২০ ● ১০৩ বার পঠিত