রবিবার ● ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
গলাচিপায় হারাচ্ছে শতবর্ষী গরু-হাল চাষের ঐতিহ্য
হোম পেজ » ফিচার » গলাচিপায় হারাচ্ছে শতবর্ষী গরু-হাল চাষের ঐতিহ্য

সঞ্জিব দাস, সাগরকন্যা প্রতিবেদক, গলাচিপা (পটুয়াখালী)
গ্রামবাংলার কৃষি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ বলদ, লাঙল ও জোয়াল- আজ গলাচিপা উপজেলায় প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। আধুনিক যান্ত্রিক কৃষির বিস্তারে গরু দিয়ে হাল চাষ এখন স্মৃতির অংশ হয়ে উঠছে।
একসময় কাকডাকা ভোরে গরু নিয়ে মাঠে নামার দৃশ্য ছিল নিয়মিত। কৃষকদের ভাষ্য অনুযায়ী, গরু দিয়ে চাষ করলে জমি গভীরভাবে নরম হতো। গরুর পায়ের কাদা তৈরি ও গোবর জমির উর্বরতা বাড়াতে সহায়ক ছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সেই সুবিধা টিকতে পারেনি।
বর্তমানে ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার ব্যবহার করে কম সময় ও কম পরিশ্রমে জমি প্রস্তুত করা যায়। তুলনামূলকভাবে খরচও কম হওয়ায় কৃষকরা আর বলদের ওপর নির্ভর করছেন না। ফলে গরু দিয়ে হাল চাষের পেশা আজ বিলুপ্তির পথে।
কাজ কমে যাওয়ায় বহু হালচাষি পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হচ্ছেন। একসময় যে পেশায় গ্রাম মুখর থাকত, তা এখন প্রান্তিক কৃষকদের জন্য টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।
গলাচিপা উপজেলার রতনদি তালতলী ইউনিয়নের উলানিয়া চৌদ্দআনি গ্রামের কৃষক আমির হোসেন পুরোনো দিনের কথা স্মরণ করে বলেন, শৈশবে হাল চাষ করেই বড় হয়েছি। বাড়িতে কয়েক জোড়া বলদ, কাঠের লাঙল আর বাঁশের জোয়াল ছিল। এখন সেসব আর চোখে পড়ে না।
গলাচিপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজু আক্তার বলেন, পরিবেশবান্ধব ও ঐতিহ্যবাহী এই কৃষি পদ্ধতি সময়ের বাস্তবতায় পিছিয়ে পড়েছে। গরু ও লাঙল গ্রামবাংলার সাংস্কৃতিক প্রতীক ছিল। তবে আধুনিক প্রযুক্তিতে কম সময়ে কম খরচে বেশি ফলন পাওয়া যাচ্ছে। ভবিষ্যতে কৃষি আরও প্রযুক্তিনির্ভর হবে।
গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক স্মৃতি, কৃষকের কাঁধের জোয়াল আর মাঠজুড়ে লাঙলের কাটার শব্দ- সব মিলিয়ে এক দীর্ঘ ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে নিঃশব্দে। আধুনিকতার লাভ থাকলেও, সেই ইতিহাস এখন কেবল স্মৃতিতেই বেঁচে আছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০:৩০:৫১ ● ২৯ বার পঠিত
