মঙ্গলবার ● ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

সম্পাদকীয়– বিজয়ের দায় ও দায়বদ্ধতা

হোম পেজ » সম্পাদকীয় » সম্পাদকীয়– বিজয়ের দায় ও দায়বদ্ধতা
মঙ্গলবার ● ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫


 

প্রতীকী ছবি

১৬ ডিসেম্বর- বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবময় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাক হানাদার বাহিনীর নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পরিসমাপ্তি ঘটে। অর্জিত হয় বহু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা, জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

এই বিজয় কোনো হঠাৎ অর্জন নয়। এটি ছিল ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ছয় দফা, গণঅভ্যুত্থান এবং ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের ধারাবাহিকতায় গড়ে ওঠা এক অনিবার্য বাস্তবতা। ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে পাকবাহিনীর গণহত্যা বাঙালির মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি; বরং প্রতিটি গ্রাম, প্রতিটি ঘর হয়ে ওঠে প্রতিরোধের দুর্গ। কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক, নারী- সবাই অংশ নেয় মুক্তিযুদ্ধে। শহীদ হন ৩০ লাখ মানুষ, সম্ভ্রম হারান দুই লাখ মা-বোন, উদ্বাস্তু হন এক কোটির বেশি মানুষ।

পহেলা ডিসেম্বর থেকে আজ ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাগরকন্যা ধারাবাহিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, স্মৃতি ও চেতনা পাঠকের সামনে তুলে ধরেছে। সেই ধারাবাহিকের প্রতিটি পর্ব আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে- এই বিজয়ের পেছনে কত ত্যাগ, কত বেদনা, কত অশ্রু জমে আছে। বিজয় শুধু উল্লাসের নয়, গভীর আত্মসমীক্ষারও দিন।

আজ বিজয়ের ৫৪ বছরে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে- আমরা কি সেই আত্মত্যাগের মর্যাদা রক্ষা করতে পেরেছি? বৈষম্যহীন সমাজ, ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও মানবিক রাষ্ট্র- যে স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, তার কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে? ইতিহাস আমাদের শেখায়, স্বাধীনতা একবার অর্জিত হলে তা রক্ষা করাই সবচেয়ে কঠিন দায়িত্ব।

বিজয়ের দিনে তাই শুধু পতাকা ও উৎসব নয়, প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নিজেদের নতুন করে শপথ নেওয়া। সত্যকে সত্য বলা, অন্যায়কে অন্যায় হিসেবে চিহ্নিত করা, ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকা- এগুলোই হবে শহীদদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা।

সাগরকন্যা বিশ্বাস করে, মুক্তিযুদ্ধ কেবল অতীত নয়- এটি বর্তমান ও ভবিষ্যতের পথনির্দেশক। বিজয়ের এই দিনে আমাদের অঙ্গীকার হোক- একটি মানবিক, ন্যায়ভিত্তিক ও সত্যনিষ্ঠ বাংলাদেশ গড়ে তোলার সংগ্রাম অব্যাহত রাখব।

বিজয় আমাদের অহংকার, বিজয় আমাদের দায়িত্ব।

বাংলাদেশ সময়: ৪:০৫:০৩ ● ৩৫ বার পঠিত