শুক্রবার ● ২৮ নভেম্বর ২০২৫

১৪৪ ধারা জারি গৌরনদীতে দেড়শ বছরের পুরোনো মন্দির ভেঙে জমি দখলের অভিযোগ

হোম পেজ » বরিশাল » ১৪৪ ধারা জারি গৌরনদীতে দেড়শ বছরের পুরোনো মন্দির ভেঙে জমি দখলের অভিযোগ
শুক্রবার ● ২৮ নভেম্বর ২০২৫


 

এখানেই ছিল সুন্দরদী গ্রামের সেই দুর্গা মন্দিরটি, এখন কেবল খালি ভিটি পড়ে আছে।

সাগরকন্যা প্রতিবেদক, গৌরনদী (বরিশাল)

বরিশালের গৌরনদী পৌরসভার সুন্দরদী এলাকায় প্রায় দেড়শ বছরের পুরোনো একটি আধাপাকা দুর্গা মন্দির ভেঙে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী রিপন মিত্রের বিরুদ্ধে। তবে তিনি দাবি করেন, পৈতৃক ওয়ারিশ সূত্রে জমির মালিকানা থাকায় মন্দিরটি ভাঙা হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। গৌরনদী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনার সাথে স্থানীয় ২/৩জন সাংবাদিককে ব্যবহার করে একটি প্রভাবশালী মহল বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে শেষপর্যন্ত আদালতের নির্দেশে শুক্রবার ওই জমির ওপর ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।

ওই গ্রামের বাসিন্দা নারায়ণ মিত্র সাংবাদিকদের বলেন, বড়ভাই বজ্রবিলাস মিত্রের কাছ থেকে ১৯৮৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ৫৯৬ নম্বর সবরেজিস্ট্রি দলিলের মাধ্যমে উপজেলার সুন্দরদী মৌজার এস.এ ১৯৩৪ নম্বর দাগের ১০৪৫ নম্বর খতিয়ানের ১০ শতাংশ জমি তিনি ক্রয় করেন। ওই জমির ওপর দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘সুন্দরদী মিত্র বাড়ির দুর্গা মন্দির’ অবস্থিত ছিল। বংশ পরম্পরায় প্রায় দেড়শ বছর ধরে এই মন্দিরে দুর্গাপূজা থেকে শুরু করে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালিত হয়ে আসছে। পূজা উদযাপন কমিটির মাধ্যমে প্রতিবছর দুর্গাপূজায় সরকারি অনুদানসহ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছ থেকে অনুদান নিয়ে পূজা অনুষ্ঠিত হতো।

নারায়ণ মিত্র অভিযোগ করে বলেন, রাতে রিপন মিত্র মন্দিরের প্রতিমা ও পূজার সামগ্রী সরিয়ে ফেলে এবং অনেক মালামাল বিক্রি করে দেয়। এরপর বজ্রবিলাসের ছেলে রিপন মিত্র ও তার সহোদর ভাই সুমন মিত্র ভাড়াটিয়া লোকজন নিয়ে পরিকল্পিতভাবে গত ১৯ নভেম্বর সকালে পুরোনো ওই দুর্গা মন্দিরটি ভেঙে ফেলে এবং জায়গাটি জোরপূর্বক দখল করে নেয়। প্রতিপক্ষের হামলার আশঙ্কায় আমরা ঘরের দরজা বন্ধ করে ছিলাম। এমন পরিস্থিতিতে বাধা দেওয়ার সুযোগ ছিল না। এটি শুধু জমি দখল নয়, আমাদের ধর্মীয় অনুভূতির ওপর নির্মম আঘাত।

মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক ননী দাস বলেন, আমি ১৫-২০ বছর ধরে মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। মন্দির ভাঙার বিষয়ে জানতাম না। ঘটনা শুনে খুব কষ্ট পেয়েছি। এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। স্থানীয় সনাতন সমাজ দখলকৃত জমি উদ্ধার করে দুর্গা মন্দির পুনঃস্থাপন ও দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।

অভিযুক্ত রিপন মিত্র ও সুমন মিত্র অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পৈতৃক ওয়ারিশ সূত্রে জমির মালিক আমরা দুই ভাই। মায়ের অসুস্থতা ও ঋণের দায়ে ঘরবাড়ি বিক্রি করেছি। মন্দির ভাঙার ইট, টিন ও পূজার সামগ্রী সকালে পাশের লোকনাথ মন্দিরে সরিয়ে দিয়েছি। এখন আমাদের থাকার জায়গা নেই। তাই ৪ শতাংশ জমির ওপর থাকা ওই দুর্গা মন্দিরটি সরিয়ে সেখানে বসতঘর নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

গৌরনদী থানার ওসি মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। নারায়ন মিত্র মামলা করতে চাচ্ছে না। আদালতের নির্দেশে শুক্রবার ওই জমির ওপর ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইব্রাহীম বলেন, খবর পেয়ে আমি ও এসিল্যান্ড ঘটনাস্থলে গিয়ে কোন মন্দির দেখতে পাইনি। মন্দির  পাওয়া না গেলে কী করে রক্ষা করব? এছাড়া মন্দিরের জায়গা রক্ষার জন্য কেউ আসেননি। বিষয়টি জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ ও দুই পক্ষই মন্দিরের জমি নিজের বলে দাবি করছেন। তাই উভয় পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে দেওয়ানি আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:২১:৩২ ● ৩৩ বার পঠিত