বৃহস্পতিবার ● ২৭ নভেম্বর ২০২৫
পায়রার ভাঙ্গনে মির্জাগঞ্জের তিন গ্রাম বিলীন হওয়ার পথে
হোম পেজ » লিড নিউজ » পায়রার ভাঙ্গনে মির্জাগঞ্জের তিন গ্রাম বিলীন হওয়ার পথে
উত্তম গোলদার, মিজার্গঞ্জ (পটুয়াখালী)
পায়রা নদীর ভাঙ্গনে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের মানচিত্র থেকে ৩টি গ্রাম প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। এখন গ্রাম তিনটির শুধু নামেই রেয়ে গেছে। উপজেলার পিপড়াখালী, মেন্দিয়াবাদ ও হাজীখালী গ্রাম। তবে দুইটি গ্রামর সামান্যকিছু অংশ রয়েছে বলে জানা যায়। উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের্ ৫ টি ইউনিয়ন ভাঙ্গনের ঝুকিঁর মধ্যে রয়েছে। বসতঘর হারা এসকল এলাকার মানুষজন উপজেলা বিভিন এলাকায় বসবাস করছে। গত ২০ ডিসম্বর উপজেলা পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, ছাত্র প্রতিনিধি সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিকবিন্দ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গর সাথে জেলা প্রশাসকের সাথে মত বিনিময় সভায় পায়রার তীব্র ভাঙ্গনের আলোচনাই ছিলা প্রধান। পায়রার ভাঙ্গনের বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার রামপুর, ভিকাখালী, পিপড়াখালী, হাজিখালী ও কাকড়াবুনিয়া বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় বসতবাড়ি, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয় লোকজন তাদের বসত ঘরের মালামালও সরিয়ে নেয়ারও সুযােগ পাচ্ছে না। ইতিমধ্য ভাঙ্গনের কবলে পড়ে রামপুর এলাকায় এক নারী ও গত বছর পিপড়াখালী গ্রামের এক শিশুর মত্যু হয়েছে। তবে স্থানীয়রা মনে করছেন পিপড়াখালী ও মেন্দিয়াবাদ এলাকায় পায়রা নদী থেকে বালু উত্তালনের কারনে প্রতি বছর ভাঙ্গনের তীব্রতা বাড়ে।
প্রভাবশালী মহল ইজারা নিয়ে পায়রা নদী থক বালু উত্তালোন করছে। বালু উত্তােলনের কারন প্রতিবছর ভাঙ্গছে বসতবাড়িসহ গ্রামীন জনপদ। এই তিনটি গ্রামের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে রয়েছে। ভাঙ্গনের ফলে দিন দিন ছোট হয় আসছে মিজার্গঞ্জের মানচিত্র। উপজেলার চরখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি পায়রা নদী থেকে ৪-৫ শত ফুট, মেন্দিবাদ সরকারি প্রাথথিমিক বিদ্যালয় ১ দেড় শত ফুট দুরত্বে রয়েছে পায়রা নদী। নদীর ভাঙ্গনের তীব্রতা বদ্ধি পেলে এসকল প্রতিষ্ঠানগুোলা হুমকির মুখে পড়বে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পায়রা নদীর ভাঙনে বসত ঘরসহ ফসলী জমি বিলীন হয় যাচ্ছে নদী গর্ভে। বেঁড়িবাঁধের অনেক জায়গা জুড়ে বড় বড় ফাঁটল দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গনকবলিত মানুষগুলো আশ্রয় নিয়েছে বাধপঁর ঢালে। এসকল গ্রামের কয়েক হাজার একর ফসলী জমি, বসতঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কবরস্থান পায়রা নদীত বিলীন হয়ে গেছে। পায়রা নদীর ভাঙন রোধে এ এলাকায় পানি উনয়ন বার্ড থেকে জিওব্যাগ দিয়ে ভাঙ্গন রক্ষার চষ্টা করছেন। তবে এতেও কাজ হচ্ছে না। স্থানীয় ব্লকের মাধ্যমে ভাঙ্গন রােধ হতে পারে। এত এলাকার জানমালসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সকল কিছু রক্ষা পাবে।
চরখালী সমবায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাওলানা আবদুল মালেক বলেন, ২০০৭ সাল সিডরের সময় পায়রার বেড়িঁবাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকে চরখালীতে ৮৪ জন মানুষের মত্যু হয়। এখনও বাধেঁর নড়েবড়ে অবস্থা। পানি উনয়ন বোর্ড ভাঙ্গনটুকু জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করে যান। ভাঙ্গনের তীব্রতা বাড়লে উপজেলার মধ্য ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চরখালী সমবায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি হুমকির মুখে পড়বে। নদী থেকে মাত্র ৪ থেকে ৫ শত ফুট দুরত্বে রয়েছে বিদ্যালয়টি। এ এলাকার মানুষ শক্ত বাঁধ চায়। চরখালী সমবায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়র অষ্টম শ্রেনীর শিক্ষার্থী মাঃ আবদুল্লাহ বলেন, আমাদের বিদ্যালয়টি পায়রা নদীর কাছাকাছি চলে এসেছে। ভাঙ্গন বাড়লে আমাদের বিদ্যালয়টিও নদীতে এক সময়ে বিলীন হয়ে যাবে। হাজীখালী গ্রামের মাঃ জাহাঙ্গীর খান বলন, পায়রার ভাঙ্গনের কারনে দুইবার পরিবর্তন করেছি বসত ঘর। এখন আর জমিজমা নেই। অন্যের জমিতে বসত ঘর তুলেছি। ভাঙ্গনকবলিত এলাকার মানুষজন কেউ ঢাকায় গিয়ে শ্রমিকের কাজ করে, কেউবা অন্যস্থানে আশ্রয় নিয়েছে। আমাদের এ দুঃখ কবে শেষ হবে জানি না।
একই গ্রামের আবেদ মল্লিক জানান, প্রায় ৯০ একর সম্পত্তি ছিলো, সব সম্পত্তি নদীত বিলীন হয়ে গেছে। এখন তা মন্দিয়াবাদ গ্রামটি নেই। হাজিখালী চারভাগের তিন ভাগ পায়রা নদীত বিলীন হয়ে গেছে, আছে শুধু এক ভাগ। ভাঙ্গনরোধে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। পিপড়াখালী গ্রামের মোঃ সুলতান আহম্মদ জানান, মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের মধ্য পিপড়াখালী গ্রাম ও পিপড়াখালী বাজারটি পায়রা নদীত বিলীন হয়ে গেছে অনেক আগেই। পিপড়াখালী বাজার এক সময় ২ থক ৩শত দােকান ঘর ছিলা। এখন মাত্র দুই তিনটি অস্থায়ী দােকান ঘর রয়েছে। নদীতে বিলীন হয়ে গেছে একাধিক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসকল এলাকার মানুষ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। কারো জমিজমা না থাকায় বাঁধের পাশে ঘর উত্তোলন করে বসবাস করছে। পায়রার ভাঙ্গন রোধ শক্ত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষরে কাছে জোর দাবী জানাই।
উপজলা নিবার্হী অফিসার মোঃ তরিকুল ইসলাম জানান, উপজেলার মধ্য প্রধান সমস্যা হচ্ছে নদী ভাঙ্গন। দেউলী সুবিদখালী ইউনিয়নের স্থানীয়রা জমি না দেয়ায় বেড়িঁবাঁধ মেরামত হচ্ছে না। তবে আমি ইতিমধ্যে ভাঙ্গনরোধে উর্ধতন কর্তপক্ষের সাথে বিষয়টি অবহিত করেছি।
পটুয়াখালী পানি উনয়ন বোর্ডর নির্বাহী প্রকোশলী মােঃ রাকিব জানান, মির্জাগঞ্জ প্রায় ৫ থেকে ৬ কিলামিটার জুড়ে পায়রা নদীর ভাঙ্গন রয়েছে। ভাঙ্গন রোধ আমাদের জরিপ চলামান রয়েছে। জরিপের কাজ শেষ হলে বাঁধ তৈরির একটি বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। তবে বড় প্রকল্প গ্রহনের আগ পর্যন্ত ভাঙ্গনকবলিত এলাকায় যে সকল প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলা রক্ষার জন্য আমরা সংস্কার কাজ চালিয় যাছি। প্রকল্প পাশ হলে নতুন করে বাঁধের কাজ শুরু করা হবে।
ইউজি/এমআর
বাংলাদেশ সময়: ১৮:৪৫:১৮ ● ২৪ বার পঠিত
