শুক্রবার ● ২৬ আগস্ট ২০২২

আমতলীতে যৌতুক দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতন!

হোম পেজ » বরগুনা » আমতলীতে যৌতুক দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতন!
শুক্রবার ● ২৬ আগস্ট ২০২২


আমতলীতে যৌতুক দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতন!

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

গ্রাফিক্স ডিজাইন ব্যবসার জন্য স্ত্রী মোহতারামা আক্তার কুলসুমের কাছে পনের লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করেছেন স্বামী আসাদ উল্লাহ খাঁন। বাবার বাড়ী থেকে টাকা এনে না দেয়ায় দুই সন্তানের জননী কুলসুমকে বেধরক মারধর করেছে স্বামী এমন অভিযোগ স্ত্রী কুলসুম বেগমের। আহত কুলসুমকে দুই ইউপি সদস্য, গ্রাম পুলিশ মনির ও তার স্বজনরা উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। ঘটনা ঘটেছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমতলী উপজেলার পুর্ব কেওয়াবুনিয়া গ্রামে।
জানাগেছে, ২০০৬ সালে পুর্ব কেওয়াবুনিয়া গ্রামের ওহাব খাঁনের ছেলে আসাদ উল্লাহ খাঁনের সাথে  ঘোপখালী গ্রামের মোক্তার আলী কন্যার মোহতারামা আক্তার কুলসুমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন অযুহাতে স্বামী আসাদ উল্লাহ যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে আসছে। ওই দম্পতির দুইটি সন্তান রয়েছে। সন্তানের মুখের দিয়ে তাকিয়ে কুলসুম নিরবে স্বামীর নির্যাতন সহ্য করে আসছেন। গত ১৬ বছরে  স্ত্রী কুলসুম বাবার বাড়ী থেকে তাকে ৮ লক্ষ টাকা যৌতুক এনে দিয়েছেন এমন দাবী স্ত্রী কুলসুমের। গ্রাফিক ডিজাইনের ব্যবসার কথা বলে গত জুন মাসে স্ত্রী কুলসুমকে তার বাবার বাড়ী থেকে পনের লক্ষ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলে স্বামী আসাদ উল্লাহ। কিন্তু কুলসুম এ টাকা এনে দিতে অস্বীকার করেন। এ নিয়ে বেশ কয়েক দফায় সে কুলসুমকে ম্রাধর করেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্বামী আসাদ উল্লাহ স্ত্রী কুলসুমকে তার বাবার বাড়ী থেকে টাকা এনে দিতে চাপ প্রয়োগ করেন কিন্তু স্ত্রী এতো টাকা এনে দিতে অস্বীকার করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সে তার স্ত্রীকে বেধরক মারধর করে। তার মারধর কুলসুম জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। খবর পেয়ে কুলসুমের স্¦জনরা নারী ইউপি সদস্য মোসাঃ সুমি আক্তার, সদস্য মোঃ জাকির হোসেন ও গ্রাম পুলিশ মোঃ মনির হোসেনকে নিয়ে ওই বাড়ী যায়। পরে ওই বাড়ী থেকে তাকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে স্বামী আসাদ উল্লাহ গত আট বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। ওই বিয়ের খবর এতো বছর গোপন ছিল। গত দুই মাস আগে দ্বিতীয় বিয়ের খবর  ফাঁস হয়। এর পর থেকে তার উপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায় বলে জানান কুলসুম।
কুলসুমের দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়–য়া কন্যা তালহা মনি বলেন, বাবা টাকার জন্য মাকে প্রায়ই মারধর করে।
দুই সন্তানের জননী মোহতারামা আক্তার কুলসুম কান্নাজনিত কন্ঠে বলেন, বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য শতবার নির্যাতনের স্বীকার হয়েছি। গত ১৬ বছরে বাবার বাড়ী থেকে আট লক্ষ টাকা যৌতুক এনে দিয়েছি। বর্তমানে আবার গ্রাফিক্স ডিজাইনের ব্যবসা করবে বলে আমাকে বাবার বাড়ী থেকে পনের লক্ষ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলে। আমি এ টাকা এনে দিতে রাজি না হওয়ায় আমাকে কয়েক দফায় মারধর করেছে। তিনি আরো বলেন, আমাকে না জানিয়ে গত পাঁচ বছর আগে আমার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করছে। এতো দিন দ্বিতীয় বিয়ের খবর গোপন ছিল। গত দুই মাস আগে জানতে পেরেছি দ্বিতীয় বিয়ের কথা। এখন আমাকে বেশী নির্যাতন করছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
নারী ইউপি সদস্য মোসাঃ সুমী আক্তার বলেন, কুলসুমকে তার স্বামীর বাড়ী থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। যতদুর জেনেছি স্বামী আসাদুজ্জামান ব্যবসা করতে কুলসুমের বাবার বাড়ী থেকে যৌতুক এনে দিতে বলে। ওই টাকা না দেয়ার নির্যাতন করেছে।
স্বামী আসাদ উল্লাহ খাঁন যৌতুক দাবীর কথা অস্বীকার করে বলেন, পারিবারিক বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায় রাগের বসত মারধর করেছি।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার মোঃ সুমন বিশ্বাস বলেন, ওই নারীকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তার কপালসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহৃ রয়েছে।
আমতলী থানার ওসি একেএম মিজানুর রহমান বলেন, অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৫৫:৫৩ ● ১৭৩ বার পঠিত