মঙ্গলবার ● ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯

বন্ড সুবিধার অপব্যবহারকারীদের ঠেকাতে মাঠে নেমেছে এনবিআর

হোম পেজ » জাতীয় » বন্ড সুবিধার অপব্যবহারকারীদের ঠেকাতে মাঠে নেমেছে এনবিআর
মঙ্গলবার ● ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯


বন্ড সুবিধার অপব্যবহারকারীদের ঠেকাতে মাঠে নেমেছে এনবিআর

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ডেড সুবিধা নিয়ে পণ্য বা কাঁচামাল আমদানি করে তা খোলা বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। শুল্কমুক্ত পণ্য অবৈধভাবে খোলা বাজারে সরবরাহ করার কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) শুল্কমুক্তভাবে আমদানি করা কাঁচামাল খোলা বাজারে বিক্রি কিংবা পাচার ঠেকাতে মাঠে নেমেছে। ওই লক্ষ্যে বন্ডের পণ্য ছাড় না দেয়ার ব্যাপারে এনবিআর কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আর গত ১৫ দিনে বন্ডের পণ্য রয়েছে অন্তত ১৬টি কাভার্ড ভ্যান জব্দ করা হয়েছে। তাছাড়া বর্তমানে বন্ড সুবিধা অপব্যবহারে আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে ৪ শতাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দীর্ঘদিন ধরেই এক শ্রেণীর আমদানিক বন্ডের আওতায় পণ্য বা কাঁচামাল আমদানি করে পাচার বা খোলা বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। ওই অবৈধ কাজ প্রতিহত করার লক্ষ্যে এনবিআর সম্প্রতি ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে নতুন কমিশনার নিয়োগ দিয়েছে। আর ওই কমিশনারের নেতৃত্বে ৬টি প্রিভেনটিভ টিম মাঠে নেমেছে। তাদের দিন-রাত অভিযানে গত দুই সপ্তাহে ১৬টি কাভার্ড ভ্যান জব্দ করা হয়। ওসব কাভার্ড ভ্যানে ছিল ফেব্রিক্স, পিপিদানা (প্লাস্টিক তৈরির কাঁচামাল), এসিডিটিক এসিড, ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট কার্ড, পেডিং (ব্লেজার বা জ্যাকেট তৈরির কাঁচামাল)। যার বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। আর ওসব পণ্যের বিপরীতে প্রযোজ্য শুল্ক করের পরিমাণ প্রায় ৬ কোটি টাকা। পণ্যগুলো নোমান গ্রুপ, নাইস ডেনিম, ফারদিন এ্যাক্সেসরিজ লিমিটেড, অলিম্পিক এ্যাক্সেসরিজ লিমিটেড, রেজা ফ্যাশন লিমিটেডের বলে জানা গেছে। ওসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দ্য কাস্টমস এ্যাক্ট ১৯৬৯, বন্ডেড ওয়্যার হাউস বিধিমালা ২০০৮ এর আওতায় বিভাগীয় মামলা করা হবে। একই সঙ্গে তাদের বন্ডিং কার্যক্রম ও আমদানি-রফতানির তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত পণ্য অসাধু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে খোলাবাজারে বিক্রি করায় একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে বন্ডেড পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশীয় শিল্প কারখানা। ফলে প্রত্যাশিত রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করায় আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে প্রায় ৪ শতাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আর ওসব মামলায় প্রায় ৭শ’ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের এমন কার্যক্রম মোকাবিলায় দীর্ঘদিন ধরে দেশীয় শিল্প কারখানার মালিকরা বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। আর ব্যবসায়ীদের দাবি আমলে নিয়েই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে মাঠে নেমেছে।
এদিকে মূলত দেশীয় শিল্পকে বাঁচানোর জন্যই বন্ড সুবিধা দেয়া হয়। কিন্তু বন্ড সুবিধা নিয়ে ওই বন্ডেড পণ্য যদি খোলা বাজারে বিক্রি করা হয় তাহলে দেশীয় পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অবৈধ বন্ডেড পণ্য রোধে এনবিআরের পদক্ষেপে দেশীয় শিল্প কারখানার মালিকরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। ওই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন একটি পত্রের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
অন্যদিকে এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া জানান, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে এনবিআর কাজ করে যাচ্ছে। বন্ড সুবিধার পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি রোধে অভিযান পরিচালনা জোরদার করা হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের পণ্য অবৈধভাবে খোলা বাজারে বিক্রির সময় জব্দ করা হয়েছে- তাদের বিরুদ্ধে কাস্টমস আইনে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এমনকি তাদের বন্ড লাইসেন্স বাতিল করার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে। এনবিআর যে অভিযান শুরু করেছে তা চলবে। যত বড় প্রতিষ্ঠানই হোক, অন্যায় করলে ক্ষমা করা হবে না।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৭:২৯:০৮ ● ৮৭৬ বার পঠিত