শনিবার ● ৭ নভেম্বর ২০২০

আমতলীতে মাদ্রাসায় ২শিক্ষক নিয়োগে ২০লাখ টাকা ঘুষ!

হোম পেজ » বরগুনা » আমতলীতে মাদ্রাসায় ২শিক্ষক নিয়োগে ২০লাখ টাকা ঘুষ!
শনিবার ● ৭ নভেম্বর ২০২০


আমতলীতে মাদ্রাসায় ২শিক্ষক নিয়োগে ২০লাখ টাকা ঘুষ!

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

বরগুনার আমতলী উপজেলার পূর্ব পাতাকাটা মেহের আলী দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মোঃ আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে ২০লক্ষ টাকার বিনিময়ে দুই শিক্ষক নিয়োগ, উপবৃত্তির টাকার আত্মসাৎ ও শিক্ষকদের সাথে খারাপ ব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই মাদ্রাসার চার শিক্ষক মাদ্রাসা  শিক্ষা অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসকের কাছে সুপারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু ৯ মাসেও কোন প্রতিকার পায়নি। শনিবার (৭ নভেম্বর) ওই মাদ্রাসার চার শিক্ষক আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে এমন অভিযোগ করেন। শিক্ষকরা সুপারের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন।
জানাগেছে, উপজেলার পূর্বপাতাকাটা মেহের আলী দাখিল মাদ্রাসায় ১৪ জন শিক্ষক কর্মচারী ছিল। ২০১৪ সালে ওই মাদ্রাসায় দুই সহকারী শিক্ষক পদ শুন্য হয়। ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর সরকার স্থানীয় কমিটির নিয়োগ বন্ধ করে দিয়ে বেসরকারী শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষকে শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব দেন। সুপার মাওলানা মোঃ আব্দুল হাই বেসরকারী শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষকে (এনটিআরসিএ) ওই দুই শুন্য পদের চাহিদা না দিয়ে গোপন রাখেন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ বোর্ড গঠন করে ২০ লক্ষ টাকা ঘুষের বিনিময়ে বনি আমিন ও সুলতানা হামিদা নামক দুই শিক্ষক নিয়োগ দেন। দুই শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটি ও শিক্ষকরা অবগত নন। বেসরকারী শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে এ অবৈধ নিয়োগ দেন তিনি এমন অভিযোগ মাদ্রাসা শিক্ষকদের। গত চার বছর ধওে সৃুপার এ দুই শিক্ষকের নিয়োগ গোপন রাখেন। সুপার দুই শিক্ষককে কাগজে কলমে মাদ্রাসায় ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর যোগদান দেখালেও বাস্তবে তারা মাদ্রাসায়  ক্লাস করেননি এবং হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দেয়নি। এ বছর জানুয়ারী মাসে ওই দুই শিক্ষকের নামের অনুকুলে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর বেতন ভাতা প্রদান করেন। জানুয়ারী মাসের এমপিও (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) সিটে ওই দুই শিক্ষকের বেতন ভাতা আসলে শিক্ষকদের মাঝে হইচই পড়ে যায়। সুপার তার ক্ষমতা বলে ওই দুই শিক্ষকের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর নেন। এবং বেতন ভাতা দিয়ে দেন। মাদ্রাসার সহ-সুপার মাওলানা মোঃ আব্দুর রব অভিযোগ করেন, সুপার মাওলানা মোঃ আবদুল হাই ২০ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে জাল জালিয়াতি করে অবৈধ নিয়োগ বোর্ড গঠন করে দুই শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি আরো অভিযোগ করেন, বর্তমানে সরকার বেসরকারী শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে  শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকেন কিন্তু সুপার সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে ভুয়া নিয়োগ বোর্ড গঠন করে জাল স্বাক্ষর দিয়ে এ দুই  শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। যা সম্পূর্ণ অবৈধ। এ নিয়োগের বিষয়ে মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও শিক্ষকরা অবগত নয়।  এছাড়াও সুপার মাদ্রাসার নামে ভুয়া ছাত্রী দেখিয়ে উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন, ফরম ফিলাপ, টিউশন ফি ও রিজার্ভ ফান্ডের নামে ঋণ নিয়ে  সমুদয় টাকা আত্মসাত করেছেন। এ বিষয়ে ওই মাদ্রাসার শিক্ষকরা শিক্ষা অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিলেও কোন প্রতিকার পাইনি এমন অভিযোগ শিক্ষকদের। অভিযোগ রয়েছে মাওলানা মোঃ আব্দুল হাই ১৯৮৭ সালে মাদ্রাসায় সুপার হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই মাদ্রাসাটিকে দূর্ণীতির আখরায় পরিনত করেছেন।
মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মাওলানা মোঃ মজনুল হক, জাকির হোসেন ও জামাল হোসেন বলেন, মাওলানা আব্দুল হাই মাদ্রাসায় সুপার হিসেবে যোগদানের পর থেকেই মাদ্রাসাটিকে দুর্নীতির আখরায় পরিনত করেছেন। ভুয়া দুই শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ২০ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছেন। তারা আরো বলেন, উপবৃত্তি, ফরম পুরণ, টিউশন ফি ও রিজার্ভ ফান্ডের নামে ঋণ নিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। গত ৩৩ বছরে মাদ্রাসার আয় ব্যয়ের কোন হিসাব নেই। মাদ্রাসার নামে ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ জমি  থাকলেও সুপার ওই জমির  হিসেব দিচ্ছেন না।
মাদ্রাসা সুপার মাওলানা মোঃ আব্দুল হাই শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ ও অনিয়মের বিষয়ের কথা অস্বীকার করে বলেন, বেসরকারী শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের নিয়োগের পূর্বে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া ছিল,তাই শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি। কিন্তু ওই দুই শিক্ষক নিয়োগ সম্পর্কে মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটি, শিক্ষকরা কেন জানেন না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোঃ আমান উল্লাহ আমান তালুকদার এ বিষয়ে  কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ জিয়াউল হক মিলন বলেন, ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবরের পূর্বে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে তার ছয় মাসের মধ্যে স্থানীয় কমিটি নিয়োগ দিতে পারতেন কিন্তু এরপর কোন নিয়োগ স্থানীয় কমিটির হাতে নেই। এরপরে যদি কেউ নিয়োগ দিয়ে থাকেন তা অবৈধ। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই।  তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরগুনা জেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মোঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৫:৪১:২৯ ● ৯৯৪ বার পঠিত