আমতলীতে ফেরিওয়ালার চিপস খেয়ে ১৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলীতে ফেরিওয়ালার চিপস খেয়ে ১৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ
বুধবার ● ৩১ জুলাই ২০১৯


আমতলীতে ফেরিওয়ালার চিপস খেয়ে ১৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

বরগুনার আমতলী উপজেলার আমড়াগাছিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফেরিওয়ালাদের  দেয়া চিপস খেয়ে ১৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ্য হয়ে পরেছে। গুরুতর অসুস্থ্য ৮ শিশু শিক্ষার্থীকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িত মশিউর রহমান, রফিকুল ইসলাম, আশ্রাফুল নামের তিন ফেরিওয়ালারকে আমতলী ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার ৩ হাজার টাকা এবং ফেরিওয়ালাদের আশ্রয়দাতা কবির হোসেনকে ১০ হাজার টাকা জরিমান করেছেন। অনাদায়ে বিভিন্ন মেয়াদে সাজার আদেশ দেন। ঘটনা ঘটেছে বুধবার দুপুরে ।
জানাগেছে, উপজেলার আমড়াগাছিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৫/২০ শিক্ষার্থীরা বুধবার বেলা ১১ টার দিকে বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠে খেলাধুলা করছিল। এ সময় তিন ফেরিওয়ালা এসে চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্রী মারিয়ার হাতে দুই প্যাকেট চিপস দেয় এবং সবাইকে বিতরন করে দিতে বলে। মারিয়া এ চিপস খেলাধুলারত সকল শিক্ষার্থীর হাতে বিলিয়ে দেয়। ওই চিপস খাওয়ার সাথে সাথে পেটে ব্যথা,বমি ও মাথা ঘুড়িয়ে অচেতন হয়ে পরে। খবর পেয়ে স্বজনরা বিদ্যালয়ে ছুটে আসে। স্বজনরা গুরুতর অসুস্থ্য মৌসি, কারিমা আক্তার, মিষ্টি, বৃষ্টি, মারিয়া আক্তার, সুমাইয়া, সাবিনা, জান্নাতিকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। অপর অসুস্থ্য মারিয়া, আমিনুর, আশিক ও আনিকাকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এরা সকলে ওই বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেনীর শিক্ষার্থী। এ ঘটনার পরপরই বিদ্যালয় শিক্ষক ও স্থানীয়রা ফেরিওয়ালা মশিউর রহমান নামের একজন আটক করে পুলিশে দেয়। অপর দুইজন জনতার ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে ওইদিন দুপুর দুইটার দিকে আমতলী ভ্রাম্যমান আদালতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার ঘটনাস্থলে যান। এ ঘটনার সাথে জড়িত মশিউর রহমান, রফিকুল ইসলাম, আশ্রাফুল নামের তিন ফেরিওয়ালারকে ৩ হাজার টাকা এবং ফেরিওয়ালাদের আশ্রয়দাতা কবির হোসেনকে ১০ হাজার টাকা জরিমান করেছেন ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার। এবং একই সাথে তিন ফেরিওয়ালাকে দ্রুত আমতলী ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে এ ঘটনার পরপর বিদ্যালয় অভিভাবক ও এলাকার লোকদের মাঝে কল্লাকাটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শত শত মানুষ কল্লাকাটা প্রতিহত করতে বিদ্যালয় এলাকায় জড়ো হয়। আটক ফেরিওয়ালাদের বাড়ী সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া থানার খেরদো গ্রামে।
ওই বিদ্যালয়ের আহত শিক্ষার্থী মিষ্টি, বৃষ্টি, মৌসি ও সুমাইয়া জানান, আমরা চতুর্থ শ্রেনীর ১৫/২০ জন শিক্ষার্থী বেলা ১১ টার দিকে খেলাধুলা করছিলাম। এ সময় দুই ফেরিওয়ালা এসে মারিয়ার কাছে দুই প্যাকেট চিপস দেয় এবং আমাদের সকলকে খেতে বলে। এই চিপস খেয়ে আমাদের সকলে পেটে ব্যথা, বমি  শুরু হয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছি।
আহত শিক্ষার্থী কারিমা জানায়, দুই ফেরিওয়ালা আমাকে দুই প্যাকেট চিপস দিয়ে বলে তুমি সকলকে এই চিপস দিয়ে দাও। আমি আমার সহপাঠিদের তাদের (ফেরিওয়ালা) দেয়া চিপস বিতরন করে দিয়েছি। এই চিপস খাওয়ার সাথে সাথে সকলের পেটে ব্যথা, বমি ও মাথা ঘুড়িয়ে মাটিতে পরে যায়।
অভিভাবক শহীদুল ইসলাম, মিলন গাজী ও ইউসুফ মুন্সি বলেন, কল্লাকাটা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চিপসের সাথে চেতনা নাশক কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করেছে বলে শুনতে পাই। এ খবরে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে আমরা বিদ্যালয় গিয়ে শিশুদের উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছি। তারা আরো বলেন, এ রকম হলে  শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠানো বন্ধ করে দিতে হবে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ আবদুস সালাম বলেন, শিক্ষার্থীরা ফেরিওয়ালার দেয়া চিপস খেয়ে পেটে ব্যথা, বমি করে অসুস্থ হয়ে পরেছে। এ অবস্থা দেখে আমার স্থানীয় লোকজনের সহযোগীতায়  ফেরিওয়ালা মশিউর রহমানকে আটক করে পুলিশে দিয়েছি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন,দ্বিতীয় সিফটের ক্লাস শুরু হওয়ার পূর্বে চতুর্থ শ্রেনীর শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করছিল। এ সময় ফেরিওয়ালা শিক্ষার্থীদের চিপস খেতে দেয়। ওই চিপস খেয়ে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ্য হয়ে পরেছে।
আমতলী উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার সৈয়দ মনিরুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসার প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নিখিল চন্দ্র বলেন, আহত ৮ শিশুকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শংঙ্কর প্রসাদ অধিকারী বলেন,অপরিছন্œভাবে তৈরি চিপস খেয়ে শিশুরা অসুস্থ্য হয়ে পরেছে। ওই চিপসে কোন ধরনের বিষ ছিল তা কেমিক্যাল পরীক্ষা না করা পর্যন্ত সঠিকভাবে বলা যাবে না। তিনি আরো বলেন, আমরা শিশুদের গভীর পর্যবেক্ষনে রেখেছি।
আমতলী থানার ওসি মোঃ আবুল বাশার বলেন, মশিউর রহমান নামের এক ফেরিওয়ালাকে গ্রেফতার করে ভ্রাম্যমান আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
আমতলী ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) কমলেশ মজুমদার বলেন, এ ঘটনার সাথে জড়িত মশিউর রহমান, রফিকুল ইসলাম, আশ্রাফুল নামের তিন ফেরিওয়ালারকে ৩ হাজার টাকা এবং ফেরিওয়ালাদের আশ্রয়দাতা কবির হোসেনকে ১০ হাজার টাকা জরিমান অনাদায়ে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন,  দ্রুত  ফেরিওয়ালাদের আমতলী ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:৪১:০৩ ● ৩২১ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ