একতরফা নির্বাচনে আ. লীগকে জেতানোয় ইসি সচিবকে পুরস্কার: রিজভী

প্রথম পাতা » রাজনীতি » একতরফা নির্বাচনে আ. লীগকে জেতানোয় ইসি সচিবকে পুরস্কার: রিজভী
মঙ্গলবার ● ২৮ মে ২০১৯


নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥


বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, একতরফা নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জেতানোর পুরস্কার হিসেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবকে বদলি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ মে) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী। বিগত জাতীয় নির্বাচনে ইসি ও ইসি সচিবের ভূমিকার সমালোচনা করে রিজভী বলেন, মিডনাইট ভোট ডাকাতির অন্যতম কারিগর নির্বাচন কমিশনের সচিব, কয়েক দিন আগে সেখান থেকে বদলি হয়েছেন আরেকটি বড় দপ্তরে। তাঁকে পুরস্কৃত করেছে মিডনাইট সরকার। তাঁকে (নতুন) পদায়ন করে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সচিবকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পদায়নের মাধ্যমে সারা দেশে আওয়ামীকরণের ষোলকলা পূর্ণ হবে। এদিকে, নির্বাচন কমিশনের সচিব পদে মো. আলমগীর হোসেনের নিয়োগ অবিলম্বে বাতিলের দাবি করে রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশনের সচিব করা হয়েছে কারিগরি শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর হোসেনকে, যিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনুগত ও বিশ্বস্ত হিসেবে ইতোমধ্যে পরিচিত অর্জন করেছেন। সরকারের এই পদক্ষেপ ধ্বংসপ্রাপ্ত গণতন্ত্র ও লুপ্তপ্রায় সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর মরার ওপর খাঁড়ার ঘা, যা এক ভয়ঙ্কর অশনি সংকেত। এতদিন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করে আসা হেলালুদ্দীন আহমদকে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের দায়িত্বে পাঠিয়ে আলমগীরকে ইসিতে এনেছে সরকার।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নির্বাচন কমিশনের সচিবের দায়িত্ব পালন করা হেলালুদ্দীনকে নিয়েও বিভিন্ন সময়ে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশনের মতো স্বাধীন প্রতিষ্ঠানে এই অবৈধ সরকার কর্তৃক আওয়ামী চেতনাপুষ্ট একনিষ্ঠ ও পরীক্ষিত ক্যাডারদের বাছাই করে নিয়োগ দেওয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আলমগীর হোসেনের বদলে ‘একজন দক্ষ দল নিরপেক্ষ সরকারি কর্মকর্তাকে’ ইসির সচিব পদে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানানো হয় বিএনপির সংবাদ সম্মেলন থেকে।
এদিকে, ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় দরিদ্র কৃষকের করুণ দশার কথা তুলে ধরে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ধান পুড়িয়ে দেওয়ার একই দৃশ্য সারাদেশে সংঘটিত হচ্ছে। চারদিকে দেখা দিয়েছে নৈরাজ্য, অস্বস্তি, ক্ষুধা ও হাহাকার। ধানের ন্যায্য মূল্য নিয়ে সরকার উদাসীন। এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই, বরং প্রতিদিন তা বৃত্তপথে ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রতিদিনই কৃষকের মনে অন্ধকার ঘন থেকে ঘনতর হচ্ছে। সরকারি নীতির কারণে কৃষকের এই দুর্গতি তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, কৃষিক্ষেত্রে এই অরাজগতার জন্য দায়ী কৃষি মন্ত্রী ও খাদ্য মন্ত্রী। আমরা এই মুহূর্তে তাদের পদত্যাগ দাবি করছি। কোনো সভ্য সরকার হলে ইতোমধ্যে কৃষিমন্ত্রী ও খাদ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করে ফেলতেন।
সরকারের উদ্দেশে এই বিএনপি নেতা বলেন, জোর জবরদস্তি করে আর ক্ষমতায় থেকে দেশের জনগণের প্রতি জুলুম করবেন না। অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন, জনগনকে বাঁচতে দিন। আওয়ামী লীগের মধ্যেও ভেজালকারী ঢুকেছে- এমন মন্তব্যের জন্য দলটির সভাপতি-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমকে ‘সাধুবাদ’ জানান রিজভী। তিনি বলেন, বহুদিন পরে একটা সত্য কথা বলেছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সাহেব, এজন্য তাকে ধন্যবাদ। আপনারা দেখেছেন যে ওঁরা প্রায়ই উপদেশ দিয়ে থাকেন বিএনপিকে। মানে একেক জন জ্ঞানী সেক্রেটিসের মতো ব্যক্তি হয়ে গেছেন আর কি!… নিজেদেরও যে কিছু উপলব্ধি হয়েছে, নিজেদের দলে যে ভেজাল দেওয়ার লোক ঢুকে গেছে, মাদক ব্যবসায়ীরা আছেন। এই আত্ম উপলব্ধির জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। মন্ত্রিত্ব না পাওয়ায় হতাশা থেকে নাসিমের এই উপলব্ধি হয়েছে কি না- সেই প্রশ্নও রাখেন রিজভী। ‘বিএনপিকে বলবো অগণতান্ত্রিক আন্দোলন না করে, খাদ্যে ভেজাল ও মাদক নির্মূলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করুন’ -নাসিমের এমন বক্তব্যের জবাবে রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নাসিমসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী-নেতার কথাবার্তায় মনে হচ্ছে তারা নিজেদের পদ খুইয়ে হতাশায় ভুগছেন। শুধুই বিএনপিকে উপদেশ দিচ্ছেন। মন্ত্রিত্ব হারিয়ে তারা বিএনপির কনসালটেন্ট হতে চাচ্ছেন।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সারাদেশে লুটপাট, খুন-ধর্ষণ, খাদ্যে ভেজাল ও মাদক ব্যবসায়ে লিপ্ত। এমনকি তাদের কিছু জনপ্রতিনিধিও আছেন যারা মাদক স¤্রাট হিসেবে পরিচিত। গোটা দেশে তাদের বেপরোয়া অপকর্মে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। তা নিয়ে নাসিম সাহেবদের মাথা ব্যথা নেই। এখন বিএনপি তাদের ধ্যান-জ্ঞান। মন্ত্রিত্ব হারিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে তুষ্ট করার জন্য কথাবার্তায় অনেকেই খেই হারিয়ে ফেলেছেন। বিএনপির কি নিয়ে আন্দোলন করা উচিত সেই উপদেশও দিচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৮তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে দলটির উদ্যোগে আজ বুধবার বেলা ১১টায় রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনা সভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও দেশের বরেণ্য ব্যক্তিরা বক্তব্য রাখবেন। এছাড়া আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় শেরে বাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাসহ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা পুস্পার্ঘ অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক শাহিদা রফিক, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, বেলাল আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২১:৫৯:৪০ ● ২৭৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ