
সাগরকন্যা ইসলাম ডেস্ক
ইসলামী শরিয়তে পবিত্রতা হলো ইবাদতের মূল শর্ত। এমন কিছু কারণ রয়েছে যার ফলে একজন নর বা নারী ‘জানাবত’ বা অপবিত্র অবস্থায় পড়ে যান—যেমন স্ত্রী সহবাস, স্বপ্নদোষ, মাসিক বা প্রসব-পরবর্তী রক্ত বন্ধ হওয়া ইত্যাদি। এ অবস্থায় শরীয়ত নির্ধারিত কিছু কাজ নিষিদ্ধ হয়ে যায়, যা না জেনে করলে তা গুনাহের কারণ হতে পারে।
এই প্রতিবেদনে হানাফি মাজহাব অনুসারে নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য ফরজ গোসল আবশ্যক হলে নিষিদ্ধ ও করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো।
❌ গোসল ফরজ হলে যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ (হানাফি মাজহাব মতে)
১. নামাজ আদায় করা
জানাবত বা হায়েজ-নিফাস অবস্থায় নামাজ আদায় করা জায়েয নয়। আল্লাহ বলেন,
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা নামাজের কাছেও এসো না যখন তোমরা নেশাগ্রস্ত, যতক্ষণ না বুঝতে পারো যা বলছ। এবং না অপবিত্র অবস্থায় (জানাবত), যতক্ষণ না গোসল করো।”
(সূরা আন-নিসা: ৪৩)
২. কাবা শরিফ তাওয়াফ করা
হাদিসে এসেছে—
“তাওয়াফ নামাজের মতোই, তাই কেউ তাওয়াফ করলে যেন অজু করে।”
(তিরমিযি, হাদিস: ৯৬০)
জানাবতের অবস্থায় তাওয়াফ করা হারাম।
৩. কুরআন স্পর্শ ও তিলাওয়াত করা
হানাফি মাজহাব অনুযায়ী, জানাবত অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা কিংবা সরাসরি পড়া নিষিদ্ধ।
“এতে (কুরআনে) কেবল তারা-ই স্পর্শ করতে পারবে, যারা পবিত্র।”
(সূরা ওয়াকিয়া: ৭৯)
ফাতাওয়া আলেমগণ বলেন— শুধু চোখ দিয়ে দেখা বা মনে মনে পাঠ করা নিয়ে মতভেদ থাকলেও উচ্চারণ করে পড়া জায়েয নয়।
৪. মসজিদে প্রবেশ করা
পবিত্র না হয়ে মসজিদে প্রবেশ করা হারাম। কুরআনে এসেছে—
“তোমরা অপবিত্র অবস্থায় (অর্থাৎ গোসল ফরজ অবস্থায়) মসজিদে প্রবেশ করো না…”
(সূরা আন-নিসা: ৪৩)
নারীদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা
নারীদের মাসিক (হায়েজ) ও প্রসব-পরবর্তী রক্ত (নিফাস) বন্ধ হওয়ার পর গোসল ফরজ হয়। এ অবস্থায়:
নামাজ, রোজা, কুরআন তিলাওয়াত, তাওয়াফ, মসজিদে প্রবেশ সবই নিষিদ্ধ।
হানাফি ফিকহ মতে, হায়েজ অবস্থায় কোনোভাবে কুরআন পাঠ করা জায়েয নয়, এমনকি মুখস্থ করেও নয়।
ফিকহে হানাফি উৎস:
– হিদায়া, আল-মারগিনানি
– আল-ফিকহুল হানাফি ফি সাওবিহিল জাদিদ, ড. ওয়াহবা যুহাইলি
– আল-মাবসুত, সারাখসী
⚠️ যা করা যাবে, তবে সতর্ক থাকা উত্তম
ঘরোয়া কাজ, খাওয়া-দাওয়া, চলাফেরা করা নিষেধ নয়।
ঘুমাতে যাওয়ার আগে বা খাবার গ্রহণের আগে ওজু করে নেওয়া উত্তম। হাদিসে এসেছে—
“তোমাদের কেউ স্ত্রী সহবাসের পর ঘুমাতে চাইলে, ওজু করে নিক।”
(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৩০৫)
নবীজি (সা.)-এর শিক্ষা
একবার সাহাবি আবু হুরাইরা (রা.) জানাবত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে দেখে সরে গিয়েছিলেন। পরে গোসল করে এসে বললে রাসূল (সা.) বলেন—
“সুবহানাল্লাহ! নিশ্চয় মুসলমান অপবিত্র হয় না।”
(সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৭৯)
✅ উপসংহার
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে, গোসল ফরজ হলে শরীয়ত নির্ধারিত পবিত্রতা অর্জনের আগে ইবাদতমূলক কোনো কাজ করা জায়েয নয়। এসব বিধান জানাও ইমান ও শালীনতার অংশ। একজন মুসলিমের উচিত শারীরিক ও আত্মিকভাবে সর্বদা পরিশুদ্ধ থাকার চেষ্টা করা।
প্রস্তুত করেছেন:
সাগরকন্যা ইসলামী ডেস্ক
সূত্র: কুরআন, সহিহ হাদিস, ফিকহে হানাফি গ্রন্থাবলি