আমতলীতে ফোনালাপ ফাঁসে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলীতে ফোনালাপ ফাঁসে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত
রবিবার ● ২৯ জানুয়ারী ২০২৩


আমতলীতে ফোনালাপ ফাঁসে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

ঘুষ গ্রহনের ফোনালাপ ফাঁস ও অনিয়মের অভিযোগে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। রবিবার সকালে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিনিধি মোঃ আবুল কালাম নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করে দেন। এ নিয়োগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ইদ্রিসুর রহমান ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোঃ দেলোয়ার সিকদারের বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ রয়েছে। ঘটনা ঘটেছে তালতলী উপজেলার বগীর হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।
জানাগেছে, গত বছর ৮ আগষ্ট তালতলী উপজেলার বগীরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরিছন্নতা কর্মী, নৈশ প্রহরী ও অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। ওই বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক তিনটি পদে ২৪ জন  প্রার্থী আবেদন করেন। রবিবার বরগুনা জেলা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কক্ষে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শনিবার রাতেই নিয়োগ পরীক্ষায় নৈশ প্রহরী পদে টাকা লেনদেনের ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যায়। এ ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পরপরই নিয়োগ কমিটির সদস্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি মোঃ আবুল কালাম নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করে দেন। ফোনালাপে পুরুষ কন্ঠে এক ব্যাক্তি বলেন, তুমি তারাতারি টাকা দাও। অনেক প্রার্থী রয়েছে। আঙ্কেল সম্মোধন করে নারী কন্ঠে একজন বলেন, চাকুরী হবেতো। প্রতিউত্তরে তিনি (পুরুষ) বলেন এ নিয়ে তুমি চিন্তা করো না। আমার উপর বিশ্বাস রাখ।  কেউ নিয়োগ ঠেকাতে পারবে না। নারী বলেন আঙ্কেল আমিতো নগদ টাকা দিতে পারবো না চেক দিতে হবে। এর প্রতিউত্তরে তিনি বলেন, আমি চেক নিতে পারবো না, আমি ব্যস্ত আছি, ওই চেক নিয়ে ব্যাংকে যাওয়ার সময় নেই। আরেক ফোনালাপে চুক্তি অনুসারে টাকা দিতে চাপ দিচ্ছেন। টাকা না দিলে কি হয় বলা যাবে না? প্রধান শিক্ষকেরও টাকার প্রয়োজন আছে বলে জানান ওই ব্যাক্তি। এভাবে চারটি অভিওতে ওই বিদ্যালয় সভাপতির কথোপোকথন শোনা গেছে। এছাড়াও এ নিয়োগ পরীক্ষায় বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোঃ দেলোয়ার সিকদার ও প্রধান শিক্ষক মোঃ ইদ্রিসুর রহমানের বিরুদ্ধে ৩ টি পদের বিপরীতে ৭/৮ জনের কাছ থেকে ৬/৭ লক্ষ টাকা গ্রহনের অভিযোগ রয়েছে। গোপন সুত্রে জানাগেছে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক যোগসাজসে অফিস সহায়ক পদে ইনামুল হক, নিরাপত্তাকর্মী পদে বিদ্যালয় অফিস সহকারী মোঃ বশির ফকিরের ভাইয়ের ছেলে আতিকুর রহমান এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে অনিমা রানীকে নিয়োগ দিতে কমিটি ম্যানেজ করে নিয়োগ কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
নৈশ প্রহরী পদে আবেদনকারী রিপন দাসের বোন দুলি রানী বলেন, আমার বাবা ওই বিদ্যালয়ে নৈশ প্রহরী পদে চাকুরী করতো।  ২০১০  সালে বাবা স্টক করে মারা যান। বাবার পরিবর্তে আমার ভাইকে নিয়োগ দেয়ার কথা ছিল। ওই নিয়োগ বাবদ সভাপতি মোঃ দেলোয়ার সিকদার আমার কাছ থেকে গত বছর জানুয়ারী মাসে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা নিয়েছেন। এখন বলছে নিয়োগ নিতে হলে আরো চার লক্ষ টাকা লাগবে। তিনি আরো বলেন, সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক আমার ভাইয়ের পরিবর্তে আতিকুর রহমান নামের একজনের কাছ থেকে বেশী টাকা নিয়ে তাকে নিয়োগ দিবে বলে চুক্তি করছেন। এখন তিনি (সভাপতি) আমার টাকা ফেরত গড়িমশি করছে।
পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে অঞ্জু নামে এক আবেদনকারী বলেন, সভাপতি দেলোয়ার সিকদার ও প্রধান শিক্ষক মোঃ ইদ্রিসুর রহমান চাকুরী দিবে বলে আমার কাছে ৮ লক্ষ টাকা দাবী করেছেন। কিন্তু আমি এতো টাকা দিতে রাজি হয়নি। সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক নিয়োগের নামে অনেক লোকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, সভাপতি আমার এক আত্মীয় রিপনের কাছ থেকে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা নিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ইদ্রিসুর রহমান নিয়োগে টাকা নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কার্ড ইস্যু নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছে তাই ডিজির প্রতিনিধি নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করে দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, আমি কারো কাছ থেকে টাকা নেইনি। সভাপতির ফোনালাপের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমিও শুনেছি সভাপতি ফোনে কার কাছে টাকা চেয়েছেন।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোঃ দেলোয়ার সিকদারের মুঠোফোনে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কারো কাছে টাকা চাইনি এবং  নেইনি। ফোনালাপের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন এগুলো মিথ্যা।
তালতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ লুৎফর কবির বলেন, বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি আমাকে জানিয়েছে। কি কারনে পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে তা আমার জানা নেই?
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি বরগুনা জেলা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবুল কালাম বলেন, যথাযথ নিয়মে নিয়োগ কার্ড ইস্যু করা হয়নি এবং বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। অভিযোগ পেয়েছি সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মিলে বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে গড়ে ৭/৮   লক্ষ করে টাকা নিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, আমার কাছে আরো অভিযোগ এসেছে নৈশ প্রহরী পদে এক মুচির ছেলের কাছ থেকেও তারা টাকা নিয়েছেন। এটা অত্যন্ত লজ্জাস্কর।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম সাদিক তানভীর বলেন, বিষয়টি জেনে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২২:২৩:১২ ● ৭৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ