কিশোর গ্যাং থেকে ছাত্রলীগে আমতলীতে বেপরোয়া অপকর্মে অতিষ্ঠ সর্বসাধারণ

প্রথম পাতা » বরগুনা » কিশোর গ্যাং থেকে ছাত্রলীগে আমতলীতে বেপরোয়া অপকর্মে অতিষ্ঠ সর্বসাধারণ
সোমবার ● ২২ আগস্ট ২০২২


আমতলীতে বেপরোয়া অপকর্মে অতিষ্ঠ সর্বসাধারণ

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

সবুজ ম্যালাকার, মোঃ ইসফাক আহম্মেদ তোহা, শাহাবুদ্দিন শিহাব, রাহাত মৃধা, সুমন প্যাদা, রবিউল ও রাকিব প্যাদা কিশোর গ্যাং লিডার থেকে ছাত্রলীগ নেতা হয়ে চালিয়ে যাচ্ছে নানা অপকর্ম। ছিনতাই, চাঁদাবাজী, মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অতিষ্ট আমতলীবাসী। উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় অপ্রতিরোধ্য এ কিশোর গ্যাং লিডাররা। তাদের কাছে জিম্মি ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ মানুষ। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা, ছিনতাই, মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। আওয়ামীলীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকায় সাধারণ মানুষ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। দ্রুত এ কিশোর গ্যাং লিডার ছাত্রলীগ নেতা সবুজ ম্যালাকার, তোহা, শিহাব, রাহাত, সুমন প্যাদা, রাকিব প্যাদা ও তাদের সহযোগীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
জানাগেছে, গত তিন বছর ধরে কিশোর গ্যাং লিডার সবুজ ম্যালাকার, মোঃ ইসফাক আহম্মেদ তোহা, শাহাবুদ্দিন শিহাব, রাহাত মৃধা, সুমন প্যাদা, রবিউল ও রাকিব প্যাদা সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজী, ছিনতাই ও মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। উপজেলার আওয়ামীলীগ প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় তারা এ কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা, ছিনতাই, মাদকসহ ডজন খানেক মামলা রয়েছে। কিন্তু নেতার ছত্রছায়ায় থাকায় তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে সাহস পাচ্ছে না। তারা একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের অপকর্ম থেকে রেহাই পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতারা। কিশোর গ্যাং ছাত্রলীগ নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের নিয়ন্ত্রনে চলছে মাদক ব্যবসা, চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি,  মেয়েদের উত্যক্ত করা, বেপরোয়া  মোটর বাইক চালানো, সামাজিক  যোগাযোগ মাধ্যম রাজনৈতিক ও সম্মানি ব্যাক্তিদের সম্মানহানীসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড এমন অভিযোগ আমতলীর সচেতন নাগরিকদের। অভিযোগ রয়েছে, ওই কিশোর গ্যাং লিডারদের নিয়ন্ত্রন করছে প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতারা। গত এক বছরে কিশোর গ্যাং লিডাররা অর্ধ শতাধিক সহিংস মারধরের ঘটনা ঘটিয়েছে। গত বছর ২৮ এপ্রিল রাতে আমতলী উপজেলা সেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি সাবেক কাউন্সিলর মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন খাঁনকে কিশোর গ্যাং লিডার মোঃ ইসফাক আহম্মেদ তোহার নেতৃত্বে ১০-১২ জন কিশোর গ্যাং হাতুড়ি পেটা করে ৮৬ হাজার টাকা. দামী মোবাইল ও স্বর্নের চেইন ছিনতাই করে। এ ঘটনায় মামলা হলেও কিশোর গ্যাং লিডার তোহা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী মোয়াজ্জেম খাঁনের। ওই বছর ৩০ মে কিশোর গ্যাং লিডার সবুজ ম্যালাকার স্থানীয় সিদ্দিকুর রহমান মুন্সি তার স্ত্রী হোসনেয়ারা ও ছেলে  আল খালিদ রিসানকে মারধর করেছে। কিশোর গ্যাংরা অপকর্ম করে বেড়ালেও রাজনৈতিক নেতাদের আশির্^বাদে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে সাহস পাচ্ছে না ভুক্তভোগীরা। গত ১৬ জুলাই আমতলী উপজেলা ছাত্রলীগ কমিটি ঘোষনা করে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগ। ওই কমিটিতে কিশোর গ্যাং লিডার সবুজ ম্যালাকার, সুমন প্যাদা, সহ-সভাপতি, ইসফাক আহম্মেদ তোহা যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও শাহাবুদ্দিন শিহাব সাংগঠনিক সম্পাদক, রাহাত মৃধা, রাকিব প্যাদা ও রবিউল উপজেলা ছাত্রলীগ সদস্য পদ পায়। কিশোর গ্যাং লিডার থেকে ছাত্রলীগ নেতা হওয়ার পরপরই তাদের অপকর্ম তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। কমিটি ঘোষনার তিন দিন পর সবুজ ম্যালাকার, ইসফাক আহম্মেদ তোহা ও শাহাবুদ্দিন শিহাব উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটুক্তিকারী উপজেলা যুবদল যুগ্ম আহবায়ক নাজমুল ইসলামকে বেধরক মারধর করেন। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ১৬ আগষ্ট রাতে আমতলী পৌর শহরের আল হেলাল মোড় এলাকায় শত শত মানুষের সামনে প্রকাশে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি, সাবেক ছাত্রলীগ ও যুবলীগ সভাপতি মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন খানকে পুনরায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তার হাত ও মাথায় গুরুতর জখম করে। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শত শত লোক দাড়িয়ে দেখলেও সন্ত্রাসীদের ভয়ে কেউ তাকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে সাহস পায়নি।  কিশোর গ্যাং লিডার থেকে ছাত্রলীগ নেতা হওয়া সবুজ ম্যালাকারের বিরুদ্ধে আমতলী থানায় মাদক নিয়ন্ত্রন , কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা ও সন্ত্রাসীসহ ৮ টি এবং ইসফাক আহম্মেদ তোহার বিরুদ্ধে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টার ৫ টি মামলা রয়েছে। এ মামলায় সবুজ ম্যালাকার একাধিক বার জেল হাজতবাস করেছে। কিন্তু আওয়ামীলীগ নেতাদের হস্তেক্ষেপে সবুজ জেল থেকে মুক্তি পায় এবং তোহা জামিনে বেড়িয়ে আসে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ীসহ কয়েকজন বলেন,  কিশোর গ্যাং লিডার সবুজ ম্যালাকার, মোঃ ইসফাক আহম্মেদ ত্বোহা, শাহাবুদ্দিন শিহাব, রাহাত মৃধা, রবিউল, রাকিব প্যাদা, সুমন প্যাদা ও তার দলবলের অত্যাচার নির্যাতনে পৌর শহরের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ অতিষ্ট। কিশোর গ্যাংরা মাদক সেবন, চুরি, ছিনতাই, মারধরসহ নানা অপরাধে জড়িত। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান তারা।
আমতলী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন খাঁনকে কোপানের দৃশ্য প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, এমন নির্মম ঘটনা প্রকাশ্যে আমতলীতে আর ঘটেনি। কাদের ইশারায় সন্ত্রাসীরা আমতলীতে একের পর এক এমন কর্মকান্ড ঘটিয়ে আসছে? তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবী জানান তারা।
আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মোঃ মতিয়ার রহমান বলেন, আমি সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্বে আসার পর থেকে আমতলীতে স্বচ্ছ ও গঠনমুলকভাবে রাজনীতি করে আসছি। তৃণমুল নেতা থেকে শুরু করে সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা আমার কাছে শ্রদ্ধেয়। কিন্তু কিছু নেতা-কর্মী  দলের মধ্যে বিশৃখংলা সৃষ্টি করছে। তিনি আরো বলেন, আমার কাছে কিশোর গ্যাং লিডার ও সন্ত্রাসীদের জায়গা নেই। সন্ত্রাসী যেই হোক তার বিরুদ্ধে আমার দৃঢ় অবস্থান থাকবে। সাম্প্রতিক একটি ঘটনা ঘটেছে যা অত্যান্ত নিন্দনীয়। এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবী জানান তিনি।
আমতলী থানার ওসি একেএম মিজানুর রহমান বলেন, ছাত্রলীগ নেতা সবুজ ম্যালাকার ও মোঃ ইসফাক আহম্মেদ ত্বোহার বিরুদ্ধে থানায় বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, সবুজ ম্যালাকার  মোঃ ইসফাক আহম্মেদ ত্বোহার সহযোগী শাহাবুদ্দিন শিহাব, রাহাত মৃধা, রবিউল, রাকিব প্যাদা, সুমন প্যাদার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমতলীতে কিশোর গ্যাং বলতে কিছুই থাকবে না।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২২:২৪:৪০ ● ২১৭ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ